১৯শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:৩৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৫
আতিকুর রহমান নগরী : ইসলাম সর্বকালের মানবকুলের জন্য একটি সামগ্রিক জীবন বিধান। আখলাকে হাসানা বা সচ্চরিত্র ব্যতিত এ জীবন বিধানের কল্পনাও করা যায় না। আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীর জন্য যেসব সৎ গুণাবলী প্রয়োজন তন্মধ্যে একটি হচ্ছে ‘আখলাকে হাসানা’। আখলাকে হাসানার সুন্দর কর্মকান্ডের উপরই ইসলামের দেয়াল দাঁড়িয়ে আছে। পবিত্র ক্বোরআনে তাকে ‘উস্ওয়াতুন হাসানা’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে, ‘তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত’’ অর্থাৎ হে নবী! সুমহান চরিত্র গুণাবলী তোমার মধ্যে বিদ্যমান যা হেদায়াতের জন্য অতি প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে মহানবীর বাণী হচ্ছে ‘‘ঈমানদার লোকদের মধ্যে ঈমান ও বিশ্বাসের দিক থেকে ঐ ব্যক্তিই পূর্ণতা প্রাপ্ত যে তাদের মধ্যে নৈতিক চরিত্রের দিক থেকে উত্তম।’’ অপর এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘কিয়ামতের দিন মুমীনদের দাঁড়ি পাল্লায় উত্তম নৈতিক চরিত্র অপেক্ষা অধিক ভারী জিনিস অন্য কিছুই হবে না।’ অন্য এক রেওয়াতে বর্ণিত আছে যে, ‘উত্তম নৈতিকতার পরিপূর্ণ বিকাশের জন্যই আমার আগমন’। আখলাকে হাসানা বা সচ্চরিত্রের ভিত্তি হচ্ছে ঈমান আনয়ন পূর্বক আল্লাহকে ভয় করা, আখিরাতকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করা এবং সর্বদা মিল্লাতে ইব্রাহিমের উপর চলা। ইসলাম পবিত্র ও নির্মল জীবন গঠনের প্রয়াসী। তাই ভাল কাজে সর্বদা নিয়োজিত থাকা, মন্দকাজ থেকে বিরত থাকা এমনকি মন্দ কাজ খোলে যেতে পারে এমন সব ধরণের কাজ থেকে বিরত থাকা হচ্ছে নৈতিকতার মূল চাবিকাঠি। তাক্বওয়া বা পরহেজগারী হচ্ছে নৈতিকতার ভূষণ।
এ সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল ক্বোরআনের ঘোষণা হচ্ছে ‘‘যদি তোমরা বড় বড় গুনাহ থেকে বিরত থাক, তবে ছোট ছোট গুনাহসমূহ আল্লাহপাক ক্ষমা করে দিবেন এবং তোমাদিগকে সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাবেন।’’ নৈতিকতার উত্তম নিদর্শন সম্পর্কে বলতে গিয়ে মহানবী (সা:) বলেছেন, ‘‘কোন বান্দাহ মুত্ত¡াকি লোকদের মধ্যে থেকে ততক্ষণ গণ্য হতে পারবে না, যতক্ষণ সে কোন মন্দকাজ করার সাথে জড়িয়ে পড়ার আশংকায় সেসব জিনিসও পরিত্যাগ করবে যাতে কোন দোষ বা মন্দ নাই।’’ উল্লেখিত আলোচনার ভিত্তিতে প্রত্যেক মানুষের উচিত নৈতিকতার চর্চা করা। রূপচর্চা পরিহার করা। কারণ বর্তমান যুগে রূপ চর্চাকেই বেশী অগ্রাধিকার দেয়া হয়। তা না হলে দুনিয়া ও আখেরাতের সাফল্য থেকে দূরে থেকে যাবে। মানুষের ভেবে দেখা উচিত যে, এ দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। কিছুদিন বসবাস করার পর পরপারে চলে যেতে হবে। একমাত্র আখলাকে হাসানা অর্থাৎ সচ্চরিত্র ছাড়া আর কিছুই তার সঙ্গি হবে না। তার অর্জিত ধন- দৌলত, গাড়ি-বাড়ি, সন্তান-সন্ততি কিছুই সাথে যাবে না।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! এ পর্যায়ে আমি নৈতিক চরিত্র গঠনের উপায় ও উপকরণ সম্পর্কে কিঞ্চিৎ আলোচনা করবো। যা অনেক চেষ্টা সাধনার পর অর্জিত হয়। পরিশ্রম ও ব্যাপক অনুশীলনের মাধ্যমে তা অর্জনের জন্য সচেষ্ট হতে হয়। অভ্যাস মানুষের দাস। অভ্যাসকে সুন্নতের বশীভূত করতে পারলেই সাফলতা হাতের নাগালে আসবে। বিরামহীন সাধনা, লাগাতার প্রচেষ্টা ও গভীর মননশীলতা ছাড়া অভ্যাস পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। আর তা না হলে সচ্চরিত্রের অধিকারী হওয়া কল্পবিলাস ছাড়া কিছুই নয়। আমাদের প্রিয় নবী (সা:) এ ব্যাপারে ‘তাক্বওয়া’ অবলম্বনের উপদেশ দিয়েছেন। এর দ্বারা নানা বিপত্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে তার গুরুত্বপূর্ণ উপদেশবাণী রয়েছে। যেমন তিনি বলেছেন, ‘‘আল্লাহকে অধিকমাত্রায় স্মরণ করা তাঁর নৈকট্যলাভের একটি উত্তম পন্থা’’। মৃত্যুকে স্মরণ করা, কম হাসা, অধিক পরিমানে কাঁদা, পরনিন্দা থেকে বিরত থাকা, আত্মসমালোচনায় নিয়োজিত থাকা, সু-শিক্ষা অন্বেষণ করা এবং তদানুযায়ী আমল করা, দ্বীনের প্রচারাভিযানে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া ইত্যাদি কাজ সমূহ যথারীতি পালনে সচ্চরিত্র সহজে অর্জিত হয়।
এ প্রসঙ্গে ইমাম গাজ্জালী রাহ.’র বর্ণনা বেশ প্রণিধানযোগ্য। তাঁর হিসেব অনুযায়ী বিশটি গুণ জেনে রাখা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য আবশ্যকীয়। গুণগুলো হচ্ছে-
১. গুণাহের কারণে অনুতাপ করা ২. বিপদে সবর করা ৩. আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা ৪. নিয়ামতের শোকর আদায় করা ৫. ভয় ও আশার মধ্যে সমতা রক্ষা করা ৬. সংসারে অনাসক্তি প্রদর্শন করা ৭. আমলে ইখলাছ থাকা ৮. মানুষের সাথে সদাচারণ করা ৯. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য স্বীকার করা ১০. আল্লাহর সামনে একাগ্রতা ও নম্রতা প্রদর্শন করা ১১. কৃপণতা বর্জন করা ১২. অহংকার ত্যাগ করা ১৩. আত্মপ্রীতি পরিত্যাগ করা ১৪. কঠোরতা বর্জন করা ১৫. খাদ্য লোভ কম করা ১৬. অতিরিক্ত কামভাব না দেখানো ১৭. রিয়া বা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ইবাদত না করা ১৮. হিংসাত্মক মনোভাব পোষণ না করা ১৯. অর্থের লোভ থেকে মুক্ত থাকা ২০. জাঁকজমক থেকে বিরত থাকা।
পরিশেষে আমি মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের সবাইকে প্রিয়নবীর আদর্শে উজ্জীবিত হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D