সোহেল তাজের দলে ফেরা নিয়ে জোরালো গুঞ্জন

প্রকাশিত: ৯:৫৫ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৮, ২০১৬

বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে তানজিম আহমেদ সোহেল তাজকে দেখা যেতে পারে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে।

দীর্ঘদিন ধরে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে এমন সম্ভাবনার কথা আলোচিত হলেও সম্প্রতি সোহেল তাজের এক ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে এ গুঞ্জন জোরালো হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, দলের জন্য তাজউদ্দীন আহমদ ও জোহরা তাজউদ্দীনের অবদান, সোহেল তাজের মেধা, সততা, পরিশ্রম করার সামর্থ্য বিবেচনায় নিয়ে তাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুক্ত করে চমক দিতে পারেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার অনলাইন ও প্রিন্ট ভার্সনে মঙ্গলবার এবিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। আরটিএনএনের পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনটি হুবহু তুলে ধরা হলো:

২২ ও ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে দলের নেতাদের প্রতি সম্প্রতি একাধিকবার আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।

এ আহ্বানের পর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি রেখে অন্য পদগুলোয় নতুন নেতৃত্ব বসানোর প্রস্তাব রেখেছেন।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবারের সম্মেলনে চমক থাকবে বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে আগামী দিনে কারা দলের নেতৃত্বে আসতে পারেন তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। বঙ্গবন্ধুর দুই দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং বঙ্গবন্ধুর সহচর তাজউদ্দীন আহমদের সন্তান সোহেল তাজকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে দেখা যেতে পারে—এমন গুঞ্জন শুরু হয় নেতাকর্মীদের মধ্যে।

ফেসবুকে সোহেল তাজের ইংরেজিতে লেখা পোস্টটির বাংলা অর্থ এ রকম, ‘আমি সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রচুর সময় দিচ্ছি। এতে আমি গভীরভাবে অনুধাবন করেছি ও আকাঙ্ক্ষা তীব্র হয়েছে যে এ দেশের লাখো মানুষের জন্য অর্থবহ কিছু করি। এমন একটি জাতি, যারা সব মানুষের জন্য সুযোগ সৃষ্টি, সম অধিকার ও গণতন্ত্র নিশ্চিত করবে, এমন আকাঙ্ক্ষায় সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দেশের জন্ম। এই স্বপ্ন পূরণের জন্য আমাদের লাখো জীবন উৎসর্গ হয়েছে। এই বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীন একটি দেশের গর্বের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

আপনারা জানেন, আমি রাজনীতির মধ্য দিয়ে অবদান রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। ১৯৯৭ সালে শুরু করে ২০১২ পর্যন্ত আমি চেষ্টা করেছি। আমি দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। আমি অনেক সমাজকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গেও যুক্ত ছিলাম। যেমন—আমি প্রখ্যাত চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে সড়ক ও পরিবহনের নিরাপত্তা বিষয়ে প্রচারণা চালিয়ে মানুষের জীবন বাঁচাতে চেষ্টা করেছি। আমি আজ পর্যন্ত যেসব কাজে যুক্ত ছিলাম সেগুলোর কোনোটিই সাধারণ মানুষের সরাসরি উপকার করার মতো সন্তুষ্টি দিতে পারেনি।

এ কারণে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে তাদের কল্যাণে আমি আমার সময় ও শক্তি উত্স্বর্গ করব।’

বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শগুলো নিজে পড়বেন জানিয়ে সোহেল তাজ লেখেন, ‘আমি আপনাদের কাছে পরামর্শ চাইছি। আপনাদের যেকোনো গঠনমূলক পরামর্শ ও পরিকল্পনা সাদরে গ্রহণ করব। ধন্যবাদ।’

পোস্টটিতে বিপুলসংখ্যক ফেসবুক ব্যবহারকারী সাড়া দেয়। গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত লাইক পড়েছে চার হাজারের বেশি। এতে প্রায় এক হাজার মন্তব্য লেখা হয়। প্রায় সবাই সোহেল তাজকে দলীয় রাজনীতিতে ফিরে আসার অনুরোধ করে। শেখ রফিকুন্নবী নামের একজন জনগণকে রাজনীতিসচেতন করার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিতে বলেন।

জবাবে সোহেল তাজ লেখেন, তিনি এরই মধ্যে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় এ ধরনের একটি অনুষ্ঠান করেছেন, যার ভিডিও শিগগিরই ইউটিউবে আপলোড করার ইচ্ছা রয়েছে তার।

এরপর ১৫ অক্টোবর দুপুরে তার লেখায় সাড়া দেওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি পোস্ট দেন সোহেল তাজ।

সেখানে লেখেন, ‘সবাইকে অনেক ধন্যবাদ মূল্যবান মন্তব্য ও পরামর্শের জন্য। আমি আপনাদের মন্তব্যগুলো মনোযোগের সঙ্গে পড়েছি। পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক মেসেজ পেয়েছি, যার জবাব পরবর্তী সময়ে দেওয়ার চেষ্টা করব।’

২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান সোহেল তাজ। কিন্তু তিনি ২০০৯ সালের ৩১ মে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। এর কারণ প্রসঙ্গে সোহেল তাজ কখনো স্পষ্ট করে কিছু না বললেও দলের প্রভাবশালী এক নেতার দুর্ব্যবহারকে দায়ী করে থাকে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

২০১২ সালে সংসদ সদস্য পদ থেকেও ইস্তফা দেন সোহেল তাজ। এরপর কখনোই দলের কোনো কর্মকাণ্ডে যুক্ত হননি। এমনকি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও কখনো সাক্ষাৎ করেননি।

তবে এ বছরের জানুয়ারিতে সোহেল তাজ ও তার দুই বোন গণভবনে গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন।

আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি এখন দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরির দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। সে জন্য তিনি সৎ, মেধাবী তরুণদের সামনে আনতে চাইছেন। এ ক্ষেত্রে অতীতে যারা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন, তাদের সন্তানদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

সে বিবেচনায় জাতীয় চার নেতার সন্তানরা গুরুত্ব পাবেন। জাতীয় চার নেতার দুজনের সন্তান এরই মধ্যে আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন।

সৈয়দ নজরুল ইসলামের সন্তান সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলের সাধারণ সম্পাদক আর এম মনসুর আলীর সন্তান মোহাম্মদ নাসিম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।

এবার আওয়ামী লীগের কমিটিতে এ এইচ এম কামরুজ্জামানের সন্তান এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও তাজউদ্দীন আহমদের সন্তান সোহেল তাজকে গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখা যেতে পারে।

সূত্রগুলোর মতে, বর্তমানে শেখ হাসিনা যে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতায় পরিণত হয়েছেন এর পেছনে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। সৈয়দ আশরাফ এক-এগারোর সময় আওয়ামী লীগকে যেমন সঠিক ধারায় রাখতে ভূমিকা রেখেছেন, তেমনি গত দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সভাপতির হাতকে শক্তিশালী করেছেন।

আওয়ামী লীগের আগামী দিনের শীর্ষ নেতা হবেন শেখ হাসিনার সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়। তার নেতৃত্বকে শক্তিশালী করার জন্যও সৈয়দ আশরাফের মতো সৎ ও মেধাবী নেতা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সোহেল তাজ পরীক্ষিত। তাকে দলে ফেরানোর চেষ্টা আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনেকেই অব্যাহত রেখেছেন।

শেখ হাসিনা, সৈয়দ আশরাফ, সজীব ওয়াজেদ জয়—তিনজনই সোহেল তাজকে ভীষণ পছন্দ করেন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, ‘এটা অর্থবহই মনে হচ্ছে। তিনি দলে ফেরার বিষয়টি বিবেচনা করে থাকলেও করতে পারেন। এমনটাও হতে পারে তিনি দলে ফেরার ক্ষেত্র তৈরির জন্য পোস্টটি দিয়েছেন।’

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট