রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম নির্যাতন চলছে

প্রকাশিত: ৩:০৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৮, ২০১৬

Manual4 Ad Code

নাইপেদো : মায়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় এশিয়ার মুসলিমদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। গত সপ্তায় কয়েক হাজার মানুষ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছে। তারা মায়ানমারের এক সময়ের গৃহবন্দী নেত্রী ও বর্তমানে রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সুচির তীব্র সমালোচনা করেছেন।

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় মায়ানমারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বর্বর নির্যাতন চালাচ্ছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য নীরব ভূমিকা পালন করার জন্য সুচিকে ‘বর্বর’ বলেও আখ্যা দিয়েছে কোনো কোনো দেশের নাগরিকরা।

ইন্দোনেশিয়ায় রাজধানী জাকার্তায় ২৫ নবেম্বর ইসলামিক রাজনৈতিক দলের নেতাসহ প্রায় চার শতাধিক মানুষ মিয়ানমারের দূতাবাসের সামনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর বর্বর হামলায় মানববন্ধন করেছে। তারা মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির নোবেল পুরষ্কার ফেরত নেয়ার আহবান জানান। ১৯৯১ সালে মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে গৃহবন্ধী থাকার সময় শান্তিতে নোবেল পান সু চি।

Manual2 Ad Code

জাকার্তা মানববন্ধনের প্রধান সমন্বয়ক জুলকাইফ আলী বলেন, আমরা দুঃখিত সু চি। আমরা জানি আপনি শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। তবে শান্তিতে নোবেল পেলেও আপনার দেশ মিয়ানমারে শান্তি কোথায়? আপনার দেশে মুসলিমরা শান্তিতে নেই। শান্তিতে নোবেল পেয়েও অশান্তির আগুলে জ্বলছে মায়ানমার। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহবান জানানো হয় জাকার্তার ওই মানববন্ধন থেকে।

Manual4 Ad Code

মায়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম রয়েছে। যুগযুগ ধরে তারা মৌলিক অধিকার পাওয়া থেকে বঞ্চিত ও অবহেলিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে কাঠখড় পোহাতে হয়েছে সামরিক সরকারের শাসনামলে। ২০১৫ সালের নবেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি সরকার গঠন করে। নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও দেশটির মুসলিমরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে দেশটিতে।

সুচির সরকার এখনো দেশটিতে মুসলিম রোহিঙ্গাদের নির্যাতন রোধে কার্যকরি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ৯ অক্টোবরের পরে এই পর্যন্ত আড়াই শ’ রোহিঙ্গা মুসলিম হত্যার শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তে বিশেষ অভিযানের সময় মায়ানমারের ৯ পুলিশ সন্ত্রাসীদের আক্রমণে নিহত হয়। ৯ পুলিশ নিহতের জের ধরে দেশটির সেনা বাহিনী নিরীহ রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন শুরু করে হত্যা করছে।

ওই দুর্ঘটনার পরে মায়ানমার সেনারা মংড়– শহর ঘিড়ে ফেলে। এটি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা। মংড়–তে সন্দেহভাজন প্রায় এক’ শ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বলে মায়ানমারের সেনা বাহিনীর সূত্রে জানা যায়। তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই সংখ্যা আরো বেশি হবে বলে দাবি করেছে। সর্বশেষ হামলায় প্রায় ৩০ হাজার গ্রামবাসীর ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এমতাবস্থায় মায়ানমারের সরকার সংঘাতপূর্ণ এলাকায় গণমাধ্যমের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেয়। প্রকৃতপক্ষে রাখাইনে কি হচ্ছে তা এখনো সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।

জাতিসংঘের কর্মকর্তা জন ম্যাকেসিন ২৪ নবেম্বর বিবিসিকে জানান, মায়ানমার রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনে নেমেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দিতে বলা কঠিন। কেন না মিয়ানমারে এই ধরনের কর্মকাণ্ড নিয়মিতই করছে। মায়ানমারের লক্ষ্যই যেন সংখ্যালঘু মুসলিমদের নিধন করা।

এদিকে জাতিসংঘের কর্মকর্তা জন ম্যাকেসিনের মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন মায়ানমারের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র জাও হতাই। তিনি বলেন, জাতিসংঘের কর্মকর্তার পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কথা বলা উচিৎ। মায়ানমারের সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তা তা আদৌ যথাযথ নয়।

মুখপাত্র আরো বলেন, মায়ানমারের সেনা বাহিনী কোনো ভুল কাজ করছে না। সেনা বাহিনী কেবল সশস্ত্র বিদ্রোহ থেকে দেশকে সুরক্ষার জন্য কাজ করছে।

Manual8 Ad Code

তবে জাও এর বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তব চিত্রের অমিল রয়েছে। বিভিন্ন প্রত্যাক্ষদর্শী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে বেসামরিক পুরুষদের উপর ব্যাপক নির্যাতন করছে মায়ানমারের সেনা বাহিনী। আর নারীদের ধর্ষণ করার অভিযোগ করেছেন। স্যাটেলাইটের বিভিন্ন চিত্রে ১ হাজার বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় মায়ানমারের দূতাবাস ঘেরাও

Manual7 Ad Code

রোহিঙ্গাদের হত্যা ও নারীদের ধর্ষণের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে মায়ানমারের দূতাবাস ঘেরাও এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে দেশটির মুসলিম কমিউনিটি। মানববন্ধন এবং দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচিতে বাংলাদেশীসহ অন্যান্য দেশের কয়েক হাজার মুসলমান অংশগ্রহণ করেছেন।

সিউলের স্থানীয় সরকারের অনুমতিক্রমে মুসলিম কমিউনিটি রোববার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত মায়ানমার দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে।

মানবন্ধনে মুসলিম কমিউনিটির নেতা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম নির্যাতন চালাচ্ছে। স্ত্রী সন্তানের সামনে স্বামীকে নির্যাতন করছে। স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা ও ধর্ষণ বন্ধ করতে হবে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে।

এ সময় দক্ষিণ কোরিয়ার মুসলিম কমিউনিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দও বক্তব্য রাখেন।

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code