পবিত্র ঈদুল আজহা আজ

প্রকাশিত: ৩:৫৭ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৬

১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬, মঙ্গলবার : আজ ১০ জিলহজ মঙ্গলবার পবিত্র ঈদুল আজহা তথা কোরবানির ঈদ। ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করবেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা। মুসলিম মিল্লাতের পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ:)-এর ত্যাগের স্মৃতিবিজড়িত এই ঈদ। মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রয়োজনে নিজের প্রিয় বস্তুকে কোরবানি দেয়াই এই ঈদের শিক্ষা।

ঈদুল আজহার সাথে পবিত্র হজের সম্পর্ক রয়েছে। রোববার পবিত্র নগরী মক্কার অদূরে আরাফার ময়দানে সমবেত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বের ২০ লাখের বেশি মুসলমান হজ পালন করেছেন। স্থানীয় হিজরি মাস গণনা অনুযায়ী আজ সৌদি আরবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। সকালে মুজদালিফা থেকে ফিরে হাজীরা মিনায় অবস্থান করে পশু কোরবানিসহ হজের অন্যান্য কার্যাদি সম্পাদন করবেন।

ঈদুল আজহা হজরত ইব্রাহিম (আ:) ও তাঁর পুত্র হজরত ইসমাইল (আ:)-এর সাথে সম্পর্কিত। হজরত ইব্রাহিম (আ:) স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করতে গিয়েছিলেন। আসলে আল্লাহর পক্ষ থেকে এই আদেশ ছিল হজরত ইব্রাহিমের জন্য পরীক্ষা।

তিনি পুত্রকে আল্লাহর নির্দেশে জবাই করার সব প্রস্তুতি নিয়ে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ফলে সাথে সাথে পুত্র ইসমাইলের পরিবর্তে পশু কোরবানি করার নির্দেশ আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। সেই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি ধারণ করেই হজরত ইব্রাহিম (আ:)-এর সুন্নত হিসেবে পশু জবাইয়ের মধ্য দিয়ে কোরবানির বিধান এসেছে ইসলামি শরিয়তে। শরিয়তে সামর্থ্যবানদের জন্য পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করার পর আনন্দ থেকেই পালিত হয় ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। জিলহজ মাসের ১০ তারিখে এ ঈদ উদযাপিত হয়।

ইসলামে কোরবানি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র কুরআনে সূরা কাউসারে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে- ‘অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন’।

সূরা হজে বলা হয়েছে ‘কোরবানি করা পশু মানুষের জন্য কল্যাণের নির্দেশনা’।

কোরবানির মূল উদ্দেশ্যই তাকওয়া বা খোদাভীতি।

এ প্রসঙ্গে কুরআনে বলা হয়েছে- ‘এগুলোর গোশত আমার কাছে পৌঁছায় না। কিন্তু তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে যায়।’

রাসূল (সা:) বলেছেন, ‘ঈদুল আজহার দিন কোরবানির চেয়ে আর কোনো কাজ আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দীয় নয়।’ অন্যত্র বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পারও কোরবানি দিলো না সে যেন আমার ঈদগাহে না যায়।’

বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, পৃথিবীতে মানবজাতির সূচনা থেকেই কোরবানির প্রচলন। হজরত আদম (আ:)- এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিল সর্বপ্রথম কোরবানি দিয়েছিলেন।

এ প্রসঙ্গে কুরআনে এসেছে- ‘আপনি তাদেরকে আদমের দুই পুত্রের বাস্তব অবস্থা পাঠ করে শুনান। যখন তারা উভয়ে কিছু কোরবানি করেছিল। তখন তাদের একজনের কোরবানি গৃহীত হয়েছিল এবং অন্যজনেরটি গৃহীত হয়নি’ (সূরা মায়েদা-২৭)।

তবে ইসলামে যে কোরবানির বিধান তা হজরত ইব্রাহিম (আ:)-এর সাথে সম্পর্কিত। আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগের ঘটনা। ৮৫ বছর বয়সে আল্লাহ তাকে সন্তান দান করলেন। আবার আল্লাহর পক্ষ থেকে সে সন্তানকেই কোরবানি করার নির্দেশ এলো স্বপ্নযোগে। পরীক্ষায় বাপ-বেটা দু’জনেই উত্তীর্ণ হলেন। একজন নিজ পুত্রকে কোরবানি করার জন্য, আরেকজন নিজে কোরবানি হওয়ার জন্য মাথা নুয়ে দিয়ে আল্লাহর নির্দেশ পালনের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করলেন।

আল্লাহর সন্তুষ্টিই কোরবানির মূল উদ্দেশ্য। তাঁর পথে প্রয়োজনে জীবন ও সবচেয়ে প্রিয় বস্তু উৎসর্গের জন্য তৈরি হওয়ার শিক্ষাই এর মধ্যে নিহিত। এ জন্যই পশু জবাইয়ের সময় বলা হয়- ‘ইন্নাস সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়াইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।’ অর্থাৎ নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কোরবানি আমার জীবন, আমার মৃত্যু সবই আল্লাহর জন্য, যিনি নিখিল বিশ্বের প্রতিপালক।’

গরু, মহিষ, উট, ভেড়া. ছাগল, দুম্বা প্রাণী থেকে যেকোনো একটি দিয়ে কোরবানি দেয়া যায়। ৯ জিলহজ হাজীদের আরাফার ময়দানে অবস্থানের দিন ফজরের নামাজ থেকে ১৩ জিলহজ আসরের নামাজ পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তাকবির উচ্চারণ করা জরুরি ‘আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবর ওয়াল্লাহু আকবর, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’ কোরবানির পশুর গোশত তিন ভাগ করে একভাগ আত্মীয়স্বজনকে, আরেক ভাগ গরিবদের মধ্যে বণ্টন এবং বাকি একভাগ নিজেরা খাওয়া সুন্নত। ঈদুল আজহার দুই রাকাত নামাজ জামাতে আদায় করা ওয়াজিব। কোরবানি ১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজের যেকোনো দিন করা যায়।

সরকারিভাবে সচিবালয়সহ বড় বড় সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। জাতীয় সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো ঈদ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। ঈদের দিন সরকারিভাবে হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা ও শিশু সদনে উন্নতমানের বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে।

ঈদকে উপলক্ষ করে রাজধানী ঢাকা ছেড়েছে বহু মানুষ। নাড়ির টানে ঈদ করতে গ্রামে ফিরে গেছেন অনেকেই।

রাজধানী ঢাকায় বেশ কয়েকটি ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারি বজায় রাখবে। সাদা পোশাকে র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা তৎপর থাকবে বলে জানা গেছে।