বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন জরুরি

প্রকাশিত: ৯:৪৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২১, ২০১৬

বাংলাদেশে জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সরকার ক্ষমতায় না থাকায় দেশে হত্যা, গুম, রাহাজানি ও সহিংসতা বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে আলোচকরা।

১৯ অক্টোবর বুধবার ভয়েস ফর বাংলাদেশ ও বাংলাদেশি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, ইউকের যৌথ উদ্যোগে হাউস অব কমন্সে ওই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)’র প্রতিষ্ঠাকালীন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।

বদিউল আলম মজুমদার মূল আলোচনায় বলেন, বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন না হওয়ার কারণে সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনগুলোতে ভোটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮৭.১৩ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৫৫.৪৫ শতাংশ অংশগ্রহণ করেন। অন্যদিকে আমরা দেখতে পাই ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ ভোট দেয়। ১৫৪ সংসদ সদস্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই নির্বাচিত হন। দেশ-বিদেশে ওই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন গঠন করে সুষ্ঠু নির্বাচনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

সভাপতি লর্ড নাজির আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, প্রবাসি বাংলাদেশিরা তাদের দেশের বিভিন্ন দাবি নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। আমি তাদের দাবির সাথে একমত। তবে আমাদের একার পক্ষে তেমন কিছু করার নেই। আমি তাদের পরামর্শ দিয়ে বলবো, আপনারা ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃবৃন্দকে একত্রিত করে আপনাদের দাবি স্থানীয় এমপিদের কাছে উপস্থাপন করেন। তারা পার্লামেন্টে আপনাদের দাবি উপস্থাপন করলে ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দিতে পারে।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের লর্ড- লর্ড এন্ড্রু স্ট্যানেল তার বক্তব্যে বলেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে সরকারের উচিত নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা। তিনি বাংলাদেশের বিগত জাতীয় নির্বাচনের সমালোচনা করে বলেন সকল দলের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো নির্বাচন আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত নয়।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি- এন্ড্রু স্টিপেনশন তার বক্তব্যে বলেন, সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে সংলাপই হতে পারে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান এবং বাংলাদেশের গুম, খুন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর দক্ষিণ এশিয়ার ডিরেক্টর মিনাক্ষি গাঙ্গুলি বলেন, বাংলাদেশে এক সময়ের দীর্ঘকালীন সামরিক শাসক এরশাদ যেখানে বিরোধী দলে সেখানে গণতন্ত্রের জন্য ভালো লক্ষণ নয়। এ সরকারের আমলে পুলিশ-র‌্যাব ডিবি’র পরিচয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রদের কোনো রকম ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেপ্তার করছে। শুধু গ্রেপ্তার করেই ক্ষান্ত নয় তারা। মোটা অংকের টাকা না দিলে তাদের ক্রসফায়ারের হুমকি দেয়া হচ্ছে। সরকারের সমালোচনা করায় অনেক সাংবাদিক, ব্লগার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের গুম করে ফেলা হচ্ছে। সারা দেশে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি-ছাত্রদল-যুবদল-এর নেতাকর্মীদের গুম করা হচ্ছে। এদের কেউ কেউকে পঙ্গু এবং অনেককে নিহত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের প্রধান ওল্ফ ব্লমকুইস্ট বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার চরম হুমকির সম্মুখীন, তিনি এ বিষয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা নেই এবং আইসিটি অ্যাক্ট বাকস্বাধীনতার জন্য একটি হুমকি।

ভয়েস ফর বাংলাদেশের প্রধান আহ্বায়ক ও বাংলাদেশি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, ইউকের প্রতিষ্ঠাতা আতাউল্লাহ ফারুকের পরিচালনায় আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন লর্ড নাজির আহমেদ। সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- লর্ড এন্ড্রু স্টানেল, এন্ড্রু স্টেপেনসন এমপি, জনাথন র‌্যানল্ড এমপি, ইয়াসমিন কুরাইসি এমপি, এমন্যাস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ ও মালদ্বীপবিষয়ক প্রধান ওল্ফ ব্লমকুইস্ট, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’র দক্ষিণ এশিয়ার ডিরেক্টর মিনাক্ষি গাঙ্গুলি, কমনওলেথের হেড অব ট্রান্সপারেন্সি এলিনর স্টুয়ার্ড প্রমুখ।

বাংলাদেশে চলমান সহিংসতা, হত্যা, গুম, খুন, রাহাজানি বন্ধ এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার্থে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন, সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আয়োজিত ওই সেমিনারের আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশী স্টুডেন্টস ইউনিয়নের আহ্বায়ক এসএইচ সোহাগ, ভয়েস ফর বাংলাদেশ ইউকে শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল জামিল, কানিস ফাতিমা, ফরহাদ হোসাইন, মো. আল উদ্দিন রাসেল, লুৎফর রহমান, মাহমুদুলহাসান, আব্দুল্লাহ আল নোমান, পারভীন ববি, ফয়জুন নূর, গরিব হোসেন, হাসনাত চৌধুরী, আইনজীবি মো. ডলার বিশ্বাস, লুৎফর রহমান লিঙ্কন, বাকীউল্লাহ ফারুক, রাসেল রহমান, আব্দুর রহিম, জয়নাল আবেদীন, ইসতেখার হোসাইন, জাহাঙ্গীর হোসাইন প্রমুখ।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট