২রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:০৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৩, ২০১৯
দায়িত্ব বুঝে নেয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর।তিনি জানিয়েছেন ২৮ বছরের অচলায়তন ভেঙে যে ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয়েছে তাতে শিক্ষার্থীরা তাকে ভোট দিয়ে ভিপি নির্বাচিত করেছেন। তিনি অবশ্যই শিক্ষার্থীদের রায়ের প্রতি সম্মান রেখে শপথ নেবেন।এও জানিয়েছেন যে, ডাকসুতে পুনর্নির্বাচনের দাবির সঙ্গে তিনি একমত।পুন:তফসিল দাবিতে যে আন্দোলন তার সঙ্গে তিনি আছেন।ভিপির দায়িত্ব নিয়েই তিনি এ আন্দোলন বেগবান করতে চান।
শপথ নেয়ার বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, যেহেতু নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়েছি, প্রশ্নবিদ্ধ প্রক্রিয়ার নির্বাচন হোক আর যাই হোক শপথ নিলে ছাত্রদের অধিকার নিয়ে বেশি কথা বলা যাবে, কাজ করা যাবে। ভিপির দায়িত্ব নিয়ে ছাত্রসংসদ থেকে আন্দোলন সংগ্রাম জোরদার করা যাবে। কিন্তু আমি যদি দায়িত্বই না নিই। তাহলে তো আমি ছাত্রসমাজের প্রতিনিধিই না। সেটা খুব বেশি যৌক্তিক হবে না।আন্দোলনেও সাড়া মিলবে না।
ভোটের দিন নির্বাচন বর্জন করার পর রাতের ফল ঘোষণার পর নুর শুনতে পান তিনি জয়ী হয়েছেন। ভোট বর্জন করায় শিক্ষার্থীরা যাকে এত আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নেতা নির্বাচিত করলেন, তিনি শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব নেবেন কিনা সেটি নিয়ে দেখা দিয়েছিল অনিশ্চয়তা।
শপথ নেবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল হক নুর সোমবার রাতে জানিয়েছিলেন, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বাদে বাকি সব সংগঠন এই নির্বাচন বর্জন করেছে। তাই তাদের সঙ্গে কথা বলেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।তার এই কথায় নুরের সমর্থকদের অপেক্ষা বাড়ে।
অবশেষে মঙ্গলবার রাতে তিনি স্পষ্ট করেন যে, তিনি শপথ নিচ্ছেন।তবে মঙ্গলবার গণমাধ্যমের সঙ্গে নুরের কথায় দেখা দিয়েছে কিছু বিতর্ক।একবার বলেছেন ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক পদ ছাড়া বাকি ২৩পদে তিনি পুনঃনির্বাচন চান। পরে আবার বলেছেন সব পদেই পুন:ভোট চান তিনি।দুপুরে একবার পুনঃতফসিল দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।পরে বিকালে ছাত্রলীগ সভাপতি শোভনের সঙ্গে কোলাকুলির পর কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন।রাতে আবার জানান, ডাকসুতে পুনঃনির্বাচন দাবিতে ভিসির কাছে ছাত্রলীগ ছাড়া বাদবাকি ৫ প্যানেল যে স্মারকলিপি দেবে তাতে তিনি থাকবেন।
সোমবার গভীর রাতে ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) পদে বিজয়ী হিসেবে নুরুল হকের নাম ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এতে দেখা যায় দুটি পদ ছাড়া সব পদে জয় পায় ছাত্রলীগ সমর্থিত প্যানেল।ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে জয় পায় কোটা সংস্কার দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এই পরিষদের নুরুল হক নুর ভিপি পদে ১৯৩৩ ভোটের ব্যবধানে হারান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভনকে। ডাকসু নির্বাচনে নুরের প্রাপ্ত ভোট ছিল ১১ হাজার ৬২টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন পান ৯ হাজার ১২৯ ভোট।
এই ফল ঘোষণার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। নুরুলকে তাঁরা ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি তোলেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে ভিসির বাসভবনে সামনে অবস্থান নিয়ে নুরকে বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন ছাত্রলীগ। দুপুরে ক্যাম্পাসে এলে নুরুলকে ধাওয়াও দেয়া হয়। এরপর হঠাৎ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী এসে নুরুল হককে বুকে জড়িয়ে ধরলে পাল্টে যায় পরিস্থিতি।
নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক তখন বলেন, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের যে ঘোষণা দিয়েছিলাম, তা থেকে আমরা সরে এসেছি। কিন্তু ভোট বর্জনকারী অন্যান্য সংগঠন তাঁর এ ঘোষণা মেনে নেয়নি। তোপের মুখে পড়েন নুরুল হক। রাতে নুরুল হক জানান কর্মসূচি স্থগিত করেননি।
এসব বিষয়ে নানা বিতর্কের মুখে পড়েন নুরুল হক। পরে রাতে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বিভ্রান্তি দূর করার চেষ্টা করেন।
ভিপি হিসেবে শপথ নেবেন কিনা এমন প্রশ্নে নুর বলেন, ‘অবশ্যই আমি আমার দায়িত্ব নেব।’ তাহলে পুনর্নিবাচনের দাবির বিষয়ে অবস্থান কি? এর জবাবে তিনি মঙ্গলবার রাতে বলেন, ‘আমি ডাকসুর পক্ষ থেকে ছাত্র–ছাত্রীদের দাবি দাওয়া আদায় করার জন্য আমার যে লড়াই সংগ্রাম করা দরকার সেটা আমি করব। আমি আমার পদ থেকে তাদের সঙ্গে মাঠে থাকব। প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে রাজপথে থাকব। কারণ তারা যে দাবিটা করছে তা আমি যৌক্তিক মনে করি।’
প্রথমে দুই পদ ছাড়া অন্য পদে নির্বাচন চেয়েছেন আবার পরে বলছেন সব পদে পুনর্নিবাচন চান বিষয়টি বিভ্রান্তিমূলক কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল হক বলেন, ‘ছাত্রলীগ রাতে জাল ভোট মেরে ব্যালট বাক্সে ভরে রেখেছে। কারচুপির নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক এই দুটি পদে এত ভোট পড়েছে যে তারা কারচুপি করেও ব্যালেন্স করতে পারে নাই। সে জায়গা থেকে আমরা মনে করি ছাত্রদের ম্যান্ডেটে নৈতিক জায়গা থেকে আমরা বিজয়ী হয়েছি। কিন্তু অন্য পদগুলোতে যারা বিজয়ী হয়েছে তারা জোর করে ব্যালট বাক্সে ব্যালট ঢুকিয়ে বা কারচুপি করে হয়েছে।কারচুপি না হলে অন্যপদগুলোতেও সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জয়ী হত। এজন্য আমরা বলেছি অন্তত এ দুটি পদের বাইরে বাকি ২৩ টি পদে পুনর্নিবাচনের দরকার।
তাহলে পরে আবার সব পদে নির্বাচনের কথা কেন বললেন-এমন প্রশ্নের জবাবে নূর বলেন, কিন্তু শিক্ষার্থীরা যেহেতু বলছে পুরো নির্বাচনটাই আবার হওয়া দরকার সেক্ষেত্রে আমি বলেছি হ্যা সেক্ষেত্রে আমার পদেও আবার পুনর্নিবাচন হওয়া দরকার। পুননির্বাচনের দাবির সঙ্গে আমি আছি। সেই আন্দোলনেও তাদের সঙ্গে আমি রাজপথে থাকব। আমি যেহেতু ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছি এবং এই পদে থেকেই আমি এই আন্দোলনে তাদের সঙ্গে থাকব।
ভিপি পদে শপথ নিতে বা না নিয়ে কেউ চাপ দিয়েছে কিনা এ বিষয়ে নুর বলেন, না কোনো চাপ নাই।আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নে নবনির্বাচন ভিপি বলেন, ‘এই পরিষদই মূল। ওদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ওদের পরামর্শ অনুযায়ীই সিদ্ধান্ত।
যাদের সঙ্গে এক হয়ে ভোট বর্জন করেছিলেন তারা কি চায় ভিপি হিসেবে যোগ দেন? উত্তরে নুরুল হক বলেন, ভোট বর্জনকারী অন্যান্য সংগঠনের অবস্থান ছিলো আমি দায়িত্ব না নিই। সেক্ষেত্রে কি নিজেদের ঐক্যে ভাঙন দেখা দিল কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না ভঙন হবে না আশা করি।’ কারণ ডাকসুর পুননির্বাচন দাবি আদায়ে তারা বুধবার উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেবে। সেখানে আমিও থাকব তাদের সঙ্গে।
কৌশলগত কারণে অনেক কিছু প্রকাশ করা যাচ্ছে না জানিয়ে নুর বলেন, কৌশলগত কারণে অনেক কিছু অপ্রকাশ্যে থাকে। অনেক কিছু প্রকাশ্যে বলা যায় না। আমি বরাবরই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের সঙ্গি ছিলাম, আছি, থাকব। আর ডাকসুর পুনর্নিবচানের যারা দাবি করছে আমি মনে করি তাদের দাবি একশ পারসেন্ট যৌক্তিক। তাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষন করে আন্দোলন চালিয়ে যাবো। ভিপি পদে দায়িত্ব নিয়েই আমি সবকিছু করবো।
ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত নুরুল হক নুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক। তার বাড়ি পটুয়াখালীতে। এর আগে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে হামলা, মামলা ও কারাবরণের মুখোমুখি হন।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D