২৮শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:১৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৮, ২০২১
অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেফতার থাকা লক্ষ্মীপুর-২ আসনের আলোচিত সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির আদালত। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক সংসদ সদস্য পাপুল।
এই প্রথম বাংলাদেশের কোনও সংসদ সদস্যর বিদেশে দণ্ডিত হলেন।
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) চার বছরের সাজা দিয়ে এ রায় ঘোষণা করা হয়। বিচারক আবদুল্লাহ আল ওসমান এ রায় দেন। একই সঙ্গে পাপুলের কাজে সহায়তাকারী কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মাজেন আল জাররাহসহ কুয়েতি দুই কর্মকর্তাকেও চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। রায়ে দণ্ডিতদের প্রত্যেককে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
কুয়েতের দুই পার্লামেন্ট সদস্য সাদুন হাম্মাদ আল-ওতাইবি এবং সালাহ আবদুলরেদা খুরশিদকে এ মামলার অভিযোগ থেকে খালাস দেয়া হয়েছে।
আল-কাবাস ও আল-রাইয়েরসহ কুয়েতের সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে জানতে পেরেছি পাপুলের সাজা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জানতে চেয়েছি কুয়েতি কর্তৃপক্ষের কাছে।’
তিনি বলেন, ‘পাপুলের বিরুদ্ধে মোট তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মানবপাচার, ঘুষ দেওয়া এবং অর্থ পাচার। ঘুষ দেওয়ার মামলার রায় হয়েছে এবং অন্য দুটির বাকি আছে।’
পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে কুয়েতি প্রসিকিউশন পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ আনে ।
পাপুলের কোম্পানিতে ২০ হাজার বাংলাদেশি কাজ করেন। তদন্তে বের হয়ে আসে, ঘুষ, উপহার ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে পাপুল প্রতি বছর প্রায় ৬০ কোটি টাকা লাভ করতেন। পাপুলের এবং তার কোম্পানির প্রায় ৫০ লাখ কুয়েতি দিনার (প্রায় ১৪০ কোটি টাকা) (ব্যাংকে জমাকৃত) ফ্রিজ করার জন্য ওই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনুরোধ করেছেন পাবলিক প্রসিকিউটর।
গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে পাপুলকে গ্রেফতার করা হয়।
অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর পাপুলের মামলায় আনুষ্ঠানিক বিচার কাজ শুরু হয়। এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর মামলার রায় ঘোষণার জন্য তারিখ ঠিক করে দেন বিচারক।
কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক অ্যাসিস্ট্যান্ট আন্ডার সেক্রেটারি বরখাস্ত মেজর জেনারেল মাজেন আল-জারাহও রয়েছেন দণ্ডিতদের মধ্যে।কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক অ্যাসিস্ট্যান্ট আন্ডার সেক্রেটারি বরখাস্ত মেজর জেনারেল মাজেন আল-জারাহও রয়েছেন দণ্ডিতদের মধ্যে। আসামিদের মধ্যে মেজর জেনারেল মাজেন আল-জারাহ নাগরিকত্ব, পাসপোর্ট ও বসবাসের অনুমতি বিষয়ক দপ্তরের অ্যাসিস্ট্যান্ট আন্ডার সেক্রেটারি থাকা অবস্থায় ঘুষের বিনিময়ে পাপুলের বেশ কিছু কাজে সায় দেন বলে অভিযোগ ছিল।
আর কুয়েতের পার্লামেন্টের এমপি সাদুন হাম্মাদ ও সালাহ খুরশিদের বিরুদ্ধেও বাংলাদেশি এমপির কাছ থেকে ‘ঘুষ নিয়ে’ অবৈধ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবে আদালতে তা প্রমাণিত হয়নি।
সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
ওই নির্বাচনে ওই আসনটি আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রার্থী শেষ মুহূর্তে ভোট থেকে সরে দাঁড়ালে ‘বিএনপি ঠেকানোর’ কথা বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ পাপুলের পক্ষে কাজ করে বলে দলটির নেতাদের ভাষ্য।
পাপুল নিজে এমপি হওয়ার পর স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কোটায় পাওয়া সংরক্ষিত একটি আসনে তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামকে এমপি করে আনেন।
প্রবাসী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন পাপুল, যেখানে তার বড় অঙ্কের শেয়ার রয়েছে।
বাংলাদেশে দুদকও পাপুল, তার স্ত্রী, শ্যালিকা ও মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলাম সেই মামলায় জামিনে আছেন।
কুয়েতের আদালতে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় বাংলাদেশের সংসদ সদস্য পদ হারাতে হবে পাপুলকে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য পেলে তবেই তার সদস্যপদ খারিজের উদ্যোগ নেবে সংসদ সচিবালয়।
আর পাপুলের সদস্য পদ নিয়ে কোনও বিতর্ক দেখা দিলে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনও আইনপ্রণেতা নৈতিক স্খলনজনিত কোনও ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না।
মানবপাচারের দায়ে গ্রেফতার হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদকে জানিয়েছিলেন, দুই দেশের নাগরিক হলে পাপুলের সদস্য পদ বাতিল হবে। অবশ্য এর পরপরই কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, পাপুল তাদের দেশের নাগরিক নন। অবশ্য নাগরিকত্ব ইস্যুতে না হলেও ফৌজদারি অপরাধে কুয়েতের আদালতে সাজা হওয়ায় বাংলাদেশে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হবে বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D