৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:০৭ পূর্বাহ্ণ, মে ১৩, ২০১৯
স্বপ্নের ইউরোপে পাড়ি জমাতে গিয়ে তিউনিশিয়ার কাছাকাছি ভূমধ্যসাগরে তলিয়ে গেল অনেক সিলেটি যুবক। এদের মধ্যে ৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অনেকেই। এ ঘটনায় সিলেটে কান্নার রোল পড়েছে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে নিখোঁজদের ঘিরে। স্বজনদের প্রত্যাশা- শেষ মুহূর্তে যেনো তাদের লাশ ফিরে পান।
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া খবরে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের ৪, গোলাপগঞ্জের ১ ও মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার ১ যুবকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে পরিবার। গতকাল সন্ধ্যায় ফেঞ্চুগঞ্জের নিখোঁজ দুই যুবককে খুঁজে পাওয়া গেছে। স্থানীয় জেলেরা তাদের জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছিলো।
সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া সিলেটের অপর যাত্রীরা টেলিফোনে দেশে থাকা স্বজনদের কাছে মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন। মৃতরা হলেন- ফেঞ্চুগঞ্জের মুহিদপুর গ্রামের হারুন মিয়ার পুত্র আব্দুল আজিজ, মন্টু মিয়ার পুত্র আহমদ হোসেন এবং সিরাজ মিয়ার পুত্র লিটন। নিহতরা সবাই একে অন্যের আপন চাচাতো ভাই। এ ছাড়া ফেঞ্চুগঞ্জের নিদনপুর গ্রামের আফজাল রহমান নামের আরো মপল যুবকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর বাইরে কুলাউড়ার ভুকশিমইল এলাকার বাসিন্দা আহসান হাবিব শামীম ও সিলেটের গোলাপগঞ্জের কামরান আহমদ মারুফ নামের আরো দুই যুবক মারা গেছে। শামীম সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদের ছোট ভাই ও মারুফ হচ্ছে সামাদের শ্যালক।
স্বজনরা জানিয়েছেন, প্রায় ৬ মাস আগে ইউরোপের দেশ ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে সিলেটের কয়েকটি অনুমোদনহীন ট্র্যাভেল এজেন্সিতে পাসপোর্ট জমা দেন। এর মধ্যে বেশির ভাগ যাত্রীই যান সিলেটের জিন্দাবাজারের রাজা ম্যানশনের ইয়াহিয়া ওভারসিজের মাধ্যমে। প্রতিজন ৮ লাখ টাকা চুক্তিতে তারা ইউরোপ যাওয়ার জন্য প্রায় ৫ মাস আগে ঘর থেকে বের হন। সেখান থেকে তাদের প্রথমে দুবাই এরপর আরো তিনটি দেশ ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম লিবিয়ায়। সেখানে একটি ঘরে তাদের বন্দি রাখা হয়। প্রায় ৭৫ জন অভিবাসীকে একটি কক্ষে বন্দিদশায় রাখা অবস্থায়ই তারা কাহিল হয়ে পড়েন। সেখানে তাদের এক বেলা খাবার দেয়া হতো। গত বৃহস্পতিবার তাদের ইউরোপ নিয়ে যেতে বের করা হয়। সেখান থেকে একটি ট্রলারে করে ভূমধ্যসাগরে যাত্রা শুরু করে। গভীর রাতে সেখান থেকে আরো কয়েক জনকে একটি ছোট ট্রলারে তুলে। আর ট্রলারে ওঠার ১০ মিনিটের মধ্যে ট্রলারটি ডুবে যায়।
প্রাণে ফিরে আসা যাত্রীরা সিলেটের স্বজনদের জানিয়েছেন, তারা দেখেছেন তাদের চোখের সামনেই স্বজনরা হারিয়ে গেছে ভূমধ্যসাগরের বুকে। শুক্রবার গোটা দিন সিলেটে এ সংক্রান্ত কোনো খবর আসেনি। তবে শনিবার বিকাল থেকে এ খবর সিলেটে পৌঁছতে থাকে। প্রাণে বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা টেলিফোনে দেশে থাকা স্বজনদের এ খবর জানালে সিলেটজুড়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের মুহিদপুর গ্রামের একই পরিবারে মারা যান তিন ভাই। সম্পর্কে তারা চাচাতো ভাই। ওই ট্র্যাজেডি থেকে প্রাণে বেঁচে যান তিন জনের আরেক স্বজন ইতালি যাত্রী বেলাল আহমদ।
নিহত আব্দুল আজিজের ভাই মুফিজুর রহমান গতকাল দুপুরে জানিয়েছেন, শনিবার বেলা ৩টার দিকে তিউনিশিয়া থেকে তার আপন চাচা ইতালি যাত্রী বেলাল আহমদ টেলিফোন করেন। আর এই টেলিফোনে বেলাল আহমদ জানান, ‘আমি দীর্ঘ সময় সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম। স্থানীয় জেলেরা এগিয়ে এসে আমাকে উদ্ধার করলেও আমার ভাগ্নে আহমদ এবং ভাতিজা আব্দুল আজিজ বেঁচে নেই। দীর্ঘ ৪ মাস বিভিন্ন দেশ ঘুরে লিবিয়ায় অবস্থান করছিলেন তারা। গত বৃহস্পতিবার সেখান থেকে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করে যাওয়ার পর তারা তিউনিশিয়া উপকূলে এসে তাদের ছোট একটি নৌকায় জোর করেই তোলা হয়। ওই নৌকায় ওঠার ১০ মিনিটের মধ্যেই নৌকাটি হিমশীতল সাগরে ডুবতে থাকে। তখন সাগরে হাবুডুবু খেয়ে মৃত্যু হয় বলে জানান বেলাল আহমদ।
এ খবর শোনার পর ফেঞ্চুগঞ্জে কান্নার রোল পড়ে। রাতে আরো কয়েক বার যোগাযোগের পর তাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া যায়। এ ঘটনায় গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের হাওরতলা গ্রামের মৃত রফিক মিয়ার পুত্র আফজাল রহমান নিখোঁজ ছিলেন। তিনি ফেঞ্চুগঞ্জের দিনপুর তার ফুফুর বাড়িতে থাকতেন। ট্রলারডুবিতে মারা যাওয়া ফেঞ্চুগঞ্জের যুবক লিটন আহমদ সিলেটের একটি অনলাইন পোর্টালে কাজ করতেন। ওই চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি স্বপ্নের ইউরোপে যেতে ৫ মাস আগে যাত্রা শুরু করেন। তার মৃত্যুর খবরে ফেঞ্চুগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে কান্নার রোল পড়েছে।
গতকাল সকালে বাড়িতে গিয়েও দেখা গেল মাতম চলছে। পিতা সিরাজ উদ্দিন ছেলের মৃত্যুর খবরে কাঁদছেনই। তিনি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিকালের দিকে ঘটনা ঘটলেও তারা জেনেছেন শনিবার সন্ধ্যার আগে। ওখানকার রেড ক্রিসেন্টের হেফাজতে থাকা স্বজনরা টেলিফোনে তাদের খবরটি নিশ্চিত করেছেন। সিরাজ মিয়া জানান, আমরা ছেলেদের হারিয়েছি। একবার হলেও আমরা লাশের মুখ শেষবারের মতো দেখতে চাই। এ জন্য তিনি সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এদিকে ট্রলারডুবিতে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদের ছোট ভাই হাফিজ আহসান হাবিব শামীম প্রথমে নিখোঁজ ছিলেন। এ দুর্ঘটনায় তার শ্যালক কামরান আহমদ মারুফও নিখোঁজ হন। তবে শেষ মুহূর্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে তারা দুজনই মৃত্যুবরণ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের দুজনের মৃত্যুর খবরে শোক অব্যাহত রয়েছে। এই দুজনের মৃত্যুতে কুলাউড়া ও গোলাপগঞ্জে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় নিখোঁজ আরো দুজনকে জীবিত উদ্ধারের খবর পাওয়া গেছে। ঘটনার পর থেকে তারা নিখোঁজ ছিলেন। এরা হলেন- ফেঞ্চুগঞ্জের মহিদপুরের মাঝপাড়া গ্রামের হাজী তজম্মুল আলীর ছেলে বিলাল আহমদ ও দিনপুর গ্রামের চান মিয়ার ছেলে শিজুর মিয়া। তারা নিউনিশিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই দুজনের বাইরে আরো কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
Office : Central Market (1st floor),
Bandar Bazar (Court Point),
Sylhet – 3100, Bangladesh.
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D