২২শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:৫১ অপরাহ্ণ, জুন ২২, ২০১৮
কলকাতা : জন্মদাত্রী মায়ের অবস্থান বাঙালি সংস্কৃতিতে স্রষ্টার সম্মানের পরেই। মায়ের সন্তুষ্টিতে আল্লার সন্তুষ্টি আমরা সবাই জানি। আর সেই মা যদি হন অবহেলিত তখন তা সবার চোখ কপালে তুলবে এটাই স্বাভাবিক।
জামাইষষ্ঠীতে দাওয়াত খেতে বউকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যাবেন ছেলে। কিন্তু ঘরে রয়েছেন ৮০ বছরের মা শোভা রানী দাস। তাই মায়ের সামনে এক বোতল পানি আর চারখানা বিস্কুট রাখলেন।
এর পর বাইরে থেকে দরজায় তালা দিয়ে তারা চলে যান। এমনি ঘটনা ঘটেছে বেশি দূরে নয় প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে।
এ ঘটনায় টানা তিন দিন তালাবন্দি থেকে বিরক্ত অসহায় জননী শোভা রানী কান্নাকাটি শুরু করেন। সেই কান্না শুনে বুধবার (২০ জুন) রাতে প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করেছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার দমদমের বেদিয়াপাড়ায় এ ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, দক্ষিণ রবীন্দ্রনগরের ক্ষুদিরাম সরণিতে তিন কাঠা জমিতে বাড়ি ছিল শোভা রানী দাসের। ওই বাড়িটি ডেভেলপারকে দেয়ায় ছোট ছেলে ভবনাথ দাস ও বউমা শ্যামলী দাসের সঙ্গে বেদিয়াপাড়ার আর এন ঠাকুর রোডের একটি বাড়ির একতলায় ভাড়া থাকেন তিনি।
প্রতিবেশী এক মহিলা জানান, গত তিন দিন ধরে মাঝেমধ্যেই দরজা-জানালায় ধাক্কা মারার আওয়াজ পাচ্ছিলেন তারা। কিন্তু সেই আওয়াজ যে পাশের বাড়ির বৃদ্ধা করছেন, তা প্রথমে বুঝতে পারেননি কেউ।
কারণ বাড়ির সদর দরজায় বাইরে থেকে তালা ঝোলানো ছিল। শোভা রানী যাতে জানালা খুলতে না পারেন, তার জন্য ভেতরের একটি জানালা ছিটকিনির পাশাপাশি চেন-তালা দিয়ে লাগানো ছিল। আর একটি জানালা কাঠের বিম দিয়ে সিল করে দিয়েছিলেন পেশায় অটোচালক ভবনাথ।
এ পরিস্থিতিতে বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বৃদ্ধার কান্নার আওয়াজ শুনে বিচলিত হয়ে পড়েন প্রতিবেশীরা। চেন-তালা লাগানো জানালার পাল্লা কোনোমতে সরিয়ে ঘরের ভেতরে বৃদ্ধাকে তারা দেখতে পান। এর পর তারাই দরজার তালা ভেঙে শোভা রানীকে উদ্ধার করেন। রাত ১০টা নাগাদ দমদম পৌর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে।
বৃহস্পতিবার (২১ জুন) হাসপাতালের বিছানায় বসে বৃদ্ধা বলেন, যখন শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিল, ছেলেকে বললাম- চার দিন ধরে ভাত খাইনি, একটু ভাত দিয়ে যা। ভাত ছিল না। তখন বললাম একটু মুড়ি দিতে। চোখে তো দেখতে পাই না। একটু পরে বুঝলাম, মুড়িও নেই। শুধু এক বোতল জল আর চারটা বিস্কুট দিয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শিখা রায় বলেন, যাতে শৌচাগারে যেতে না হয়, তার জন্য সোম ও মঙ্গলবারের ওই অস্বাভাবিক গরমেও মাত্র এক বোতল জল দিয়ে গিয়েছিল। নিজের মায়ের সঙ্গে কেউ এমন ব্যবহারও করতে পারে!
স্থানীয় বাসিন্দাদের রোষের মুখে ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন ভবনাথ ও তার স্ত্রী। তারা শোভা রানীর প্রতি অবহেলার জন্য নিজেদের অভাবের কথা বলেছেন।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, তিন কাঠা জমির ওপরে প্রোমোটিং হচ্ছে। তাই টাকার অভাব হওয়ার কথা নয়। এ বিষয়ে শোভা রানীর দুই ছেলে মায়ের দায়িত্বের ভার একে অপরের দিকে ঠেলেছেন।
ছোট ছেলের যুক্তি, পাঁচতলা বাড়ি উঠলেও তারা মাকে তার ভাগের টাকা দেননি। কারণ মায়ের দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে। তার দাবি, বাড়ির প্রোমোটিং সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় দেখছেন বড় ভাই জগন্নাথ দাস।
জগন্নাথের বক্তব্য, মায়ের দায়িত্ব নেবে বলেই তো ভাই তার ভাগে ১০০ বর্গফুট জায়গা বেশি পেয়েছে। আমি বাবার চিকিৎসা ও দেখাশোনার ভার নিয়েছিলাম।
তার অভিযোগ, মায়ের খোঁজ নিতে গেলে ভবনাথের স্ত্রী তার সঙ্গে দেখা করতে দিতেন না। উল্টো মাকে দেখতে যাওয়ার জন্য অশান্তি শুরু হয়ে যেত।
দুই ছেলে যখন মায়ের দায়িত্ব কার বেশি, তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত, তখন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মা বলছেন- আমার ছেলের কোনো দোষ নেই। ভালোই যত্নআত্তি করে!
সূত্র : আনন্দবাজার
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D