ছাদে ঘুরানোর কথা বলে নয়তলার খালি ফ্ল্যাটে নিয়ে ধর্ষণের কথা স্বীকার

প্রকাশিত: ৬:৪৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ৭, ২০১৯

ছাদে ঘুরানোর কথা বলে নয়তলার খালি ফ্ল্যাটে নিয়ে ধর্ষণের কথা স্বীকার

রাজধানীর ওয়ারীর সাত বছরের শিশু সামিয়া আক্তার সায়মাকে ঘুরানোর কথা বলে নয়তলার খালি ফ্ল্যাটে নিয়ে ধর্ষণ করে হারুন অর রশিদ। এরপর  ধর্ষণের ফলে নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে থাকে সামিয়া। তাকে মৃত ভেবে তার গলায় রশি পেঁচিয়ে টেনে-হিঁচড়ে সামিয়ার অচেতন দেহ রান্নাঘরে সিঙ্কের নিচে রেখে পালিয়ে যায় হারুন।

রবিবার (৭ জুলাই) দুপুর ২টায় ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এভাবেই সামিয়া ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার বর্ণনা দেন অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন।  অভিযুক্ত হারুন অর রশিদকে রবিবার সকালে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে সামিয়া হত্যার ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারে ডিবি পুলিশ।

বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে পুলিশের ওয়ারী বিভাগের ডিসি ইফতেখার আহমেদ জানান, গ্রেফতার হারুনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়। ঘটনার পর সে পলাতক ছিল। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ ছিল। পরে পুলিশ তার অবস্থান শনাক্ত করে তাকে সোনারগাঁ থেকে ধরে আনে।

এদিকে শিশু সায়মার বাবা আব্দুস সালাম জানান, সায়মাকে হত্যাকারী ফ্ল্যাট মালিক পারভেজের খালাতো ভাই। সে ভবনের ৮ তলায় পারভেজের বাসায় থাকতো এবং ঠাটারিবাজারে একটা রঙের দোকানে কাজ করতো।

এর আগে পুলিশ জানায়, শিশু সামিয়া আক্তার সায়মাকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে শনাক্ত করেছে। বনগ্রামে একই ভবনের বাসিন্দা অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, ওই ভবন ও আশপাশের ভবনের সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত মূল অভিযুক্ত এক যুবককে শনাক্ত করা হয়েছে। ওই যুবক ওই ভবনেই একটি ফ্লোরের বাসিন্দা। ধর্ষণের পর হত্যার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।

শিশু সামিয়া আক্তার সায়মা

এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের ওয়ারী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মোহাম্মদ সামসুজ্জামান বলেন, শিশু সায়মার ময়না তদন্ত শেষে ঢামেক ফরেনসিক বিভাগ জানিয়েছে, শিশুটিকে ধর্ষণের পর মেরে ফেলা হয়েছে। মামলা হয়েছে, অভিযুক্তকে শনাক্ত করতে পুলিশ কাজ করছে।

গতকাল শনিবার (০৬ জুলাই) দুপুরে শিশুটি সায়মার মৃতদেহের ময়না তদন্ত সম্পন্নের পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ জানান, শিশুটিকে ধর্ষণ করার পর তার গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলা হয়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সোহেল মাহমুদ বলেন, শিশুটির মুখে কামড়ের দাগ পাওয়া গেছে। এছাড়া তার ‘হাই ভ্যাজাইনাল সয়াব’ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেওয়া হবে।

এ ঘটনায় শিশুটির বাবা থানায় মামলা করেছেন বলে জানিয়ে ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর জানান, মামলার নম্বর ৪। এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়জনকে থানায় আনা হয়েছে।

এর আগে শুক্রবার (৫ জুলাই) রাত ৯টার দিকে রাজধানীর ওয়ারীর বনগ্রামে বহুতল একটি ভবনের ৯ তলার খালি ফ্ল্যাট থেকে শিশু সামিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।একই ভবনের ছয়তলায় নিহত শিশু সায়মার বাবা আবদুস সালামসহ পরিবারের সঙ্গে থাকত। সন্ধ্যার দিকে খেলা করতে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। তারপর থেকে শিশুটি নিখোঁজ ছিল।