২০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:১২ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৬
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনর উদ্যোগে আয়োজিত জোছনা উৎসব শেষ হয়েছে। শনিবার দুপুরে হাওরে জোছনা উৎসবের উদ্দেশ্যে প্রায় অর্ধ শতাধিক নৌকায় হাজারো পর্যটক রওয়ানা দেন। যাওয়ার পথে হিজল কড়চের নিরব গানে তম্ময় হন তারা। পর্যটকরা হাওর ভ্রমণ শেষকওে পাহাড়ঘেষা টেকেরঘাট খনিজ প্রকল্পে যান। সেখানকার পরিত্যাক্ত কোয়ারিতে (লেক) সবুজ পাহাড়ের স্থির ছায়া দেখে মুগ্ধ হন তারা। পরে আবারও ছুটে আসেন টাঙ্গুয়ার হাওরে। সন্ধ্যার আগেই নৌকাগুলো নোঙ্গর গেড়ে জোছনা উদযাপনের জন্য প্রস্তুত করা হয়। দিনের আলো হাওরে ডুবে যাওয়ার পর যখন জোছনা দেয় তখনই শুরু হয় জোছনা উদযাপন। রৌয়া বিলের মধ্যখানে একটি ভাল্কহেডকে মঞ্চ বানিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্টান। দেশখ্যাত শিল্পী আশিক একের পর এক মরমি গানে মজিয়েছেন দর্শকদের। এই অঞ্চলের হৃদয় তোলপাড় করা মরমি গান গুলো পরিবেশন করছেন তিনি। তাছাড়া শাহনাজ ভেলিও গানে গানে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। একের পর এক মরমী গানে সুরে ইন্দ্রজাল তৈরি করেছেন তিনি। তাছাড়া স্থানীয় শিল্পী ঐষির কণ্ঠেও মুগ্ধ হন শ্রোতারা। গানের মজমায় সবাই জোছনাসুধায় মজেছেন পর্যটকরা। দিনশেষে ভারত-বাংলাদেশ সীান্ত এলাকা যাদুকাটা নদীর তীরবর্তী বারেকের টিলায় এসে শেষ হয় দুইদিনের কর্মসূচি।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সংরক্ষিত আসনের সাংসদ শাহানা রব্বানী, সাবেক সাংসদ নজির হোসেন, পুলিশ সুপার মোহা. হারুন অর রশিদ, উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুলসহ স্থানীয় সুধীজন অংশ নিয়েছেন।
টাঙ্গুয়ার হাওওে জোছনা উৎসব সম্পর্কে সুনামগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক তার ফেসবুকে এভাবেই অভিমত ব্যক্ত করেন, টাঙ্গুয়ার হাওওে জোছনা উৎসবের সংবাদটি পড়ে আমি খুবই নিরুৎসাহিত হয়েছি। কারণ, টাঙ্গুয়ার হাওরের মতো একটি সংবেদনশীল প্রতিবেশ ব্যবস্থার জন্য এটি কী ভয়ানক পরিনতি ডেকে আনতে পারে উদ্যোক্তাদের কেউ তা ঘুনাক্ষরেও উপলব্দি করতে পারছে বলে আমার মনে হয়নি। অথচ এ জলাভূমিটির পরিবেশ পুনরুদ্ধারে আমরা, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসন, অনেক কষ্ট এবং ত্যাগ স্বীকার করেছিলাম।
আশংকা করছি, যে অনন্য প্রতিবেশ ব্যবস্থাটি তৈরি করতে প্রকৃতির হাজার হাজার বছর সময় লেগেছে; সেখানে এটি বিনষ্ট করতে এ ধরনের কতিপয় উদ্যোগই যথেষ্ট হতে পারে।
শীতের প্রারম্ভে, আগামী কিছুদিনের মধ্যেই টাঙ্গুয়ার হাওরে হাজার হাজার মাইল দূর থেকে পরিযায়ী পাখিদের আগমন শুরু হবে। পাখিরা হল এ হাওরের প্রাণ। একটা নিরাপদ, নিরুপদ্রব, কোলাহলহীন আশ্রয়ের সন্ধানে যারা চরম ক্লেশ স্বীকার করে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এখানে আসবে বলে প্রস্তুুতি নিচ্ছে; তাদের নিরাপদ আবাসস্থলটির জন্য উদ্যোক্তাদের বর্ণিত আয়োজন কী বাণী বহন করবে!
টাঙ্গুয়ার হাওরে শুধু রাতের বেলায় নয়, দিনের বেলাতেও যেখানে কোন নৌযান চলাচল করতে দেয়া উচিৎ নয়, সেখানে রাতের নিস্তব্দতা ভেদ করে অসংখ্য লঞ্চ, স্পীড বোট, ইঞ্জিনের নৌকা চালিয়ে, ভাসমান মঞ্চে লাউড স্পীকারে রাতভর গানবাদ্য সহ উৎসব উদযাপনের জন্য লোক সমাগমের এ উদ্যোগটি নি:সন্দেহে একটি ভয়াবহ আত্মঘাতি পরিকল্পনা।
বাংলাদেশের ২য় রামসার এলাকা হিসেবে ঘোষিত টাঙ্গুয়ার হাওর প্রাকৃতিক বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত। এর জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গুরুত্ব অপরিসীম। হাওরটির গুরুত্ব ও সংবেদনশীলতা বিবেচনায় সরকার এটিকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করেছে। সংবাদে প্রকাশিত ধরণের কর্মকান্ড প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় আইনগতভাবেই নিষিদ্ধ।
টাঙ্গুয়ার হাওর রক্ষায় এধরনের কর্মকান্ড রোধে যেখানে স্থানীয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার প্রয়োজন, সেখানে তারা নিজেরাই এধরনের কাজে ব্রতী হয়েছেন বলে সংবাদটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যা অতিশয় ভাবনার কথা।
স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রতিবেশ ব্যবস্থা ব্যবস্থার ধরণ, গুরুত্ব এবং সংরক্ষণ কৌশল বিষয়ে উদ্যোক্তাদের কোন ধারণা নেই। তবে টাঙ্গুয়াকে নিয়ে তাদের উদ্দ্যেশ্য তাদের হয়তো মোটই মন্দ নয়। বরং আমি নিশ্চিত, উদ্যোক্তাগণ চান টাঙ্গুয়াতে বহু লোক সমাগমের মাধ্যমে এটি বাংলাদেশের একটি সেরা পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠুক।
কিন্তু এ ধরনের উদ্দ্যোগের সফলতায় টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রতিদিন শত শত পর্যটকের শুভাগমনে, তাদের লঞ্চ, স্পীডবোট, ইঞ্জিনের নৌকার আলোড়নে, লাউডস্পীকারের সমবেত সংগীত মুর্ছনায়, পলিথনসহ তাদের নিক্ষিপ্ত অন্যান্য বর্জ্যে, অসংখ্য মানুষের অনিয়ন্ত্রিত গমনাগমনে টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রতিবেশটি বিনষ্ট হবার নিশ্চিত আশংকা তৈরী হয়েছে।
জোছনা উৎসবে অংশ নেওয়া এডভোকেট বজলুল মজিদ খসরু এভাবেই অভিমত ব্যক্ত করেন, সরকারি ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে সব কিছুই ধংশ হয়ে যায়। এটা আবার দেখলাম টাঙ্গুয়ার হাওড়ে এসে। হাওড় পারের গ্রাম ছিলাইনা তাহিরপুর, জয়পুর, গোলাবাড়ি মানুষজনের একই কথা হাওড়ের মাছ, পাখি সবই কমেছে। গত ১৩ বছর আই,ইউ,সি,এন এই হাওড়টির দেখভালের দায়িত্ব পেলেও তারা হাওড়ের উন্নতির জন্য কিছুই করেনি। মাছের আশ্রয় স্থল হিসাবে কাঠা, দল কোথাও দেওয়া হয়নি। গত ১৩ বছরে টাঙ্গুয়ার হাওড় লুটপাট করে অনেক অসত কর্মকর্তা, কর্মচার্রী বিত্তশালি হয়েছেন কিন্তু হাওড়ের মাছ, পাখি, গাছ সবই কমেছে। বিগত কয়েক বছর আগে একজন ভাল, সৎ জেলা প্রশাসক জনাব জহির উদ্দিন আহমদ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি অবহিত করেছিলেন।
এবার জোছনা উৎসবে দেখলাম পানির বোতল, চানাচুরের প্যাকেট, বিভিন্ন প্রকার পানিয়ের খালি বোতল, টিস্যু পেপার পানিতে ভাসছে। টাংগুয়ার হাওড়ে অবশিষ্ট প্রানিকুল কি এতে কষ্ট পাবে? পরিবেষবিদরা ভাল বলতে পারবেন। সকালে তাহিরপুর গিয়ে আয়োজক কমিটির আহব্বায়কের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলাম। অনুরুধ করেছিলাম প্রতি নৌকায় যেন গারভেজ ফেলার জন্য নিদেন পক্ষে একটি বস্তা রাখা হয়। বিষয়টি যেন মাইকে প্রচার করা হয়। হাওড়ে ভাসমান বোতল, প্যাকেট ইত্যাদি দেখে মনে হয় বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়ার সময় হয়নি। আগামিতে এই প্রকার উতসব করার আগে বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা উচিত।
জোছনা উৎসবে অংশ নেওয়া সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সাংসদ নজির হোসেন বলেন, এ হাওরে সরকারী বে-সরকারী যে ব্যবস্থাপনা রয়েছে তা ফেল করেছে। দীর্ঘ ১৩বছরেও হাওরের কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি। মাছ-গাছ-পাখি সবই কমেছে। হাওরের সম্পদ উজার হয়ে যাচ্ছে। তাই টাঙ্গুয়ার হাওরের উন্নয়নে নতুন করে ভাবতে হবে।
জোছনা উৎসবের আয়োজক তাহিরপুর উপজেরা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওর এখন নপর্যটকদের প্রিয় স্থান। এখানে হাওর কেন্দিক পর্যটন শিল্প গড়ে তুলতে হবে।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D