১৪ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:৩১ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৯, ২০১৬
আমেরিকায় ২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দুই পদপ্রার্থীর মধ্যে যে তিক্ত লড়াই চলেছে দীর্ঘ প্রচারণা পর্বে, তার শেষ পর্বে ভোটাররা এখন কোন প্রার্থীকে জয়যুক্ত করবে এখন সবার চোখ সেই দিকে।
বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে হিলারি ক্লিন্টন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে নীতির বেশ কিছু পার্থক্য থাকলেও এবারের লড়াই ছিল মূলত দুই ব্যক্তিত্বের লড়াই।
আমেরিকান ভোটারদের সামনে ব্যক্তি হিসাবে কীধরনের অভিজ্ঞতা নিয়ে আসছেন দুই প্রার্থী?
হিলারি ক্লিন্টন: ডেমোক্রাট প্রার্থী
আমেরিকার রাজনীতিতে হিলারি ক্লিন্টনের বেশ অনেকগুলো পদে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফার্স্ট লেডি, সেনেটার, এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এবার দ্বিতীয়বারের মত তিনি তার দীর্ঘদিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হবার লড়াইয়ে নেমেছেন। ২০০৮ সালে প্রথমবার ওবামার কাছে প্রাইমারি পর্যায়ে তিনি শোচনীয়ভাবে হেরে যান।
ডেমোক্রাট প্রার্থী ৬৮ বছর বয়স্ক হিলারি ২০০৯ সালে বারাক ওবামা প্রশাসনের শুরু থেকেই তার পররাষ্ট্র মন্ত্রী পদে কাজ করেছেন। বারাক ওবামা পুর্ননির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পরে হিলারি এই পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন তার এই রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা দেশটির শীর্ষ পদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়ক হবে।
হিলারি ডায়ান রডহ্যামের জন্ম শিকাগোয় ১৯৪৭ সালের অক্টোবর মাসে। ষাটের দশকে তিনি ম্যাসাচুসেটসের ওয়েলেসলি কলেজে পড়াশোনা করেন এবং সেসময়ই ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।
পরবর্তীতে পড়তে যান ইয়েল ল’ স্কুলে। সেখানেই তার সঙ্গে পরিচয় বিল ক্লিন্টনের। তাদের বিয়ে হয় ১৯৭৫ সালে। ১৯৭৮ সালে ক্লিন্টন আরকানসের গর্ভনর হবার পর তিনি রাজনীতিতে তার সক্রিয় ভূমিকা অব্যাহত রাখেন।
ফার্স্ট লেডি হিসাবে মিসেস ক্লিন্টন নারী অধিকার এবং সকলের জন্য স্বাস্থ্যসেবার পক্ষে সোচ্চার হয়ে ওঠার মাধ্যমে দেশের ভেতরে ও বাইরে তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন।
উনিশশ’ নব্বইয়ের মাঝামাঝি থেকে এবং বিল ক্লিন্টনের দ্বিতীয় মেয়াদের পুরো সময়টা জুড়ে ক্লিন্টনের প্রেসিডেন্ট কালের নানা কেলেংকারির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন হিলারিও।
হোয়াইটওয়াটার নামে অসফল এক ভবন ব্যবসা প্রকল্প নিয়ে কংগ্রেসে যে শুনানি ও তদন্ত হয় সেই তদন্তের অংশ ছিলেন ক্লিন্টন দম্পতিও। যদিও এই তদন্তে দুজনেই খালাস পেয়ে যান।
হোয়াইট হাউসের ইনটার্ন মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে বিল ক্লিন্টনের প্রেমের ঘটনা ১৯৯৮ সালে জানাজানি হবার সময়ও হিলারি ক্লিন্টন গণমাধ্যমে আলোচিত ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন।
ক্লিন্টনের প্রেসিডেন্টকালের মেয়াদের প্রায় শেষ দিকে, ২০০০ সালে হিলারি নিউ ইয়র্ক স্টেটের মেয়রের পদে দাঁড়িয়ে জয়ী হন। ২০০৬ সালে সেনেটার হিসাবে তিনি আবার নির্বাচিত হন খুব সহজেই।
প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রাটিক পার্টির মনোনয়ন তিনি চেয়েছিলেন ২০০৮ সালে। কিন্তু তার সমালোচকরা- এমনকী তার নিজের দলের মধ্যেও- মনে করেছিলেন তিনি বিভক্তির রাজনীতি করেন এবং অনেক আমেরিকান কখনই তাকে ভোট দেবে না।
শেষ পর্যন্ত বারাক ওবামা দলের মনোনয়ন পান এবং সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করেন।
হিলারিকে তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেন বারাক ওবামা। মিসেস ক্লিন্টন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে তার চার বছর মেয়াদকালে ১১২টি দেশ সফর করেছেন, যা নজিরবিহীন।
২০১১ সালে লিবিয়ায় সামরিক আক্রমণে নেতৃত্ব দেন তিনি এবং সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে বেনগাজিতে কূটনৈতিক ভবন প্রাঙ্গণে হামলার পর পররাষ্ট্র বিভাগ ক্রমাগত সমালোচনার মুখে পড়লে কংগ্রেসের শুনানিতে মিসেস ক্লিন্টন দূতাবাস চত্বরে হামলার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যর্থতার দায় গ্রহণ করেন।
মিসেস ক্লিন্টন প্রেসিডেন্ট পদে দ্বিতীয়বারের জন্য তার মনোনয়ন ঘোষণা করার মাত্র কয়েকদিন আগে অভিযোগ ওঠে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন সম্ভাব্য স্পর্শকাতর তথ্য সহ অন্যান্য সরকারি বিষয় নিয়ে ব্যক্তিগত ইমেল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে সম্ভবত কেন্দ্রীয় বিধি ভঙ্গ করেছেন।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই জানায় তারা মিসেস ক্লিন্টনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনার সুপারিশ করছে না। তবে তারা বলে তিনি এবং তার কর্মচারীরা খুবই স্পর্শকাতর এবং খুবই গোপনীয় তথ্য আদানপ্রদানের ব্যাপারে চরম অবহেলা দেখিয়েছেন।
মিসেস ক্লিন্টনের প্রাইমারি এবং মূল পর্যায়ের প্রচারণায় বারবার উঠে এসেছে এই ইমেল বিতর্ক।
ভারমন্ট-এর সেনেটার বার্নি স্যান্ডারস্ প্রাইমারি পর্যায়ে হিলারির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন, যা অনেকেই প্রত্যাশা করেনি। তবে দক্ষিণে ভাল ফল দেখিয়ে হিলারি শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত মনোনয়নের দৌড়ে বিজয়ী হন।
আমেরিকার বড় কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে তিনিই প্রথম মনোনীত মহিলা প্রার্থী।
ডোনাল্ড ট্রাম্প: রিপাব্লিকান প্রার্থী
ব্যবসা থেকে রাজনীতিতে এসেছেন বর্ণাঢ্য চরিত্রের বিশিষ্ট ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এই লড়াইয়ে তিনি যে এতদূর পর্যন্ত পৌঁছতে পারবেন, প্রথমে অনেকেই তা ভাবেন নি।
অভিবাসন নিয়ে তার বিতর্কিত অবস্থান, তার প্রচারণার আক্রমণাত্মক ধরন এবং তার অতীত তারকাখ্যাতি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য দৌড়ে তাকে কতটা সাহায্য করবে তা নিয়ে মানুষের মনে সংশয় ছিল।
কিন্তু রিপাব্লিকান পার্টির প্রাইমারি পর্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অন্যান্য সব ঝানু রাজনীতিকদের পেছনে ফেলে এবং সব পূর্বাভাস মিথ্যা প্রমাণ করে ৭০ বছরের এই ব্যবসায়ীই শেষ পর্যন্ত দলের মনোনয়ন পেয়ে এই দৌড়ে টিঁকে থেকেছেন।
বারাক ওবামার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার বৈধতা নিয়ে প্রচারণা পর্বের গোড়ার দিকে বারবার প্রশ্ন তুলে ট্রাম্প নানা মহলের বিরাগভাজন হয়েছিলেন।
২০০৮ সালের পর থেকে তিনি একটি আন্দোলন শুরু করেন যার মূল বিষয় ছিল বারাক ওবামার জন্ম আমেরিকায় কীনা এবং ফলে দেশটির প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্মগত অধিকার তার আছে কীনা।
পরে অবশ্য এই আন্দোলন থিতিয়ে পড়ে যখন প্রমাণিত হয় যে বারাক ওবামার জন্ম আমেরিকার হাওয়াইয়ে। ট্রাম্পও বিষয়টা মেনে নিয়েছিলেন- কিন্তু স্বভাবসুলভভাবে কখনই তিনি এই আন্দোলনের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন নি।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়ানোর জন্য প্রথম আগ্রহ প্রকাশ করেন ১৯৮৭ সালে। এমনকী রিফর্ম পার্টির প্রার্থী হিসাবে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতাও নেমেছিলেন ২০০০ সালে।
২০১৬-র নির্বাচনের জন্য ট্রাম্প ২০১৫ সালের জুন মাসে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে জানান প্রেসিডেন্ট পদের জন্য মনোনয়ন পাবার লড়াইয়ে নামছেন তিনি।
‘মেক অ্যামেরিকা গ্রেট এগেইন’ ‘আমেরিকাকে আবার মহান করুন’ এই শ্লোগান দিয়ে তিনি প্রচারে নামেন। তার প্রচারে আমেরিকার অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি যেমন তিনি দিয়েছেন, তেমনি পাশাপাশি মেক্সিকো আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দেওয়াল তুলে এবং মুসলমানদের অভিবাসন সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন ট্রাম্প।
তার প্রচারণা সভায় ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে। তার পরেও তার রিপাব্লিকান প্রতিদ্বন্দ্বী টেড ক্রুজ ও মার্কো রুবিওকে হারিয়ে শেষ পর্যন্ত রিপাব্লিকান দলের মনোনয়ন পেয়েছেন আমেরিকার বিশিষ্ট ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ধনপতি ট্রাম্প
নিউ ইর্য়কের ধনী সম্পত্তি ব্যবসায়ী ফ্রেড ট্রাম্পের চতুর্থ সন্তান ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য কিশোর বয়সে পাঠিয়ে পড়তে দেওয়া হয়েছিল সামরিক অ্যাকাডেমিতে।
তিনি পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোর্য়াটন স্কুলে লেখাপড়া করেন এবং বড় ভাই ফ্রেড পাইলট হবার সিদ্ধান্ত নিলে বাবা তাকেই ব্যবসায়ে তার উত্তরসূরি নির্বাচন করেন।
প্রথম দিকে বাবাকে বিপুল পরিমাণ আবাসিক সম্পত্তি দেখাশোনার কাজে সহায়তা করলেও ক্রমে তিনি বাবার ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেন এবং ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠানের নাম দেন ‘ট্রাম্প অর্গানাইজেশন’।
১৯৯৯ সালে বাবার মৃত্যুর পর ব্রুকলিন আর কুইন্স এলাকার আবাসিক ভবন কেনাবেচার পারিবারিক ব্যবসাকে তিনি নিয়ে যান অন্য মাত্রায়। ম্যানহাটানের অভিজাত এলাকায় বিভিন্ন ভবন প্রকল্প গড়ে তোলেন তিনি।
নিউ ইয়র্কের প্রাণকেন্দ্রে সুউচ্চ আধুনিক হোটেল, ট্রাম্প টাওয়ার নামে চোখধাঁধাঁনো ৬৮তলা ভবন ছাড়াও নিজের নাম দিয়ে আরো বহু সুপরিচিত ভবন তিনি গড়ে তোলেন তিনি। অসংখ্য হোটেল ও জুয়াখেলার ক্যাসিনোও রয়েছে তার আবাসিক প্রকল্পের মধ্যে।
বিনোদন ব্যবসায়ও তিনি নিজস্ব রাজত্ব গড়ে তোলেন। ১৯৯৬ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত মিস ইউনিভার্স, মিস ইউএসএ সহ বিভিন্ন সুন্দরী প্রতিযোগিতার মালিক ছিলেন তিনি। ২০০৩ সালে এনবিসি টেলিভিশনে তিনি চালু করেন দারুণ জনপ্রিয় রিয়ালিটি শো ‘অ্যাপ্রেনটিস্’।
১৪টি মরশুম ধরে চলা এই শোর টেলিভিশন নেটওয়ার্ক তাকে দিয়েছিল ২১ কোটি ৩০লক্ষ ডলার।
ফবর্স-এর তৈরি ধনীদের তালিকা অনুযায়ী ট্রাম্পের সম্পদের পরিমাণ ৩৭০কোটি ডলার। যদিও ট্রাম্প অনেকবার জোর দিয়ে বলেছেন তার সম্পদের পরিমাণ আসলে এক হাজার কোটি ডলার।
পরিবার
ট্রাম্প বিয়ে করেছেন তিনবার। এদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত ছিলেন তার প্রথম স্ত্রী- ইভানা জেলনিকোভা- চেক অ্যাথলেট এবং মডেল। ১৯৯৩ সালে তিনি মারলা মেপলসকে বিয়ে করেন এবং ২০০৫ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিয়ে করেন তার বর্তমান স্ত্রী, মডেল মেলানিয়া ক্নাউসকে।
সূত্র : বিবিসি
–
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D