বাংলাদেশ-ইন্দোনেশিয়া বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

প্রকাশিত: ১:০৩ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৭, ২০১৬

মাঈনুল ইসলাম নাসিম : ২৬ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার সাথে ১৬ কোটি জনগনের দেশ বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ঐতিহাসিক ভিত্তির উপর সুপ্রতিষ্ঠিত বলে জানিয়েছেন জাকার্তায় দায়িত্বরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাজমুল কাওনাইন। যুগ যুগ ধরে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দু’দেশের সরকার ও জনগনের মাঝে, যা দিনে দিনে আরো সুদৃঢ় ও সুসংহত হচ্ছে। উভয় দেশের তরফ থেকেই উচ্চ পর্যায়ের সরকারী সফর বিনিময়ের পাশাপাশি শীর্ষ ব্যবসায়ীদের নিয়মিত যাতায়াত এবং ‘পিপল টু পিপল’ যোগাযোগ সাম্প্রতিককালে আশাব্যঞ্জক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, একান্ত আলাপচারিতায় সম্প্রতি এমন সুসংবাদই দিলেন রাষ্ট্রদূত। সাগরবক্ষে দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাপুয়া নিউগিনি এবং পূর্ব তিমুরেরও দায়িত্বে আছেন তিনি জাকার্তা থেকে।
 
পেশাদার কূটনীতিক নাজমুল কাওনাইন বলেন, “বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে সত্যিকার অর্থেই চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম যে ক’টি রাষ্ট্র বাংলাদেশকে সার্বভৌম ও স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, ইন্দোনেশিয়া তার মধ্যে অন্যতম। ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি জাতির জনকের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরপরই ইন্দোনেশিয়া কর্তৃক ঐ স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি ইন্দোনেশিয়ার জনগনের গভীর শ্রদ্ধা প্রতিফলিত হয়েছিল। বানদুং সম্মেলন তখন সহায়ক ভূমিকা পালন করে স্বাধীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নে, যার মূল ভিত্তি ছিলো সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরীতা নয়”।
 
রাষ্ট্রদূত জানান, “৭২ সালের ঐ মাসেই জাকার্তায় বাংলাদেশ দূতাবাস স্থাপনের নির্দেশনা প্রদান করেন বঙ্গবন্ধু। একই বছর ইন্দোনেশিয়াও ঢাকায় তাদের দূতাবাস প্রতিষ্ঠা করে। ঐতিহাসিকভাবে দুই দেশেরই ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে থাকার অভিজ্ঞতার পাশাপাশি যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়েছিল। ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতার মহানায়ক সুকর্ন যেমন এখানকার জাতির জনক, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালী জাতির জনক। স্বাধীনতার জন্য এবং জনগনের আর্থ-সামাজিক মুক্তির জন্য দুই নেতারই ভিশন ছিলো এক ও অভিন্ন। ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশ বিশ্বের দুই বৃহৎ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে যার যার দেশে ইসলামী মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি নিশ্চিত করেছে। উভয় দেশে সব ধর্মের অনুসারীরা শান্তিতে বসবাস করার পাশাপাশি স্বাধীনভাবে যার যার ধর্ম পালন করে আসছে”।
 
রাষ্ট্রদূত নাজমুল কাওনাইন বলেন, “ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশ দু’টি দেশেই দীর্ঘসময় সামরিক ও স্বৈরশাসন থাকায় গনতন্ত্র মজবুত করা, দুর্নীতি দমন, সুশাসন নিশ্চিতকরণ, উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন এবং জনগনের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতির জন্য উভয় দেশকেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। পরিবেশ, উন্নয়ন ও বিশ্ববানিজ্য সংক্রান্ত আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশের রয়েছে অভিন্ন মত ও দৃষ্টিভঙ্গি। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম) এবং ওআইসি’র আদর্শে অবিচল থেকে বিশ্বময় শান্তি, উন্নয়ন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় উভয় দেশই জাতিসংঘ চার্টারের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া হচ্ছে এমন দুই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ যাদের রয়েছে ইসলামের ব্যাপারে একই দৃষ্টিভঙ্গি। উভয় দেশই যে কোন প্রকার চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদকে প্রত্যাক্ষান করে। উপরোক্ত সব প্রেক্ষাপটেই উভয় দেশের মধ্যে স্বাভাবিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান”।
 
রাষ্ট্রদূত আরো জানান, “৬০তম এশিয়ান-আফ্রিকান সম্মেলনে উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২১-২৩ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়া সফর করেন এবংএই সফরকালে এখানকার মহামান্য রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদো’র সাথে জাকার্তা কনভেনশন সেন্টারে প্রথমবারের মতো দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন তিনি। এর আগে ২০১১ সালেও জাকার্তা সফর করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তৎকালীণ ইন্দোনেশিয়ান প্রেসিডেন্ট সুসিলো বামবাং ইয়ূধোইয়োনো’র সাথে তখন বৈঠক হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার”। ইন্দোনেশিয়া-বাংলাদেশ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বানিজ্যের অতীব গুরুত্বপূর্ণ নানান বিষয়াদি নিয়েও বিস্তারিত কথা বলেছেন রাষ্ট্রদূত নাজমুল কাওনাইন।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট