সিলেটে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ইতিবৃত্ত

প্রকাশিত: ৭:০২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৪, ২০২৫

সিলেটে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ইতিবৃত্ত

আতিকুর রহমান নগরী : সময়টা ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির শুরুর দিক। সিলেটের এমসি কলেজ ক্যাম্পাসের সবুজ মাঠের গালিচায় বসা ৯জন তরুণ ও ১জন তরুণী। সবাই পেশায় শিক্ষার্থী হলেও একজন রয়েছেন যার মাথায় টুপি। তিনি সিলেটের স্থানীয় দৈনিক শ্যামল সিলেটের সাংবাদিক।

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক (ভিপি নূর)সহ তার সহযোদ্ধা/সহকর্মীরা মিলে তখন (২০১৮ সালে) শুরু করেছিলেন ‘কোটা সংস্কার’ আন্দোলন। যা ধাপে ধাপে সময়ের ব্যবধানে ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন’, এরপর ছয় বছরের মাথায় ২০২৪ এসে ‘জুলাই বিপ্লব’, গণভঅভ্যুত্থান, ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রজনতার আন্দোলনে রূপ নেয়। এবং চব্বিশের ৫ আগস্টে এই আন্দোলনের পূর্ণ ফসল ঘরে তুলতে সক্ষম হন আন্দোলনকারীরা।

লেখাটি মূলত: আজকের এই ছবি নিয়েই। সবুজ মাঠে বসে থাকা ১০জন মানুষের একই স্বপ্ন। একই দৃষ্টিভঙ্গি। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঐক্যমত তারা। বৈঠকের আহবায়ক আব্দুর রহিম ভাই, গণিত বিভাগ, এমসি কলেজের ছাত্র (তৎকালীন)। যিনি বর্তমানে জাতীয় নাগরিক কমিটি সিলেটের সার্চ কমিটির সদস্য।

২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কোটা সংস্কার আন্দোলন সিলেটের মানববন্ধন কর্মসূচী সফলের লক্ষ্যে ছিল ওইদিনটির মাঠের সভা। ঠিক ক’দিন আগে এমসির মাঠে সভাটি হয়েছিল তা সঠিক মনে নেই। সম্ভবত সপ্তাহখানেক আগে। উপস্থিত ছিলাম আমি আতিকুর রহমান নগরী, স্টাফ রিপোর্টার দৈনিক শ্যামল সিলেট, এমসি কলেজ এর শিক্ষার্থী আর এস শাওন, এমসি কলেজের দর্শন বিভাগের ছাত্রী (তৎকালীন) শারমিন, শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী রাব্বি, সানি, এমসি কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী (তৎকালীন) শাহিনুর পাশা, এমসি কলেজের প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র (তৎকালীন) মৃদুল, সিকৃবির ছাত্র রাহুল উপস্থিত ছিলেন।

সভায় ‘কোটা সংস্কার’ আন্দোলন কী ও কেন? তা নিয়ে কিঞ্চিৎ ধারণা দেন সভার আহবায়ক আব্দুর রহিম। সবাই যার যার মত প্রকাশ করেন। তবে দেশে এই নামে, এই আন্দোলন নতুন হচ্ছে। আর সিলেটে তো প্রথম সভাই এটি। তাই আন্দোলন সম্পর্কে ওই সভায়ই জানা হল। এবং আব্দুর রহিম ভাই আমার কাছে বিশেষ সহযোগিতা চাইলেন নিউজ কভারেজের ক্ষেত্রে। সাথে এও বললেন আপনি লেখালেখি করেন, যদি কোটা সংস্কার নিয়ে কিছু লিখতেন তবে উপকার হতো। এরপর আমি ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে একটি আর্টিকেল লিখেছিলাম। যা সিলেটের স্থানীয় দৈনিক জালালাবাদ পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছিল। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে আমার পুরনো ফেসবুক আইডি ডিজেবল হওয়ার দরুণ কোটা সংস্কার নিয়ে লেখা আর্টিকেল এখন পাওয়া যাচ্ছে না। তদুপরি জালালাবাদের অনলাইন সংস্করণেও এটি নেই বলে অদ্য বুধবার (২৩ এপ্রিল) নিশ্চিত হলাম। তাদের ওয়েব সাইটের উন্নয়নমূলক কাজ হওয়াতে অতীতের অনেক সংবাদ ডাটাবেজে সংরক্ষণ থাকেনি।



২০১৮তে শুরু হওয়া আন্দোলন। ২০২৫ এ এসে আকাশকুসুম কল্পনার মতোই লাগছে। ১০জনের ওই বৈঠক যে পরবর্তীতে ১০ হাজারে, ১০ লাখে রূপ নিবে ধারণাও করা যায়নি, যাওয়ার কথাই ছিল না তখন। কঠোর পরিশ্রম আর হাল না ছাড়লে যে অসাধ্যকেও সাধ্যের গন্ডিতে আনা সম্ভব। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে জুলাই বিপ্লব আর বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন না দেখলে বুঝা যেতনা।

এক তথ্যমতে, সিলেটে ১৪জন শহীদ হয়েছেন। ২০০ জন আহত হয়েছেন। আরো অসংখ্য মানুষজন যে ভূমিকা রেখেছেন তার হিসেব কষা দুস্কর। তবে সিলেটে এ-ই আন্দোলন এর সূচণা ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এমসি কলেজের মাঠে ১০জনের বৈঠকের মাধ্যমে। হয়ত এই শুরুর কথাটা অনেকেরই অজানা। কেনইবা অজানা থাকবে না। তারও অনেক কারণ ছিল। শুরুতে লোকজন কম। আন্দোলনের লক্ষ্যউদ্দেশ্য নিয়ে অনেকের না বুঝার জটিলতা।

আঠারোর এপ্রিল-জুলাইয়ের দিকে এই আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ছিল। কর্মসূচিতে পুলিধের বাঁধা ছিল। ছাত্ররা ফুল হাতে পুলিশের সাথে কথা বলেছিল। আর চব্বিশে এসে ছাত্রদের আন্দোলনকে যৌক্তিক মনে করে জনতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষজনের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছিল।
শাবি হয়ে উঠে কেন্দ্রবিন্দু। আমজনতাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষজন আন্দোলনে যোগদান করতে দেখা যায়। আবারও শাবি থেকে বের হয়ে আসলো পুরো সিলেটজুড়ে আন্দোলন। তীব্র গতিতে এগুতে থাকে। ওই কোটা সংস্কার থেকে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন, জুলাই বিপ্লব, গণ অভ্যুত্থান। আর ছাত্ররা তখন বলেছিল ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম সরকার। জয় হল ছাত্রজনতার। কোটা সংস্কার সফল হল।


লেখক : সিনিয়র রিপোর্টার, দৈনিক শ্যামল সিলেট