দেশে দশ ভাগ নারী কনস্টেবল যৌন হায়রানির শিকার

প্রকাশিত: ১০:১১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২২, ২০১৬

দেশের পুলিশ বিভাগে কনস্টেবল পদে কর্মরত নারীদের ১০ ভাগেরও বেশি সদস্য যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এই বিভাগের ক্যাডার পর্যায়ের নারী পুলিশ কর্মকর্তারাও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির বাইরে নন।

মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপের এ টি এম শামসুল হক মিলনায়তনে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভের (সিএইচআরআই) যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়।

বৈঠকে পুলিশ বিভাগে কর্মরত নারী কর্মকর্তাদের শতকরা তিন ভাগ এ ধরনের ঘটনার শিকার হন বলে উল্লেক করা হয়। তাছাড়া এই বিভাগের ক্যাডার পর্যায়ের নারী পুলিশ কর্মকর্তারাও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির বাইরে নন বলে জানানো হয়।

‘সমতার কঠিন পথে বাংলাদেশের নারী পুলিশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে সিএইচআরআইয়ের গবেষণা প্রতিবেদনে নারী পুলিশ সদস্যদের নানা প্রকার হয়রানির বিষয় তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, ‘এ ধরনের তথ্য একেবারে ভিত্তিহীন। এর কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। পুলিশে যে কোনো পদের নারী কর্মী কর্মস্থলে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন এ রকম কোনো নজির নেই’।

বৈঠকে গবেষনাপত্রের বিষয় উল্লেখ করে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে পুলিশ বিভাগে নারী সদস্য ১১,০৩৮ জন। এটি পুলিশের মোট জনবলের ৫.৮৪ ভাগ। এখানে কর্মরত নারীরা মনে করেন, নারীদের কাজের জন্য পুলিশ বিভাগ একটি ভালো জায়গা। বেশির ভাগ নারী পুলিশ মনে করেন, পুলিশের পোশাক তাদের পুরুষের সমান ক্ষমতা দেয় এবং জনগণকে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা পুরুষ সহকর্মীদের সমান। এ ক্ষেত্রে তারা পরিবারের সমর্থনও পান’।

গবেষণা প্রতিবেদনে পুলিশে নারী সদস্যদের সমস্যার কথা তুলে ধরে বলা হয়, ‘দেশে নারী পুলিশদের জরুরি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার দায়িত্ব দেওয়া হয় না। ক্যাডার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক পদে মাত্র একজন নারী আছেন। এ ছাড়া পুলিশের জ্যেষ্ঠ পদে নারীদের প্রতিনিধিত্ব কম। নেতৃত্ব ও মাঠপর্যায়ের ব্যবহারিক ভূমিকা থেকে তাদের দূরে রাখা হয়। অনেক নারী পুলিশ যৌন হয়রানির শিকার হলেও অভিযোগ দায়ের হয় না। কারণ, নারী পুলিশ সদস্যদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে পুরুষ কর্মকর্তারা সংবেদনশীল নন। এ কারণে পুলিশ বিভাগের উচিত দ্রুত পূর্ণাঙ্গ জেন্ডার নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন’।

বৈঠকে সিএইচআরআইয়ের পরিচালক মায়া দারুওয়ালা বলেন, ‘পুলিশ হলো ইউনিফর্ম পরা নাগরিক। জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী হওয়ায় পুলিশ বিভাগেও নারীদের সমান প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই এখানে নারীদের অংশগ্রহণ জরুরি। ভালো পুলিশি সেবার জন্য নারী পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। এ জন্য তাদের প্রয়োজনীয় যাতায়াত-সুবিধা, মাতৃত্বকালীন সেবা নিশ্চিত করা এবং যৌন হয়রানির বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। পুলিশ বিভাগে নারী-পুরুষের সমতা বিধান করা হলে সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা কমবে’।

জাতিসংঘের নারীবিষয়ক আঞ্চলিক প্রতিনিধি ক্রিস্টিন হান্টার বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা দূর করতে বিশ্ব একমত হয়েছে। কিন্তু তা বাস্তবায়নে পিছিয়ে আছে। এখনো শতকরা ১০ জন নারী সহিংসতার শিকার হন। তাদের মধ্যে মাত্র ৫ ভাগ পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান। পুলিশের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন দেশের আইনশৃঙ্খলা ও বিচারব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তন আনবে’।

অনুষ্ঠানে সভাপতির হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। তিনি বলেন, ‘জনগণ পুলিশের কাছে আস্থা চায়। আস্থা পেলে সেখানে নারী-পুরুষ আলাদা কোনো বিষয় নয়। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে নারী পুলিশরা দক্ষতার সঙ্গে তাদের কাজ করতে পারবেন’।

অনুষ্ঠানে আলোচনা উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক ও বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন্স নেটওয়ার্কের সভাপতি মিলি বিশ্বাস, সিএইচআরআইয়ের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার অদিতি দত্ত, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রধান আইনজীবী সালমা আলী,‘বাঁচতে শেখা’র নির্বাহী পরিচালক অ্যাঞ্জেলা গোমেজ, নারীপক্ষের প্রকল্প পরিচালক রওশন আরা, জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক তহবিলের জেন্ডার বিশেষজ্ঞ শামীমা রহমান, জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ফওজিয়া খন্দকার প্রমুখ।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট