আওয়ামী লীগের সম্মেলন : এক থেকে ১৯

প্রকাশিত: ৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২২, ২০১৬

আওয়ামী লীগের আজকের সম্মেলন ঘিরে নেতাদের ধরনা শুরু হয়েছে অনেক আগেই। প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে যতটা সম্ভব বড় পদ বাগানোর সুস্থ-অসুস্থ প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত তারা।

অথচ পরাধীন দেশে জন্ম নেওয়া আওয়ামী লীগ বেড়ে উঠেছে বহু সংগ্রাম আর ত্যাগের মধ্য দিয়ে।

দল ও সরকারে বড় পদ পাওয়ার চেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্য সিনিয়র নেতাদের ভাবনা ছিল চরম ত্যাগের মধ্য দিয়ে মানুষের অধিকার রক্ষায় সর্বস্ব উজার করা। মন্ত্রিত্বের চেয়ে কর্মী হিসেবে আত্মনিয়োগ করাকে আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন জাতির জনক। গঠনতন্ত্র মেনে প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় দলের সভাপতির পদ ছেড়েছেন নির্দ্বিধায়। জীবনের শেষ সম্মেলনে সোনার বাংলা গড়তে কর্মীদেরই সবার আগে সোনার মানুষ হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে গেছেন শেখ মুজিব।

শনিবার দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার অনলাইন ও প্রিন্ট ভার্সনে এবিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি আরটিএনএনের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আওয়ামী লীগের ১৯টি সম্মেলন ও সাতটি বিশেষ সম্মেলনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৯৫৭ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশনের সিদ্ধান্ত মেনে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ বেছে নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আজ থেকে আবার আমি কোনো রকম পদমর্যাদা ব্যতিরেকে সাধারণ একজন কর্মী হিসেবে আওয়ামী লীগের কাজে আত্মনিয়োগ করতে পারব, সে আমার আনন্দ।’

দেশ স্বাধীনের পরও পদের চেয়ে দলীয় কল্যাণ ও মানুষের প্রকৃত মুক্তির ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। ১৯৭২ সালের নবম জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘স্বাধীনতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা পাওয়া যেতে পারে, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না হলে রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যায়।’

এর দুই বছর পর দশম সম্মেলনে দলের গঠনতন্ত্র মেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ ছাড়েন। ১৯৭৪ সালে জীবনের শেষ সম্মেলনে দলীয় প্রধান হিসেবে কর্মীদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর শেষ নির্দেশনা, ‘সোনার বাংলা গড়তে হবে। এটা বাংলার জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের প্রতিজ্ঞা। আমার আওয়ামী লীগের কর্মীরা, যখন বাংলার মানুষকে বলি, তোমরা সোনার মানুষ হও, তখন তোমাদেরই প্রথম সোনার মানুষ হতে হবে। তাহলেই সোনার বাংলা গড়তে পারবা। আর যারা দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সংগ্রাম করেছো, তারা বাংলার দুঃখী মানুষের কাছ থেকে সরে যেও না।’

জনসাধারণই সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী এবং জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা থেকেই ১৯৪৯ সালের ২৩-২৪ জুন গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলনের মধ্য দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের আত্মপ্রকাশ ঘটে। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি ও শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদক হন, পরে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৫৩ সালের বিশেষ সম্মেলনে নেতাদের কর্মকাণ্ডে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘যাদের নীতি ও আদর্শ নাই তাদের সাথে ঐক্যফ্রন্ট করার অর্থ হলো কতগুলো মরা লোককে বাঁচিয়ে তোলা। এরা অনেকেই দেশের ক্ষতি করেছে। রাজনীতি এরা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য করে, দেশের কথা ঘুমের ঘোরেও চিন্তা করে না।’

১৯৫৩ সালের ৩-৫ জুলাই আওয়ামী মুসলিম লীগের দ্বিতীয় সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান।

সম্মেলনে সাংগঠনিক রিপোর্টে বলা হয়, ‘পণ্য হিসেবে নয়, মানুষ মানুষের মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চায়’—এই বাণী নিয়ে আওয়ামী মুসলিম লীগ বঞ্চিত মানুষের নেতৃত্ব গ্রহণ করে। এই সম্মেলনে দলের গঠনতন্ত্র ও ম্যানিফেস্টো গ্রহণ করা হয়।

তখন থেকে আওয়ামী মুসলিম লীগকে পূর্ণাঙ্গ দল ভাবতে থাকা শেখ মুজিব অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বলেছেন, ‘এখন আওয়ামী লীগ একটি সত্যিকারের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে জনগণের সামনে দাঁড়াল। ম্যানিফেস্টো বা ঘোষণাপত্র না থাকলে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না।’

১৯৫৫ সালের ২১-২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত তৃতীয় সম্মেলনে আওয়ামী মুসলিম লীগকে একটি অসাম্প্রদায়িক দলে পরিণত করার লক্ষ্যে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ রাখা হয়। সে বছর মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি ও শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৫৭ সালের জুনে অনুষ্ঠিত চতুর্থ সম্মেলনের সময় কেন্দ্রে ও প্রদেশে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। তার তিন মাস আগে মার্চে ভাসানী আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান। এই সম্মেলনে ভাসানীকেই সভাপতি করা হয়।

তখন শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘সমস্ত প্রকার দুর্যোগের মোকাবিলা করিয়াই জন্মের মুহূর্ত হইতে আওয়ামী লীগ বর্তমান মুহূর্ত পর্যন্ত শুধু বাঁচিয়াই থাকে নাই, উহার বিরামহীন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দেশবাসীর হৃদয়ে বাঁচিয়া থাকিবার অধিকারও অর্জন করিয়াছে।’

১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে টাঙ্গাইলের কাগমারীতে আওয়ামী লীগের বিশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সোহরাওয়ার্দী অনুসারী এবং ভাসানীর অনুসারীদের মধ্যে মতপার্থক্য প্রকাশ্য বিরোধে রূপ নেয়। চরম দলাদলির মধ্যে এই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়, কোনো নেতা একই সঙ্গে দলের কর্মকর্তা ও মন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না।

ফলে শেখ মুজিবুর রহমান স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন। তিনি দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকেই বেশি গুরুত্ব দেন।

সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, আইয়ুব-মোনায়েমের দমন-পীড়ন, দলীয় নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে ১৯৬৪ সালে পঞ্চম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো প্রবীণ নেতারা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টে (এনডিএফ) থেকে কাজ করতে মরিয়া থাকলেও শেখ মুজিব দলকে পুনরুজ্জীবিত করেন।

সম্মেলনে মওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু সাধারণ সম্পাদক হন। সব ধরনের বৈষম্য দূর করে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর দেখানো পথে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়ে তখন শেখ মুজিব বলেন, ‘ন্যায় আমাদের কর্মনীতি, আমাদের আদর্শ। জয় আমাদের অনিবার্য।’

১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলগুলোর সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি নির্বাচিত হন। সেখানে তিনি ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন। ওই বছরের ১৮-২০ মার্চ ঢাকায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়, যেখানে শেখ মুজিব দলটির সভাপতি ও তাজউদ্দীন আহমদ সাধারণ সম্পাদক হন।

তখন তিনি বলেন, ‘আমার প্রস্তাবিত ছয় দফা দাবিতে যে পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে পাঁচ কোটি শোষিত বঞ্চিত আদম সন্তানের অন্তরের কথাই প্রতিফলিত হইয়াছে, তাহাতে আমার কোনো সন্দেহ নাই।’

দাবি আদায়ে চরম ত্যাগ আর সাধনার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ‘চরম ত্যাগের প্রস্তুতির বাণী লইয়া দিকে দিকে ছড়াইয়া পড়ুন, প্রত্যন্ত প্রদেশের প্রতিটি মানুষকে জানাইয়া দেন সর্বস্ব পণ করিয়াই আমরা আজ আন্দোলনের এ কণ্টকাকীর্ণ পথে পা বাড়াইয়াছি।’

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু কারারুদ্ধ থাকা অবস্থায় ১৯৬৮ সালের ১৯-২০ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সপ্তম সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। ওই সম্মেলনে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ‘কৃষি সম্পাদক’ নামে নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়। গণ-অভ্যুত্থান, আগরতলা মামলা প্রত্যাহার, আইয়ুব সরকারের পতন ও নির্বাচন সামনে রেখে বিজয়ী এক পরিবেশের মধ্যে ১৯৭০ সালের জুনে আওয়ামী লীগের অষ্টম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনটি ছিল উদ্দীপনা ও আত্মবিশ্বাসে ভরপুর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি মিলনমেলা। এই সম্মেলন ছয় দফা ও ১১ দফা গ্রহণ করে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে ৭০-এর নির্বাচনে যাওয়ার ভিত সৃষ্টি করে তাৎপর্যমণ্ডিত হয়ে আছে। এটাই ছিল পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রে আওয়ামী লীগের শেষ সম্মেলন।

৭০-এর নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে জয়লাভ করলেও ক্ষমতায় যাব না। আওয়ামী লীগ কর্মীরা যদি মনে করে যে তাদের দল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে, তবে তারা ভুল করবে। জনগণের যে দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য এত রক্ত ঝরেছে তা আদায় না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হউক কি না হউক, আওয়ামী লীগ সংগ্রাম করে যাবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী। যদি নিয়মতান্ত্রিকতা ব্যর্থ হয়, তবে অনিয়মতান্ত্রিকতার পথ বেছে নেওয়ার অধিকারও জনগণের আছে।’

শেখ মুজিব বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ব্যর্থ হলে জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।’

স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নবম সম্মেলন হয় ১৯৭২ সালের ৭-৮ এপ্রিল। অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তখন তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সরকার হলেই চলবে না, সঙ্গে সঙ্গে এটা জনগণের সরকার, সাড়ে সাত কোটি মানুষেরও সরকার। গঠনমূলক কাজে আত্মনিয়োগ ও দুঃখী মানুষের সেবায় জীবন উৎসর্গ করার জন্য তিনি নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। লোভের ঊর্ধ্বে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি শোষণমুক্ত সমাজ ও গণতন্ত্র কায়েম করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন।

বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার নির্মম হত্যাকাণ্ড, হত্যা-ক্যুর রাজনীতি, প্রত্যক্ষ সামরিক শাসন, দল ভাঙার নানা ষড়যন্ত্র এবং অনিশ্চিত এক পরিস্থিতির মধ্যে প্রায় নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় ১৯৭৭ সালের এপ্রিলে আওয়ামী লীগের ১১তম সম্মেলন হয়।

দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কারারুদ্ধ থাকায় এই কাউন্সিলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না করে একটি সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হয়। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের সমাপ্তি হয়। সিদ্ধান্ত হয়, কারারুদ্ধ নেতারা মুক্তিলাভের পর কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

তবে এর আগে ১৯৭৬ সালে দল পুনরুজ্জীবনের পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে মহিউদ্দিন আহমেদ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দায়িত্ব পালন করেন। ওই সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষণ দেন সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন।

আহ্বায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর কাউন্সিলরদের উদ্দেশে জোহরা তাজউদ্দীন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি আদর্শভিত্তিক সংগঠন এবং এ ধরনের সংগঠনের মৃত্যু নাই।’

দলের ১৩তম সম্মেলন হয় ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তাতে শেখ হাসিনা সভাপতি ও আবদুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সে সময় গঠনতন্ত্র সংশোধন করে যৌথ নেতৃত্ব চালু হয়, সহসভাপতি পদ বিলুপ্ত করে সভাপতিমণ্ডলীর পদ সৃষ্টি করা হয়। এ ছাড়া ১৩ সদস্যের সম্পাদকমণ্ডলী এবং ৫৪ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

এই সম্মেলনের পরই শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন ১৯৮১ সালের ১৭ মে। বিমানবন্দরে নেমে সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তি সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য আমি এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই। আমি চাই বাংলার মানুষের মুক্তি, শোষণের মুক্তি।’

সেই থেকে অদ্যাবধি তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি। এ বছর তিনি নতুন কারো হাতে দায়িত্ব দেওয়ার ইচ্ছার কথা জানালেও দলীয় নেতাকর্মীরা তাকেই ঐক্যের প্রতীক হিসেবে দলীয় সভাপতি পদে দেখতে চাইছে।

শেখ হাসিনা দেশে ফেরার ১৩ দিনের মাথায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর এইচ এম এরশাদ দেশে সামরিক শাসন জারি করেন। ফলে ১৪তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে দেরি হয়। ১৯৮৭ সালের জানুয়ারিতে দলটির ১৪তম সম্মেলনে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক হন।

১৯৯২ সালের ১৫তম সম্মেলনে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে দলীয় সভাপতির ক্ষমতা বাড়ানো হয়। ওই বছর জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পরের বছর মে মাসে দলটির ১৬তম সম্মেলন হয়। তখনো সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক হয়ে থাকেন জিল্লুর রহমান।

২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক হন আবদুল জলিল। সেবার গঠনতন্ত্রে সংশোধনী এনে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন, কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্যসংখ্যা ৭৩ জনে উন্নীত করা হয়।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর ২০০৯ সালের জুলাই মাসে ১৮তম সম্মেলন করে আওয়ামী লীগ। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্মেলন করা এবং সংশোধিত গঠনতন্ত্রের মাধ্যমে আরপিও আইন অনুযায়ী দল নিবন্ধনের বাধ্যতামূলক শর্ত পূরণ করাই ছিল এ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য। এই সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

২০১২ সালের সর্বশেষ সম্মেলনেও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার পাশে থেকেছেন সৈয়দ আশরাফই সাধারণ সম্পাদক হয়ে। আজ শুরু হতে যাওয়া ২০তম সম্মেলনে সভাপতি পদে নড়চড় না হলেও সাধারণ সম্পাদকের পদটিতে রদবদলের গুঞ্জন আছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট