ভারতে ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন করলেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী

প্রকাশিত: ৫:০১ অপরাহ্ণ, মে ২৫, ২০১৮

ভারতে ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন করলেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী

Manual7 Ad Code

কলকাতা: ভারতের শান্তিনিকেতনে ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এরপর শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

শুক্রবার দুপুরে শান্তি নিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তেন অনুষ্ঠান শেষে ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই ভবনে নির্মিত হয়েছে আধুনিক থিয়েটার, প্রদর্শনী কক্ষ, বিশাল লাইব্রেরি। এই লাইব্রেরিতে রয়েছে সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাস এবং বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক সম্পর্কিত গ্রন্থ। এছাড়া ভবনের প্রবেশ দ্বারের দুই প্রান্তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মুর‌্যাল স্থাপন করা হয়েছে।

Manual3 Ad Code

মোদী বলেন, ‘এই শুভদিনে সকলকে প্রণাম। কবিগুরুর শান্তিনিকেতনে এসে আমি গর্বিত। বিশ্বভারতীতে আমি অতিথি নই, আমি আচার্য হিসাবে এসেছি। গুরুদেবের বিশ্বভারতী আমার কাছে মন্দিরের মতো। এই আম্রকুঞ্জ বহু ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী। সব ছাত্রছাত্রীকে জানাই আমার শুভকামনা।’

মোদী দাবি করেন, ‘রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভাবনার ফসল এই শান্তিনিকেতন। এক ছাতায় গোটা বিশ্বকে এনেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। প্রকৃতি কীভাবে আমাদের শক্তি দিতে পারে তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ শান্তিনিকেতন। সারা বিশ্বকে আপন করে নিয়েছিলেন গুরুদেব। সারা পৃথিবীতে বন্দিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজ পৃথিবীতে বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে কবিগুরুকে নিয়ে চর্চা হয়। আফগানিস্তানে রবীন্দ্রনাথের কাবুলিওয়ালার গল্প সবাই জানে। রবীন্দ্রনাথই প্রথম বিশ্ব নাগরিক।’

এর পর বক্তব্যে মোদী আরো বলেন, এক সমাবর্তনে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। এমন সমাবর্তন আর কোথায় হয়েছে? যে স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গুরুদেব, তাকে এগিয়ে নিয়ে চলার কাজ আজও চলছে। সব শুভবুদ্ধি প্রকৃতির সান্নিধ্যেই বিকাশ ঘটে। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার বিকাশ ঘটানো হবে। এই এলাকার উন্নয়ন ঘটানো হবে।

মোদী বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশ দুটি দেশ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সঙ্গে উপস্থিত আছেন। ভারত এবং বাংলাদেশ দুটি পৃথক দেশ, কিন্ত আমাদের স্বার্থ পরস্পরের সঙ্গে জড়িত। সেটা সংস্কৃতি হোক বা জননীতি। আমরা একে অপরের থেকে প্রচুর শিখি। তারই একটা উদাহরণ বাংলাদেশ ভবন।’

এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে দুদিনের সরকারি সফরে ভারতের কলকাতায় পৌঁছেছেন। দুই প্রধানমন্ত্রী শান্তিনিকেতনে নবনির্মিত বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করবেন এবং সেখানে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামীকাল শনিবার দুইজনের মধ্যে এই বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন মমতা নিজেই।

শুক্রবার সাড়ে এগারটার দিকে এই সমাবর্তেনে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে সকাল সাড়ে নয়টা দিকে কলকাতায় নেতাজী সুবাস চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন। এরপর বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে কলকাতা থেকে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার উত্তরে বীরভূম জেলার বোলপুর শান্তি নিকেতনে যান। এর আগে সকাল নয়টা দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে তাকে বহনকারী বিমান।

Manual8 Ad Code

এই সফরে তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শান্তি নিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছাড়াও আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট অব লিটারেচার (ডিলিট) গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ কথা জানান।

এখান থেকে শেখ হাসিনা কলকাতা ফিরে এসে জোড়াসাকো ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করবেন। সন্ধ্যায় হোটেল তাজ বেঙ্গলে কলকাতা চেম্বার নেতারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

শনিবার (২৬ মে) প্রধানমন্ত্রী আসানসোলে যাবেন। সেখানে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ সমাবর্তনে শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচ ডিলিট ডিগ্রী প্রদান করবে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণের পর মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বর্ণপদক প্রদান করবেন। অনুষ্ঠানে পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী বক্তৃতা করবেন। এরপর তিনি কলকাতায় ফিরে নেতাজী সুবাস বসু যাদুঘর পরিদর্শন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর শনিবার (২৬ মে) রাতে দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামীকাল শনিবার দুইজনের মধ্যে এই বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন মমতা নিজেই। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর সমাবর্তন এবং বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার শান্তিনিকেতনে এসে মমতা বলেন, ‘হাসিনাজির সঙ্গে আমার একটি বৈঠক ঠিক করেছি। সেটা আগামী শনিবার উনি বাংলাদেশ ফিরে যাওয়ার আগে হবে। ওইদিন সন্ধেবেলা আমরা দুইজন কথা বলবো। আমি হাসিনাজিকে খুব ভালোবাসি, উনিও আমাকে খুব স্নেহ করেন।’

মমতা আরো বলেন, ‘হাসিনাজি আসছেন, সঙ্গে ওর ছোট বোন রেহানা আসছেন। বাংলাদেশের অনেক মন্ত্রী আসছেন। আমরা খুব খুশি যে তারা আসছেন। আমাদের এই সম্পর্ক, আমাদের এই আন্তরিকতা চিরকালীন। দুই দেশের মধ্যে আমরা অনেক সময়ে বৈঠক করেছি। উনি ব্যক্তিগতভাবে আমাকে খুব ভালোবাসেন। এপার বাংলা ওপার বাংলার মধ্যে সম্পর্ক চিরকালীন, সার্বজনীন এবং বিশ্বজনীন। এটা বিশ্ববাংলার একটা রূপরেখা, এখানে কোনো সীমারেখা কাজ করে না। এখানে আমাদের সভ্যতা, আমাদের আন্তরিকতা, আমাদের সংস্কৃতি কাজ করে। উনিও আমায় খুব ভালোবাসেন।

Manual6 Ad Code

গত কয়েক বছর আগে ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের সময়ে উনি ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। খুব সম্মান দিয়েছিলেন। শুধু আজ নয়, উনি যখন বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেত্রী ছিলেন, তখনও আমার সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো। আজ নয়, চিরকাল। আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক চিরকাল থাকবে। বাংলাদেশকে আমার অভিনন্দন। বাংলাদেশ আরো ভালো থাকুক, আরো এগিয়ে চলুক। ভারতবর্ষের এবং বাংলাদেশের আরও উন্নতি হোক, এটা আমরা সব সময়ই চাই।’

Manual2 Ad Code

মমতা এদিন বাংলাদেশ থেকে ইলিশ মাছ আমদানি প্রসঙ্গে বলেন, ‘ইলিশ তো আমরাও উৎপাদন করছি। বাংলাদেশ তো দেয়, আমি কেন ইলিশ নিয়ে ঝগড়া করতে যাবো? বাংলাদেশের ইলিশ তো আমরা খাই। সুতরাং দুই দেশের ইলিশ খাবো। দুই বাংলার মিলন ছিলো, আছে, থাকবে। পশ্চিমবাংলার সংস্কৃতি এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতির মধ্যে কোনো ও পার্থক্য নেই। আমরা সবাই এক।

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code