এরদোগানের ডাকে যেভাবে ব্যর্থ হলো তুরস্কের অভ্যুত্থান

প্রকাশিত: ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৭, ২০১৬

Manual5 Ad Code

শুক্রবার রাতে যখন প্রথম তুরস্কে অভ্যুত্থানের খবর ছড়িয়ে পড়ে, তখন কয়েক ঘণ্টা ধরে দেশটির নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহী সেনাদের হাতে বলেই মনে হচ্ছিল।

রাজধানী আঙ্কারা আর সবচেয়ে বড় নগরী ইস্তাম্বুলের প্রধান স্থাপনাগুলোতে ছিল তাদের দৃশ্যমান উপস্থিতি। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দখল করে নেয় সেনাবাহিনী এবং তাদের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়া হয়।

এত ঘটনার মধ্যে কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের।

অভ্যুত্থানকারীদের সেই মুহূর্তে দরকার ছিল সেনাবাহিনীর বেশিরভাগ অংশের এবং জনগণের সমর্থন।

কিন্তু অভ্যুত্থানের চেষ্টা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেখা গেল প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলডিরিম তা প্রতিরোধের চেষ্টা শুরু করেছেন।

তবে তুরস্কের বেশিরভাগ মানুষ জানে, প্রকৃত ক্ষমতা আসলে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের হাতে, এবং কিছু করতে হলে তাকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।

অভ্যুত্থান সফল হতে হলে প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে পুরো রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা সফল হয়নি।

Manual3 Ad Code

যেভাবে পরিস্থিতি পাল্টে গেল

শুরুতে বোঝা যাচ্ছিল না প্রেসিডেন্ট এরদোগান কোথায় আছেন। কোনো কোনো খবরে বলা হচ্ছিল তিনি তুরস্কের একেবারে দক্ষিণ-পশ্চিমে এজিয়ান সাগর তীরের অবকাশ কেন্দ্র মারমারিসে আছেন।

কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে দেখা গেল সিএনএন এর তুর্কী ভাষার নিউজ চ্যানেলে। মোবাইল ফোনে ভিডিও সাক্ষাৎকারে তিনি জনগণকে রাস্তায় নেমে অভ্যুত্থান প্রতিহত করার ডাক দিলেন।

প্রেসিডেন্ট এরদোগান যখন ইস্তাম্বুলের কামাল আতাতুর্ক বিমানবন্দরে এসে নামেন, হাওয়া পুরো ঘুরে গেলো।

                   ভিডিও কল: সবাইকে রাস্তায় নামার ডাক দেন এরদোগান

সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি কড়া ভাষায় অভ্যুত্থানকারীদের দেখে নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিলেন, বললেন, তুরস্কের নিয়ন্ত্রণ তার হাতেই।

Manual6 Ad Code

অনেকের কাছেই পরিস্কার হয়ে গেল যে, অভ্যুত্থানকারীরা ব্যর্থ হয়েছে, সিনিয়র সেনা অধিনায়করা সরকারের পক্ষেই আছে।

আঙ্কারার নিয়ন্ত্রণ তখনো অভ্যুত্থানকারীদের হাতে। কিন্তু ইস্তাম্বুল তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে।

Manual4 Ad Code

প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মানুষ তখন ইস্তাম্বুল আর আঙ্কারার রাস্তায় নেমে এসেছে। বিমানবন্দরে যে সেনারা অবস্থান নিয়েছিল, তাদের ঘেরাও করে জনতা, পুরো বিমানবন্দর দখল করে নেয় তারা।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন টিআরটি থেকে অভ্যুত্থানকারীরা বেশ কিছু ঘোষণা প্রচার করেছিল। তারা কারফিউ জারি করেছিল। কিন্তু সেটি কার্যকর করতে তারা ব্যর্থ হয়।

অভ্যুত্থানকারীদের নিয়ন্ত্রণ ক্রমশ শিথিল হতে থাকে।

কোনো কোনো খবরে বলা হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট এরদোগান যে হোটেলে ছিলেন সেখানে বোমা হামলা চালানো হয়েছিল। কিন্তু ততক্ষণে তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে যান। ফলে সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান।

                             বিমানবন্দরে এরদোগান

অভ্যুত্থানের পক্ষে সমর্থন

অভ্যুত্থান সফল হওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক সমর্থনের দরকার ছিল। কয়েকটি বড় শহরে হয়তো অনেক সেনা সদস্য এই অভ্যুত্থানের সঙ্গে ছিল।

অভ্যুত্থানকারীরা রাস্তায় অনেক ট্যাংক নামাতে পেরেছিল। তারা ইস্তাম্বুলের বসফোরাস প্রণালীর ওপরের ব্রীজ বন্ধ করে দিতে পেরেছিল।

কিন্তু সেনাপ্রধান জেনারেল গুল হুলুসি আকার এই অভ্যুত্থানের সঙ্গে ছিলেন না। সবচেয়ে বড় নগরী ইস্তাম্বুলে ছিল যে সেনা ডিভিশন, তার অধিনায়কও এই অভ্যুত্থান সমর্থন করেননি। নৌবাহিনী প্রধান এবং বিশেষ বাহিনীর প্রধানও অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করেন। এফ-সিক্সটিন জঙ্গি বিমান থেকে অভ্যুত্থানকারীদের অবস্থানে বিমান হামলাও চালানো হয়।

যুক্তরাজ্যের একটি থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউজের ফাদি হাকুরা বলেন, এই অভ্যুত্থান আসলে শুরু হওয়ার আগেই ব্যর্থ হয়। এদের পেছনে না ছিল রাজনৈতিক সমর্থন, না ছিল জনগণের সমর্থন।

তুরস্কের প্রধান দলগুলো শুরুতেই জানিয়ে দেয়া তারা এর সঙ্গে নেই। ধর্মনিরপেক্ষ সিএইচপি, জাতীয়তাবাদী দল এমএইচপি সবাই সরকারকে সমর্থন জানায়।

অভ্যুত্থানের পেছনে কারা

বলা হচ্ছে, সেনাবাহিনীর একটি অংশ এই অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করে। ইস্তাম্বুলেই মূলত তাদের ঘাঁটি।

ফাদি হাকুরা মনে করেন, এরা সেনাবাহিনীর বিরাট অংশের প্রতিনিধিত্ব করে না। তাদের ব্যর্থতা এটাও প্রমাণ করে যে তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থানের পক্ষে আর সমাজের বেশিরভাগ অংশের কোনো সমর্থন নেই।

এরদোগান এর আগে বহুবার সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তার সরকার সেনাবাহিনীর মধ্যে অনেক শুদ্ধি অভিযানও চালিয়েছে।

অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত বলে যার দিকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে, তিনি হচ্ছে ফেতুল্লা গুলেন।

Manual8 Ad Code

                               ফেতুল্লা গুলেন

কে এই ফেতুল্লা গুলেন

প্রেসিডেন্ট এরদোগানের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র ফেতুল্লা গুলেন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। তিনি একজন ধর্মীয় নেতা। তার হিজমেত আন্দোলনের বিরাট সমর্থন আছে তুরস্কে। এরা নানা ধরণের স্কুল, কলেজ, এনজিও এবং ব্যবসা পরিচালনা করে। তাদের আছে অনেক মিডিয়া প্রতিষ্ঠান।

কিন্তু ফেতুল্লা গুলেনের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে কয়েক বছর আগে। প্রেসিডেন্ট এরদোগান কঠোর সব ব্যবস্থা নেন হিজমেত আন্দোলনের বিরুদ্ধে।

অভ্যুত্থানের পেছনে এদের হাত আছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান এবং তার দলের নেতারা। তবে ফেতুল্লা গুলেন জোর গলায় তা অস্বীকার করেছেন।

সবাইকে রাস্তায় থাকার আহ্বান এরদোগানের

নিজ দলের সমর্থকদের রাস্তায় থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। যেকোনো সময় আবার এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।

এএফপির খবরে জানানো হয়, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় এরদোয়ান বলেন, ‘সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন, আমাদের সারা রাত রাস্তায় থাকতে হবে। কারণ, যেকোনো মুহূর্তে আবার নতুন করে এ ধরনের ঘটতে পারে।’

সূত্র: বিবিসি

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code