১২ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৮:৪৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৮
বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে সিলেট শহরে রাস্তায় নেমেছে একদল তরুণ। কাকতাড়ুয়া নামে সংগঠনটির সদস্যরা রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বাংলা ভুল বানানগুলো শুদ্ধ করে দিয়েছে।
শনিবার সকালে নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে বানান শুদ্ধির মূল কার্যক্রম শুরু হয়।
সিলেটের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একদল তরুণপ্রাণ রং তুলি হতে এ অভিযান চালায়। এ দোকান থেকে ও দোকান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিলবোর্ড-সাইনবোর্ড বাদ পড়ে না কিছুই। যেখানেই ভুল বাংলা বানান, সেখানেই শুদ্ধি অভিযান। দোকান কিংবা প্রতিষ্ঠান মালিককে শত অনুরোধের পর একটি একটি করে পরম মমতায় বাংলা বানানগুলো শুদ্ধ করে দিয়েছে কাকতাড়ুয়ার সদস্যরা। নগরীর সুবিদবাজার পয়েন্ট থেকে পাঠানটুলা পর্যন্ত তারা ডিসেম্বর মাসে শুদ্ধি অভিযান চালিয়েছে।
নগরীর মুদিদোকান থেকে শুরু করে বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি অফিস, কারখানা সবখানেই হানা দিয়েছে তারা। নিজ হাতে পরম মমতায় শুদ্ধ করে দিয়েছে ভুল বাংলা বানান। কাকতাড়ুয়া ভুল বাংলা বানান শুদ্ধ করেই ক্ষান্ত হয়নি, পরবর্তীতে একই ভুল কেউ যাতে না করে সে ব্যাপারেও সচেতনতা তৈরি করে।
২০১৪ সালের একুশে ফেব্রয়ারির প্রভাতফেরি শেষে কাকতাড়ুয়ার ২০ জন ছেলেমেয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বানান শুদ্ধির যাত্রা শুরু করে। প্রায় প্রতিমাসেই কাকতাড়ুয়ারা সিলেট শহরের অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়ায়। এখন পর্যন্ত সিলেট নগরীর যেসকল রাস্তায় বাংলা বানান শুদ্ধি অভিযান হয়েছে সেগুলো হলো: টিলাগড় পয়েন্ট থেকে শিবগঞ্জ পয়েন্ট, উপশহরের বিভিন্ন ব্লক ঘুরে সোবহানীঘাট; বালুচর পয়েন্ট থেকে আরামবাগ, টিবি গেইট, শাহী ইদগাহ, সাপ্লাই দিয়ে আম্বরখানা পয়েন্ট; কাজিটুলা, উঁচাসড়ক থেকে চৌহাট্টা অভিমুখে; আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে দরগারোড, চৌহাট্টা দিয়ে সিলেট কেন্দ্রিয় শহিদ মিনার।
কাকতাড়ুয়ার দল এখন পর্যন্ত মোট ২৬২টি প্রতিষ্ঠানে বানান শুদ্ধির জন্য অনুরোধ করেছে। এর মধ্যে ১৮৯টি প্রতিষ্ঠানে বানান শুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। বাকিরা অচিরেই তাদের ভুল বানানগুলো শুদ্ধ করে নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। তারা বিভিন্ন ছাপাখানা ও আর্টিষ্ট প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধ করে বাংলা লেখার জন্য প্রচারনা চালিয়েছে।
কাকতাড়ুয়ার কথা: ‘ভুল’ শব্দটি লেখার সময়ই অনেকে ভুল করে লেখে ‘ভূল’। ভাষা শহিদদদের প্রতি সম্মান জানাতে যে প্রভাতফেরি হয়, সেখানে হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে রক্তলাল-অক্ষরে লিখে ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’ জানানো হয়। কিন্তু বেশির ভাগ সংগঠন, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির শ্রদ্ধা নিবেদনে সামান্য খাদ থেকে যায়; তারা লেখে ‘শ্রদ্ধাঞ্জলী’!
সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দোকানপাট, প্রতিষ্ঠান-ভবনের সাইনবোর্ডগুলোর দিকে তাকালেই বাংলা ভাষার করুণ অবস্থা বোঝা যায়। নগরের সাইনবোর্ড, দেয়াললিখনে একটু মনোযোগ দিলেই ভড়কে যেতে হয় হাজারো ভুল বানান দেখে। দেখা মেলে জ্বলজ্বল করছে ‘ষ্টোর্স’ (হবে স্টোর্স), (ঠিক বানানটা ব্র্যাকেটে দেওয়া হলো) ‘ষ্টোর’ (স্টোর), ‘এন্ড’ (অ্যান্ড), ‘ঘন্টা’ (ঘণ্টা), ‘ইনষ্টিটিউট’ (ইনস্টিটিউট), ‘ষ্ট্যান্ড’ (স্ট্যান্ড), ‘ফ্যাক্টরী’ (ফ্যাক্টরি), ‘ফার্ণিচার’ (ফার্নিচার), ‘মডার্ণ’ (মডার্ন), ‘রেষ্টুরেন্ট’ (রেস্টুরেন্ট), ‘কম্পানী’ (কম্পানি) ‘আইনজীবি’ (আইনজীবী), ‘বিরাণী’ (বিরানি), ‘কর্ণেল’ (কর্নেল), ‘ষ্ট্যাম্প’ (স্ট্যাম্প), ‘ফটোষ্ট্যাট’ (ফটোস্ট্যাট), ‘ভ্রাম্যমান’ (ভ্রাম্যমাণ), ‘ডায়াগনষ্টিক’, (ডায়াগনস্টিক) ‘ব্যাটারী’ (ব্যাটারি), ‘মেশিনারী’ (মেশিনারি) ইত্যাদি । ‘সরণি’কে ভুল বানানে লেখা হচ্ছে ‘স্মরণী’ বা ‘স্বরণী’। ‘গোল চত্বর’কে ভুল বানানে লেখা হচ্ছে ‘গোল চক্কর’। এতে ‘চত্বর’ আর ‘সরণি’র অর্থই পাল্টে যাচ্ছে। সাইনবোর্ডের অসংখ্য ভুল বানানের মধ্যে আছে ‘গর্ভণর’, ‘মডার্ণ’, ‘রেঁনেসা’, ‘রেজিষ্ট্রি’ ‘পঁচা’ (শুদ্ধ বানানগুলো হচ্ছে : গভর্নর, মডার্ন, রেনেসাঁ, রেজিস্ট্রি, পচা)।
শুধু সাইনবোর্ডের ভুলই নয়, রাজনীতিকদের বানানের ওপর ‘অগাধ জ্ঞান’ দেখে তো রীতিমতো ভিরমি খাওয়ার জোগাড়। দেয়ালে চোখ পড়লে প্রায়ই দেখা যায় ‘জাতীর পিতা’। শুদ্ধ বানানটি হচ্ছে ‘জাতির পিতা’। অনেক সময় ছাত্রসংগঠনগুলোকে অদ্ভুত ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। ব্যানারে কী ভয়াবহ বানান! প্রায়ই লেখা থাকে ‘দূরশ্বাষনের’, ‘বিরোদ্ধে’, ‘কণ্ঠ সুর’, ‘স্বইরাচারী’, ‘বিক্ষুভ’ ইত্যাদি ভুল। (সঠিকগুলো হবে- দুঃশাসন, বিরুদ্ধে, কণ্ঠস্বর, স্বৈরাচারী, বিক্ষোভ)। সরকারি-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর বানানের অবস্থাটা আরো করুণ। ‘সুপ্রীম কোর্ট’, ‘আপীল’. ‘রেজিষ্ট্রার’, ‘সরকারী’, ‘লিঁয়াজো’ ইত্যাদি (প্রমিত বানান হবে : সুপ্রিম কোর্ট, আপিল, রেজিস্ট্রার, সরকারি, লিয়াজোঁ) সরকারি প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো লেখা রয়েছে বর্জিত ‘সরকারী’ বানানটি। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে ঢুকতেই ভুল বানানটি শিখে ফেলে। নগরজুড়ে ‘দেয়াললিখে’ আহবান জানিয়েছেন ‘দেয়ালে পোষ্টার’ না লাগানোর জন্য। কিন্তু পোষ্টার বানানটি ভুল; সঠিকটি হবে পোস্টার। ফার্নিচার দোকানগুলোর নাম ‘ফার্ণিশার্স’ লেখা! এসব ভুল শব্দ প্রতিদিন দেখতে দেখতে একদিন আমরাও ভুলে যাই সঠিক শব্দটি।
কাকতাড়ুয়ার সভাপতি ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরিচালক খলিলুর রহমান ফয়সালের নেতৃত্বে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, এমসি কলেজ, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি, সিলেট সরকারী কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এ অভিযানে অংশ নেন। শনিবারে অভিযানে ছিলেন লুৎফুন্নাহার মাসুমা, মাহির চৌধুরী, পাপলু দে, বেলায়েত খান, তানজিলা জাফরিন তানভী, আমিনা আক্তার, নাহিদা আক্তার, আশরাফি আশা, নওরীন তন্বী, জাহিদ হাসান শুভ, নাইমা হক, জাস্টিন ফরহান তাসনিম, সাফওয়ান আহমেদ, দিপ্তী রায়, সেতু দাস প্রমুখ।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
Office : Central Market (1st floor),
Bandar Bazar (Court Point),
Sylhet – 3100, Bangladesh.
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D