৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৭:১৬ অপরাহ্ণ, জুন ৩০, ২০২৫
আজ ৩০শে জুন ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস। ১৮৫৫ সালের এই দিনে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ, জমিদার ও মহাজনী শোষণের বিরুদ্ধে সাঁওতাল জাতির হাজার হাজার নারী-পুরুষ অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল—নেতৃত্বে ছিলেন মহাবীর সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরব। এই বিদ্রোহ ছিল শুধু একটি প্রতিরোধ নয়, ছিল স্বাধীনতা, সম্মান এবং স্বজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আত্মদান। এই বিদ্রোহে প্রায় ২৫ হাজার সাঁওতাল নারী-পুরুষ শহিদ হন। ব্রিটিশ ও জমিদার বাহিনী মিলে নির্মমভাবে হত্যা করে তাদের। যদিও ব্রিটিশরা এই বিদ্রোহ দমন করে, কিন্তু সাঁওতাল জাতির আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের আলো আজও জ্বলজ্বল করে সকল নিপীড়িত জাতির ইতিহাসে। ১৭০ বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও আজও বাংলাদেশের সাঁওতালসহ অন্যান্য আদিবাসী জনগোষ্ঠী নানা নিপীড়ন, বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার। ভূমি থেকে উচ্ছেদ, দলিল ছাড়াই জমি দখল, বনাঞ্চল থেকে উচ্ছেদ, উন্নয়নের নামে উচ্ছেদ এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। সরকারি ও বেসরকারি খাতের অবকাঠামো প্রকল্পের নামে আদিবাসী গ্রাম উজাড় হচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও সাংস্কৃতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই জনগোষ্ঠী।সংবিধানে আদিবাসীদের নাম পর্যন্ত স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, যা জাতিগত অস্তিত্বের প্রতি রাষ্ট্রীয় অবজ্ঞার পরিচয় বহন করে।
দিবসটি উপলক্ষে দিনাজপুরের লোকভবনে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে তারোক কবিরাজের সভাপতিত্বে ও আদিবাসী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন এক্কার পরিচালনা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কমরেড বদরুল আলম, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ ইকবাল খান, সম্মিলিত শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুল হাসান নয়ন, রাজশাহী জেলার সভাপতি হাসিনুর রহমান, দিনাজপুর জেলার কৃষক নেতা মোঃ রশিদুল ইসলাম জুয়েল, দিনাজপুর জেলার কিষাণী নেত্রী সাবিহা খাতুন, রওশন আরা বেগম, শুকলা কুন্ডু, বিপাসা রানী, দিনাজপুর জেলার আদিবাসী নেতা রুনু মিনজি,রবিন হেমরম,পার্বতী মূর্মূ,মন্টু মূর্মূ প্রমূখ। সম্মেলনের পূর্বে একটি বর্ণাঢ্য মিছিল দিনাজপুরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস স্মরণে নির্মিত স্মৃতিবেদীতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করা হয়।
দাবিসমূহঃ
আমরা, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন, বাংলাদেশ আদিবাসী সমিতি, বাংলাদেশ কিষানী সভা ও বাংলাদেশ আদিবাসী সমিতি সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবসকে স্মরণ করে আজকের বাংলাদেশে আদিবাসীদের জীবন-জীবিকা, ভূমি, ভাষা, সংস্কৃতি ও মর্যাদার সুরক্ষায় নিম্নলিখিত দাবিগুলো উত্থাপন করছি:
১। আদিবাসী স্বীকৃতি: সংবিধানে “আদিবাসী” হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে;
২। ভূমি অধিকার: প্রথাগত জমির মালিকানা নিশ্চিত ও ভূমি দখল-উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে;
৩। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন: ১৯৯৭ সালের চুক্তি দ্রুত ও পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে;
৪। ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ: মাতৃভাষায় শিক্ষা ও নিজস্ব সংস্কৃতির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চাই;
৫। রাজনৈতিক প্রতিনিধি: সংসদ ও স্থানীয় সরকারে সংরক্ষিত আসন দিতে হবে;
৬। নারী ও শিশুর সুরক্ষা: আদিবাসী নারী ও শিশু নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে;
৭। শিক্ষা ও চাকরি কোটা: শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সরকারি চাকরিতে আদিবাসীদের জন্য কোটানীতি চালু করতে হবে;
৮। উন্নয়ন প্রকল্পে সম্মতি: আদিবাসীদের সম্মতি ছাড়া কোনো উন্নয়ন বা খনিজ প্রকল্প নেওয়া যাবে না;
৯। আন্তর্জাতিক সনদ বাস্তবায়ন: টঘউজওচ ও ওখঙ ১৬৯ কনভেনশন স্তবায়ন করতে হবে;
১০। আদিবাসী ভূমি কমিশন: একটি স্বাধীন জাতীয় আদিবাসী ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে;
সাঁওতাল বিদ্রোহ শুধু অতীত নয়-এটি আজকের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রেরণা। আমরা সাঁওতাল বিদ্রোহের চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে একটি শোষণমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক, সাংবিধানিকভাবে সমান ও মর্যাদাপূর্ণ সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে সকল জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই। সাঁওতাল বিদ্রোহের চেতনায়, সংগ্রামে ও ঐক্যে আমরা অগ্রসর হই।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D