ভারতে আটক সন্দেহভাজনরা পুলিশী রিমান্ডে, নিহত আহাদের লাশ দেশে এসেছে

প্রকাশিত: ১২:৫৯ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৭, ২০১৬

জকিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা : অবৈধ পথে সৌদি আরব যাওয়ার আশায় ভারতে গিয়ে গ্রেফতার হওয়া চার জনের নাম ঠিকানা প্রকাশ করেছে আসামের রাজ্য পুলিশ।  গ্রেফতারকৃতরা হলো জকিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম শাহজালালপুর গ্রামের কাজী মাসুক আহমদের ছেলে কাজী সুমন আহমদ (২৭), পূর্ব শাহজালালপুর গ্রামের মাহমুদ আলীর ছেলে সাব্বির আহমদ (২৫), জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের আনারসি গ্রামের সৌদি প্রবাসী মুছব্বির আলীর ছেলে দেলোয়ার হোসেন (৩০) ও পার্শ্ববর্তী উপজেলা কানাইঘাটের শহিদ আহমদ (৩০)। আটককৃতদের আসাম পুলিশ ১৪ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে।

অপরদিকে ভারতে অনুপ্রবেশকারী নিয়াগুলের আব্দুল আহাদ (৪০) নামের এক যুবকের লাশ গতকাল শুক্রবার জকিগঞ্জ কাষ্টমস দিয়ে হস্তান্তর করেছে লাশ করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। তবে অনুপ্রবেশকারী আব্দুল আহাদের কিভাবে মৃত্যু হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। লাশ হস্তারের সময় ভারতের পক্ষে করিমগঞ্জ জেলা সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট কমিশনার সুদীপ নাথ, পুলিশের ডিএসপি রাম চন্দ্র শর্মা, বিএসএফের কোম্পানী কমান্ডার ভারুন তেওয়ারী, বাংলাদেশের পক্ষে জকিগঞ্জ থানার ওসি মো: সফিকুর রহমান খান, বিজিবি’র মানিকপুর কোম্পানী কমান্ডার সমরেশ বড়ুয়া, ইমিগ্রেশন অফিসার নজরুল ইসলাম, কসকনকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক রিয়াজসহ সাংবাদিক, পুলিশ, বিজিবি, বিএসএফ’র সদস্য ছাড়াও মৃতের স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বাবার লাশ দেখে বার বার মুর্চা যায় নিহতের সন্তান আব্দুস সামাদ।
করিমগঞ্জের সহকারি কমিশনার সুদীপ নাথ বলেন, লাশের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন ছিল না।  হৃদরোগেই সে মারা যায় বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে। পোস্ট মর্টেম প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। জকিগঞ্জ থানার ওসি সফিকুর রহমান খান, ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছেন ভারতে আটক যুবকদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কোনো থানায়ই কোন অভিযোগ নেই। তারা সবাই শ্রমিক শ্রেণীর লোক। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন দালালদের দেখানো লোভেই ওরা সহজে সৌদি আরব যাবার জন্য অবৈধ পথে ভারত যায়। গত ১৪ আগষ্ট মৃত আব্দুল আহাদসহ ৫ জন কানাইঘাটের মেঘালয়ের উমকিয়াং সীমান্ত দিয়ে দালালের মাধ্যমে সৌদি আরব যাবার উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করে। সেখানে গত মঙ্গলবার ভোরে মারা যান আব্দুল আহাদ। ভারতের পুলিশ দাবী করেছে, নিহত আহাদের সঙ্গীরা লাশ ফেলে দেওয়ার সময় পথচারীরা পুলিশে খবর দেয়।
কসকনকপুর ইউনিয়নের পরিষদের সদস্য ইসলাম উদ্দিন নিয়াগুল গ্রামের আব্দুল আহাদের ভারতে নিহত হওয়ার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আব্দুল আহাদের বাবা মুজম্মিল আলী তাকে জানিয়েছেন দালালের মাধ্যমে ভারত হয়ে সৌদি যাওয়ার জন্য ১৪ আগষ্ট ৭০ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ী থেকে বের হন। ভারতের করিমগঞ্জের তাদের এক আত্মীয়ের মাধ্যমে গত বৃহস্পতিবার সকালে আহাদের মৃত্যুর খবর পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিত হয়েছেন। পেশায় আহাদ একজন শ্রমিক ছিলেন। তার ২ ছেলে ও ২ মেয়েসহ বৃদ্ধ মা-বাবা রয়েছেন। তিন দিন আগে আহাদ তার বাবাকে জমি বিক্রি করে টাকা জোগাড় করে রাখার জন্য বলেছিল। ভারতের জেলে আটক সাব্বির আহমদের ভাই ফয়সল আহমদ জানান, সাড়ে তিন লাখ টাকা চুক্তির মাধ্যমে ভারতীয় পাসপোর্ট ও সৌদির ভিসা দেয়ার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে সাব্বির অবৈধ পথে ভারত যান। সে গ্রামে মুদির দোকান চালাতো। পশ্চিম শাহজালালপুর গ্রামের সৌদি প্রবাসী জালাল আহমদের মাধ্যমে ভারতের দালালের সাথে পরিচয় হয় তার ভাইয়ের। সেই সূত্র ধরেই সাব্বির ভারত যান।
আটক দেলোয়ারের প্রতিবেশী আকলিম উদ্দিন জানান, বাংলাদেশ থেকে সৌদির ভিসা বন্ধ থাকায় সহজে ভারত হয়ে সৌদি যাওয়ার জন্য দালালের মাধ্যমে অবৈধ পথে সে এক সপ্তাহ আগে ভারত যায়। আটক সুমনের মা সেজু বেগম বলেন, ৩ ছেলে ও ৪ মেয়ের মধ্যে সুমন সকলের বড়। সে পেশায় গাড়ী চালক। কলাকুটা গ্রামের জনৈক কামাল আহমদ নামের এক দালালের মাধ্যমে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় সৌদি যাওয়ার জন্য সে ভারতে পাড়ি দেয়। সাথে ৩০ হাজার টাকা ছিল বলেও তিনি জানান। মঙ্গলবার করিমগঞ্জের নিলাম বাজার এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়ছে বলে করিমগঞ্জ পুলিশের বরাত দিয়ে ভারতীয় একাধিক সংবাদমাধ্যম খবরটি প্রকাশ করে। ১৪ আগষ্ট পাঁচ বাংলাদেশী আটগ্রাম পাহাড় এলাকা দিয়ে মেঘালয় সীমান্ত পাড়ি দেয়। পরে তারা ভারতের কালীগঞ্জ এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে আশ্রয় নেয়। ভারতের পুলিশ পুলিশ দাবী করেছে, নিহত আহাদের সঙ্গীরা লাশ ফেলে দেওয়ার সময় পথচারীরা পুলিশে খবর দেয়। তবে কিভাবে আব্দুল আহাদের মৃত্যু হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জকিগঞ্জ থানার ওসি শফিকুর রহমান খান জানান, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তার কাছে জানতে চেয়েছেন। তিনি জকিগঞ্জ থানার দারোগা এ. এইচ. এম মাহমুদকে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য সরেজমিনে পাঠিয়েছেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট