সিলেট-২ আসনে নৌকা ও ধানের শীষ নেই, হতাশ ভোটাররা

প্রকাশিত: ৫:১২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৮

সিলেট-২ আসনে নৌকা ও ধানের শীষ নেই, হতাশ ভোটাররা

বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-২ আসন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। ছেড়ে দিয়েছে মহাজোটকে। আর ঐক্যফ্রন্ট থেকে এ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ‘নিখোঁজ’ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহিসনা রুশদীর লুনাকে। কিন্তু, মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়ার করা রিটের প্রেক্ষিতে লুনার প্রার্থীতা স্থগিত করেছেন আদালত। এই আদেশের বিপক্ষে লুনা হাইকোর্টে আপিল করলে সেটিও গত মঙ্গলবার খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। ফলে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনা।

এদিকে, আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী না থাকা আর বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়ন স্থগিত হয়ে যাওয়ায় নৌকা এবং ধানের শীষ প্রতীক ছাড়াই এবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট-২ আসনে নির্বাচন। তবে বর্তমানে ভোটের মাঠে দৌড়ে রয়েছেন ৯জন। তারা হলেন-মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব ও বর্তমান সাংসদ ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া, খেলাফত মজলিসের মুহাম্মদ মুনতাছির আলী, গণফোরমের মোকাব্বির খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা আমীর উদ্দিন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মনোয়ার হোসাইন, বিএনএফ’র মোশাহিদ খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান, অধ্যক্ষ এনামুল হক সরদার ও আব্দুর রব মল্লিক। নির্বাচনে ১০জন প্রার্থী প্রতিদ্বদ্ধিতা করলেও জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে এবার আসনটিতে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী তাহসিনা রুশদীর লুনা ছিলেন অন্যদের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে এম. ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজ’ থাকায় এলাকার সাধারণ ভোটারদেরও দুর্বলতা ছিল তার প্রতি। কিন্তু শেষ সময়ে এসে লুনার প্রার্থীতা বাতিল হওয়ায় কার কপাল খুলছে সেটি এখন আলোচনার বিষয়।

জানা গেছে, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তফসিল ঘোষনার পর প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেন। তবে এই আসনটি জাতীয় পার্টিকে এবারো ছাড় দেওয়ায় আওয়ামী লীগ কোন প্রার্থী দেয়নি। মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন ছিল ২৮ নভেম্বর। ঐদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জেলা রির্টানিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে সিলেট জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলাম ও উপজেলা সহকারি রির্টানিং অফিসারের কাছে একে একে আনন্দ মুখর পরিবেশে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন প্রার্থীরা। গত ১০ ডিসেম্বর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিক বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতিক পাওয়ার পরপরই প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনায় কোমর বেধে মাঠে নামেন। প্রতিদিন প্রার্থীরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে চষে বেড়ান। প্রার্থীরা নির্বাচনের প্রতিক পাওয়ার পর মাঠে ছিল তাদের সরব উপস্থিতি। প্রতিদিন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ান। প্রার্থীদের মধ্যে ছিল খুবই আন্তরিকতা। নির্বাচনে প্রচার-প্রচারনাকালে কোনো প্রার্থী কেউ কারো বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য দেননি বলে এলাকাবাসী জানান। কিন্তু গত মঙ্গলবার বিএনপির প্রার্থী তাহসিনা রুশদীর লুনার প্রার্থীতা স্থগিত করার খবর আসে। মূহুর্তের মধ্যে খবরটি সিলেট-২ আসনের প্রতিটি এলাকায় জড়িয়ে পড়ে। তৃনমূল পর্যায়ে বিএনপির সমর্থকরা হতাশা প্রকাশ করে বলছেন ধানের শীষ-নৌকা না থাকলে নির্বাচন জমবে না। এলাকার হাট-বাজার থেকে শুরু করে ছোট চায়ের দোকানেও একটাই আলোচনা এবারের নির্বাচনে বিশ্বনাথে নৌকা নেই, এখন ধানের শীষও আউট। বড় দুই দলের কেউ না থাকাতে এই আসনে নির্বাচন আমেজে ভাটা পড়েছে। প্রতিটি এলাকায় নির্বাচনী আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর মনোনয়নপত্র স্থগিত হওয়ার প্রসঙ্গটি।

বুধবার সকালে সিলেট-২ আসনের নির্বাচনী এলাকা ঘুরে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে উঠে এসেছে এমনচিত্র।

এব্যাপারে এলাকার নতুন ভোটার রুবেল আহমদ বলেন, নতুন ভোটার হিসেবে অনেক আগ্রহ ছিল ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার। কিন্তু এখন চিন্তা করছি ভোট কেন্দ্রে যাবনা।

উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া বলেন, প্রার্থীরা প্রতিক পাওয়ার পরপরই উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল উপজেলা জুড়ে। কিন্তু গত মঙ্গলবার শুনলাম বিএনপির প্রার্থীর মনোনয়ন স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। শুনে মনটা খারাপ লেগেছে।

ব্যাটারী চালিত রিকশা চালক আবুল মিয়া বলেন, এবারও নৌকা নেই, ধানের শীষও নেই। এলাকায় ভোটের হিসাব-পাল্টা যাচ্ছে। তবে এবার ভোট দিব কি না দিব চিন্তা করছি।

দিনমজুর ফজলু মিয়া বলেন, এলাকায় কিছুটা নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছিল। কিন্তু নৌকার পর এবার ধানের শীষ প্রতীকও নেই। তাই এ নির্বাচন নিয়ে কারো যেন মাথাব্যাথা নেই।

উপজেলার বাঁচাও বাসিয়া নদী ঐক্য পরিষদের আহবায়ক ফজল খান বলেন, নৌকা নেই, এখন ধানও আউট। এলাকার ভোটের চিত্র পাল্টে যেতে পারে। তবে নির্বাচনী আমেজ এখন একেবারে নেই বললেই চলে। আমার ধারনা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বিএনপির প্রার্থীর মনোনয়নপত্র স্থগিত করা হয়েছে। এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ নির্বাচন হবেনা।

শিক্ষক ফখরুল ইসলাম বলেন, প্রার্থীদের মাঝে প্রতিক বরাদ্দ হওয়ার পর এলাকায় নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছিল। কিন্তু নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীক না থাকায় হতাশ হয়েছি।

বিশ্বনাথ উপজেলা সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সাধারণ সম্পাদক মধু মিয়া বলেন, ভোটের মাঠে নৌকা-ধান না থাকায় এলাকায় নির্বাচনী আমেজে ভাটা পড়েছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট