২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬
বিদেশী ফ্লাইটের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আকাশ। বাংলাদেশ বিমানের পাশাপাশি বিদেশি কোম্পানির উড়োজাহাজ এসে অবতরণ করবে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। আগামী মাসে সিলেট থেকে বহির্বিশ্বে সরাসরি ফ্লাইট অপারেট করতে যাচ্ছে ফ্লাই দুবাই। প্রতিদিনই সিলেট থেকে ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি শুরু করেছেন ওই উড়োজাহাজ কোম্পানির কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে এয়ার এরাবিয়া, জেট এয়ারসহ কয়েকটি বিদেশি কোম্পানি সিলেট থেকে সরাসরি ফ্লাইট চালুর প্রক্রিয়া চালাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সিলেটের প্রায় ৫০ লাখ প্রবাসী বসবাস করেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। গত ৬ দশক ধরে এসব প্রবাসী বিদেশে বসবাস করে রেমিট্যান্স প্রবাহকে সমৃদ্ধ করলেও তাদের যাতায়াতের একমাত্র গেটওয়ে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছিল উপেক্ষিত। কেবল অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট যাতায়াত করতো ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করেছিলেন। ওই সময় অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হলেও রিফুয়েলিং সিস্টেম ছিল না। ফলে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশ-বিদেশ থেকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রিফুয়েলিং সিস্টেম চালু করার দাবি উঠে। এই দাবির প্রেক্ষিতে প্রায় ৩ বছর আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শত কোটি টাকা ব্যয়ে রিফুয়েলিং সিস্টেম চালু করেন। এরপর থেকে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। প্রস্তুতের পর বাংলাদেশ বিমান সিলেট থেকে যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমানবন্দরে সরাসরি ফ্লাইট চালু করে। কিন্তু কুয়াশারার অজুহাত দেখিয়ে প্রায় দুই বছর আগে বিমানও সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়। ফলে কয়েক মাস সিলেট থেকে লন্ডনে সরাসরি ফ্লাইট চালু বন্ধ থাকে। আর ওই সময় সিলেটবাসী দাবি তোলেন ওসমানী বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ কোম্পানির ফ্লাইট অবতরণের। এ দাবি নিয়ে যখন সিলেটসহ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসীরা একজোট হন তখন বাংলাদেশ বিমান লন্ডন, দুবাই, সৌদি থেকে সরাসরি ফ্লাইট নিয়ে সিলেটে আসছে। কিন্তু সিলেট থেকে সরাসরি ওই সব দেশে ফ্লাইট চালু করেনি। ফলে সিলেটের যাত্রীদের বাধ্য হয়ে ঢাকা ছুঁয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তির শেষ নেই।
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, সিলেট বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৬-৭শ’ প্রবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করেন। এসব যাত্রীর চলতে হয় বিমানের মর্জির ওপর। প্রতি মাসেই ২-১ বার বাংলাদেশ বিমানের সিডিউল ওলটপালট হয়। ওই সময় বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে ইউরোপ ও আমেরিকাগামী যাত্রীদের পোহাতে হয় ভোগান্তি। এ অবস্থায় ২০১৫ সালের ১লা এপ্রিল সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাই দুবাই সরাসরি ফ্লাইট চালু করেছিল। ওই দিন দুবাই থেকে সরাসরি আসা একটি ফ্লাইট সিলেটে আসে এবং সিলেট থেকে সরাসরি দুবাই যায়। তবে মাত্র একদিন ফ্লাইট অপারেট করেই ফ্লাই দুবাইয়ের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর কারণ ছিল, ফ্লাই দুবাই ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানের গ্রাউন্ড সার্ভিস পায়নি। এমনকি তখন ফ্লাই দুবাই রিজেন্ট এয়ার ওয়েজের গ্রাউন্ড সার্ভিস চেয়েছিল। কিন্তু বিমানের আপত্তির কারণে তারা সেটিও পায়নি। ওই সময় এয়ার এরাবিয়া আসার কথা থাকলেও পরবর্তীতে তারাও ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়।
এদিকে, সম্প্রতি সিলেটের প্রবাসী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মহল সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও এ ব্যাপারে কথা বলেন। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ইতিবাচক মনোভাবের কারণে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বহির্বিশ্বের উড়োজাহাজ আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ফ্লাই দুবাই সিলেট অফিসের ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম মুকুল জানান, আশা করা হচ্ছে আগামী জানুয়ারি মাসের শেষদিকে ফ্লাই দুবাই সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করতে পারবে। ইতিমধ্যে সিভিল এভিয়েশনের ছাড়পত্র পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ফ্লাই দুবাই সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের গ্রাউন্ড সার্ভিস নেবে। রিজেন্ট আগামী মাসের প্রথম দিকে আরো যন্ত্রপাতি আনবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, ফ্লাই দুবাই সপ্তাহে প্রতিদিন দুবাই, কাতার, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করবে। এতে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী যাত্রীরা কিছুটা সুবিধা আদায় করবেন। তারা দুবাই ট্রানজিট নিয়ে সরাসরি চলে আসতে পারবেন সিলেটে। আর সিলেট থেকে দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাতায়াত করতে পারবেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী সিলেটি যাত্রীরা নিজ দেশের উড়োজাহাজ কোম্পানি বাংলাদেশ বিমানে ভ্রমণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কিন্তু বিমানের নজিরবিহীন গাফলাতির কারণে দুর্ভোগ কমাতে বিদেশি কোম্পানিকে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের দাবি তুলেছিলেন।
সিলেটের শিপার এয়ার সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী ও শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা খন্দকার শিপার আহমদ জানিয়েছেন, সিলেটের যাত্রীরা প্রথম পছন্দ হিসেবে বিমানকে বেঁচে নেন। আমরাও বিমানকে সাপোর্ট করি। কিন্তু যাত্রী চাহিদার কারণে এখন অন্য উড়োজাহাজ কোম্পানিকে সিলেটে আমন্ত্রণে বাধ্য করা হয়েছে। বিমান সিলেট থেকে সরাসরি ফ্লাইট চালু করলে একটু বেশি দাম হলেও যাত্রীরা বিমানেই ভ্রমণ করবেন বলে জানান তিনি।
সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সালাহউদ্দিন আলী আহমদ জানিয়েছেন, বিমানকে সক্ষমতা আনতে হবে। যাত্রী চাহিদা পূরণে আরো বেশি সচেষ্ট হতে হবে। প্রতিযোগিতায় না এলে চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য বাড়বে। এতে রেমিট্যান্সের প্রবাহ আরো বাড়বে বলে জানান তিনি।
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ জানিয়েছেন, আমরা অনেক আগে থেকেই প্রস্তুত। বিমানের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট তো অপারেট করা হচ্ছে। সুতরাং যাত্রী সেবার মান আরো বাড়াতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট থাকবেন।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D