বাল্য বন্ধুর টানে জো মিলেনের বাংলাদেশ অভিযান

প্রকাশিত: ৮:২৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩০, ২০১৬

জন্ম থেকে বধির ছিলেন জো মিলেন। জীবনে প্রথম কোন কিছু শুনতে পান ৩৯ বছর বয়সে। তার কানে ফিট করা হয় একটি যন্ত্র, যার নাম ককলিয়ার।

একজন নার্স জো মিলেনকে কিছু পড়ে শোনাচ্ছিলেন, সেটা শুনে তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়াতে থাকে। লক্ষ লক্ষ মানুষ ইন্টারনেটে সেই ভিডিও দেখেছেন।

জো যেভাবে যন্ত্রের সাহায্যে তার শ্রবণশক্তি ফিরে পেয়েছেন, বাংলাদেশের শত শত বধির শিশুকেও সেভাবে শ্রবণশক্তি ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করতে চান তিনি। সেজন্যে তিনি এসেছেন বাংলাদেশে। কিন্তু বিশ্বের এতো দেশ থাকতে বাংলাদেশকে বেছে নেয়ার কারণ কি? কারণ অবশ্যই আছে, কেননা সেখানেই থাকেন তার শৈশবের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমিনা খান।

জো মিলেন এবং আমিনা খান, দুজনের বন্ধুত্বের শুরু হয় যখন তাদের বয়স ১১ বছর। উত্তর পূর্ব ইংল্যান্ডের গেটসহেডের এক এলাকায় থাকতেন তারা।

দুজনেই আলাদা। একজন বধির। অন্যজন পুরো এস্টেটের মধ্যে একমাত্র এশিয়ান। তাই স্কুলে, খেলার মাঠে তাদের অন্য বন্ধুদের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ সইতে হতো। তার মধ্যে এই দুজনের মধ্যে গড়ে উঠলো বন্ধুত্ব।

কিন্তু ১৬ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে গেল আমিনার। আমিনা  চলে এলেন বাংলাদেশে। দুজনের আবারে দেখা বহু বছর পর, যখন জো ফিরে পেলেন তার শ্রবণশক্তি।

আমিনা বলছিলেন ‘যখন আমরা বেড়ে উঠছিলাম, তখন আমরা ঠিক করেছিলাম, বড় হয়ে আমরা বাংলাদেশের গরীব ছেলে-মেয়েদের সাহায্য করার চেষ্টা করবো।’

 বাংলাদেশে পাঁচ শতাংশ শিশু বধির। এদের অন্তত পাঁচশো জনের কানে ‘হিয়ারিং এইড’ ফিট করার পরিকল্পনা নিয়েছেন জো। একাজে তার সহযোগী একটি মার্কিন ব্যান্ড দল ‘দ্য অসমন্ডস।’

যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ অঙ্গরাজ্যের এই মার্কিন ব্যান্ডদলটি ছয় ভাইকে নিয়ে গড়া। তাদের বড় ভাইও বধির। তাই যখন তারা ইন্টারনেটে জো মিলেনের শ্রবণশক্তি ফিরে পাওয়ার ভিডিও দেখলো, তারা ঠিক করলো, অন্য বধিরদের সাহায্য করতে তারা কিছু একটা করবে। সেখান থেকেই বাংলাদেশ প্রজেক্টের যাত্রা শুরু।

জো বাংলাদেশে এলেন, বহু বছর পর সাক্ষাত হলো বাল্য বন্ধু আমিনা খানের সঙ্গে। ঢাকায় বধির শিশুদের জন্য ক্লিনিক বসলো্, যেখানে পাঁচশো শিশুর কানে ফিট করা হবে ‘হিয়ারিং এইড।’

ক্লিনিকে দুই ছেলে এবং এক মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন রোকেয়া বেগম। তাদের সবার কানে ফিট করা হয়েছে হিয়ারিং এইড। ‘তারা এখন আমার কথা শুনতে পায়’ এমনটাই  জানালেন রোকেয়া।

জো মিলেন যা ফিরে পেয়েছেন, অন্য শিশুদেরও ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করতে পেরে আনন্দিত। তার কানে যে যন্ত্রটি লাগানো আছে তার নাম ককলিয়ার। এটি খুবই অত্যাধুনিক একটি যন্ত্র। পৃথিবীর যাবতীয় শব্দ, কথা, সুর থেকে প্রায় পুরো জীবন বঞ্চিত থাকার পর, এখন দুকান ভরে তিনি এসব শুনতে পারেন। এখন তিনি চান, তার মতো বধির মানুষদের সাহায্য করতে।

সূত্র : বিবিসি