নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর পরিবারের পাশে মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত: ১:৩৬ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৩১, ২০১৯

গুম-খুনের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার একদিন মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হবে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল বিকালে বনানীতে নিখোঁজ সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলীর পরিবারের সাথে সাক্ষাতের পর বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের কাছে এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘এনফোর্স ডিজএপিয়ারেন্স এটা সম্পূর্ণরূপে মানবতাবিরোধী একটা অপরাধ। জাতিসংঘের যে একটা চার্টার্ড আছে সেই চার্টার্ডে পরিষ্কার করা হয়েছে দিস ইজ এ ক্রাইম এগেনেস্ট হিউমেনেটি। আজকে এই সরকার অভিযুক্ত হবে এই ক্রাইম এগেনেস্ট হিউমিনেটির জন্য।’
‘আমরা একটা জিনিসে বিশ্বাস করি, একদিন না একদিন এই মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিচার হবেই। আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্রহীনতা আছে, জনগণের প্রতিনিধি নেই। সত্যিকার অর্থে যেদিন জনগণের প্রতিনিধির সরকার গঠিত হবে সেদিন এর বিচার অবশ্যই হবে।’
নিখোঁজ ব্যক্তিরা তাদের পরিবারের কাছে ফিরে আসবে এরকম প্রত্যাশা ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে ইলিয়াস আলীর বাসায় এসেছি তার ছোট মেয়ে আমাদের সামনে আসেনি। আসেনি এ জন্য সে অত্যন্ত বিব্রতবোধ করে কষ্ট পায়। আমরা মনে আছে ৬ বছর আগে যখন এখানে আসি আপনারা সবাই দেখেছেন ফুটফুটে একটা বাচ্চা মেয়ে প্রতিদিন বাবার জন্য অপেক্ষা করত।’
‘আমরা তাদের পাশে আছি। আমরা আশা করবো, ভবিষ্যতে এর একটা সুষ্ঠু বিচার হবে।’
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে মহাখালীর সাউথ পয়েন্ট স্কুলের সামনে থেকে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালককে তুলে নিয়ে যায়।
গতকাল বিকালে বিএনপি মহাসচিব ইলিয়াস আলীর বাসায় আসেন। তিনি তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর ও তার বড় ছেলে আবরার ইলিয়াসের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের খোঁজ-খবর নেন।
ইলিয়াস আলীর দুই ছেলে, এক মেয়ে। বড় ছেলে আবরার ইলিয়াস পশ্চিম ইংল্যান্ড থেকে ব্যারিস্টারি পাস করেছেন, ছোট ছেলে মো. লাবিব শারর ইংল্যান্ডের কভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ছোট মেয়ে সায়ারা নাওয়াল বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজে অধ্যয়ন করছেন।
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গতকাল পরামর্শ দিয়েছেন যে, আজকে যে আমরা এই গুম দিবসে আমাদের দলের যারা গুম হয়েছেন যথাসম্ভব তাদের বাসায় যাওয়ার চেষ্টা যেন করি। আমি ইলিয়াস আলীর বাসাসহ চারটি বাসায় গিয়েছি। আমাদের অন্য নেতৃবৃন্দ ঢাকা শহরে যারা আছেন তাদের বাসায় গিয়েছেন।’
‘গুম হওয়া পরিবারের সাথে আমরা সব সময় যোগাযোগ রাখি, চেষ্টা করি তাদের পাশে দাঁড়ানোর। তাদের কষ্ট আমরা ভাগ করে নিতে পারি না কিন্তু তাদের কষ্টটা আমরা অনুভব করি।’
গুম হওয়া পরিবারের অসহায় অবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে আমি দক্ষিণখানে গিয়েছিলাম ছাত্রনেতা তারিকুল ইসলাম ঝন্টুর বাসায়। তার মা বলছিলেন, আমরা এই ছেলেটা ছিল সবচেয়ে ভালো ছেলে, অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছিল। মা বলছিলেন যে, তাকে সালাম না করে কোনোদিন ঘুমোতে যেতো না। সেই ছেলে গুম হয়ে গেছে। কিছুদিন পরে ছেলের বাবা অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। তাদের তৃতীয় সন্তান দুর্ঘটনায় পা ভেঙে গেছেÑ এই পরিবারটি অত্যন্ত অসহায় অবস্থায় আছে।’
‘নিজামুদ্দিন মুন্নার বাসায় গিয়েছিলাম। অনেক কষ্ট করে এই ছেলেটি বিএ পাস করেছিল। তার বাবা এমন কোনো জায়গা নাই যাননি, ভারতেও গেছেন, বহু জায়গায় গিয়ে ছেলেকে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত অসুখ হয়ে বাবা মারা গেছেন। এখন অনেক পরিবার আছে যারা অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে আছেন। আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করছি তাদের পাশে দাঁড়ানোর। আজকে গুম দিবসে আমি এই মানবতাবিরোধী অপরাধের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
ইলিয়াস আলী, নিজামুদ্দিন মুন্না ও তারিকুল ইসলাম ঝন্টুর বাসা ছাড়াও নাখালপাড়ায় সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায়ও যান মহাসচিব। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, শহিদুল ইসলাম বাবুল, ব্যারিস্টার ফারজানা শারমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।