শব্দ দূষণ ও নদী ভাঙ্গনের কবলে মুরাদপুর-পীরেরচক এলাকা

প্রকাশিত: ৬:২৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৮

শব্দ দূষণ ও নদী ভাঙ্গনের কবলে মুরাদপুর-পীরেরচক এলাকা

 সুরমা নদীতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন

সিলেটের সুরমা নদীতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে গোটা মুরাদপুর-পীরেরচক এলাকা। দীর্ঘদিন যাবৎ অব্যাহত এ বালু উত্তোলনের ফলে এই এলাকায় বায়ু ও শব্দ দূষণের পাশাপাশি নদীর দুই তীরবর্তী এলাকায় ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ফলে চরম আশংকা নিয়ে দিন যাপন করছেন স্থানীয় জনগণ। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার খাদিমপাড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড স্থিত শাহপরান সেতু সংলগ্ন সুরমা নদীর উত্তরপারে শুধুমাত্র মুরাদপুর-পীরেরচক এলাকায় ১০টির অধিক ড্রেজার মেশিন দিয়ে চলছে বালু উত্তোলন ও সরবরাহের কাজ। এতে করে এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অনেকের বাড়ীঘর, কবরস্থান নদীর গর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। নদীর তীরের রাস্তার কিছু অংশ ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে, অবশিষ্ট অংশটুকু বিলীন হওয়ার পথে। এই রাস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়গামী ছেলেমেয়েদের আসা-যাওয়ার পথ একবারে বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, ড্রেজার দিয়ে বালু সরবরাহ করার জন্য সিলেট-কানাইঘাট বোরহান উদ্দিন রঃ রাস্তার পীরেরচক গ্রামের সম্মুখ অংশ কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে রাস্তার উপর দিয়ে পাইপ লাইন বসিয়ে উঁচু ও বড় বড় বাধ নির্মাণ করায় ছোট, বড় গাড়ী চলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাত সহ দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে মানুষের জান ও মালের ক্ষতি হচ্ছে। এতে মারাত্মক শব্দ দূষণ ও বায়ু দূষণ হচ্ছে। প্রচন্ড শব্দের কারণে এলাকার মানুষের কান ও মস্তিষ্কের ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। শব্দ দুষণের কারণে নদীর তীরবর্তী মুরাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাড়িতে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার বিঘ্ন ঘটছে। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শব্দ ও বায়ু দুষণের ফলে এলাকার সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে এবং অসুস্থ মানুষ আরো অসুস্থ হচ্ছে। প্রতিটি পরিবারে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক শ্রেণির মুনাফা লোভী ও রাজনৈতিক দলের কর্মীরা তাদের নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ এসব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে এলাকার অধিবাসীরা এসব মুনাফালোভী স্বার্থন্বেষী মহলের অপতৎপরতা রোধে ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সুরমা নদীর উত্তর পাড়ে পীরেরচক-মুরাদপুর গ্রামের দু’জন মেম্বার সহ ২৮৫ জন অধিবাসী স্বাক্ষরিত এক স্মারকলিপি সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে পেশ করা হয়েছে। এর অনুলিপি প্রশাসনের বেশ কয়েকটি অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়। খবর পেয়ে শাহপরান থানা পুলিশের এস.আই জগদীশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ড্রেজার মেশিন বন্ধের নির্দেশ দিয়ে আসেন। স্মারকলিপি পেশের পর প্রশাসন কিছুটা নড়েচড়ে উঠলেও বর্তমানে প্রশাসন একেবারে নীরব।

এমতাবস্থায় ড্রেজার মেশিনের কার্যক্রম আবার শুরু হয়েছে। থানা পুলিশের নির্দেশ অমান্য করে আরো ব্যাপক ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে দুশ্চিন্তার সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে আলাপকালে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিরাজুম মুনিরা বলেন, ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) দেবজিৎ সিংহ বলেন, বালু উত্তোলন ও সরবরাহের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) মৃণাল কান্তি দেব বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এমতাবস্থায় নাগরিক অধিকার রক্ষায় শব্দ ও বায়ু দুষণকারী ড্রেজারগুলির বিরুদ্ধে আইনগত শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানিয়েছেন সুরমা নদীর উত্তরপাড়স্থ পীরেরচক-মুরাদপুর গ্রামের সর্বস্তরের জনগণ।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট