ফিরে দেখা ওবায়দুল কাদেরের জীবন

প্রকাশিত: ৭:৫৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৩, ২০১৬

আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলে উপস্থিত কাউন্সিলরদের সর্বসম্মতিতে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশের একজন প্রতিভাবান রাজনীতিবিদ এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একজন মন্ত্রী। তার অন্যান্য পরিচয়ের মধ্যে তিনি একজন সাংবাদিক এবং লেখক। সবমিলেই ওবায়দুল কাদের এক বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এবং সবার মধ্যেই তার এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

জন্ম এবং পরিবার

১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি, নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে জন্ম নেন ওবায়দুল কাদের। বাবা মোশারফ হোসেন সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে জনশিক্ষা স্বার্থে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

শিক্ষা জীবন: ওবায়দুল কাদের বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে মেধা তালিকায় স্থান নিয়ে এইচএসসি পাশ করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।

ছাত্র রাজনীতি: তিনি কলেজ জীবন থেকে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলন ও ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার কারা বরণ করেন। ১৯৭৫ এর পর এক নাগাড়ে দীর্ঘ আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পরপর দুইবার ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।

লেখালেখি: তিনি দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা ও লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত। দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসাবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। রচনা করেছেন আটটি গ্রন্থ। গ্রন্থগুলি হলো : (১) বাংলাদেশের হৃদয় হতে (২) পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু (৩) এই বিজয়ের মুকুট কোথায় (৪) তিন সমুদ্রের দেশে (৫) মেঘে মেঘে অনেক বেলা (৬) রচনা সমগ্র (৭) কারাগারে লেখা অনুস্মৃতি: যে কথা বলা হয়নি।

রাজনৈতিক জীবন: ওবায়দুল কাদের বিগত ১২ জুন ’৯৬-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নোয়াখালী-৫ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২৩ জুন ’৯৬ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং একই দিনে যুব ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তিনি ২০০১ সালের ১৫ জুলাই পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সৎ ও নিষ্ঠার সাথে পালন করেন।

২০০২ সালের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন থেকে ২০০৯-এর সম্মেলন পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। ১/১১ পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তিনি ২০০৭ সালের ৯ মার্চ জরুরি বিধিতে গ্রেপ্তার হয়ে ১৭ মাস ২৬ দিন কারাবরণ করেন।

২০০৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্ত হন। কারাগারে থাকাকালে কারাজীবনের বর্ণনা দিয়ে ‘অনুস্মৃতি : যে কথা বলা হয়নি’ লেখেন।

তিনি ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর পুনরায় দ্বিতীয়বারের মত নোয়াখালী-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন।

২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর বঙ্গভবনে মহাজোট সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ২০১২ তিনি যোগাযোগ রেলমন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। এছাড়া তিনি কিছুদিনের জন্য রেলমন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পালন করেন। বর্তমান সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওবায়দুল কাদেরের কার্যক্রমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বেশ খুশি বলে জানা গেছে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু নির্মাণ কার্যক্রম তদারকি ও বিভিন্ন স্থানে তার আকস্মিক ভিজিটের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

বিগত ৩টি সম্মেলন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ২০০২ সাল থেকে যে কয়েকজনের নাম আলোচনায় এসেছে তাদের মধ্যে ওবায়দুল কাদের অন্যতম। ২০০২ সালে তিনি এ পদের প্রার্থীও হয়েছিলেন। অবশ্য ওয়ান ইলেভেনের প্রেক্ষাপটে দলের ভূমিকার প্রশ্নে ২০০৯ সালের সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের আগে ওবায়দুল কাদেরকে গণভবনে ডেকে পাঠান। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওবায়দুল কাদেরকেও ফুরফুরে মেজাজে দেখা গেছে। তার অনুসারীদের মধ্যেও বেশ উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট