দলীয় লোক নিয়োগের দাবি : আ,লীগ-ছাত্রলীগের বাধায় রাবিতে নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ

প্রকাশিত: ৩:৩৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬

রাবি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় প্রার্থীদের নেয়াসহ বিভিন্ন শর্ত শিথিলের দাবিতে ফটকে তালা ঝুলিয়ে নির্ধারিত চাকরির পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা।

শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসহ পরীক্ষা কেন্দ্রে তালা ঝুলিয়ে প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেয় তারা।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীর জানায়, শুক্রবার সকালে নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা চতুর্থ বিজ্ঞান ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। এসময় পরীক্ষা দিতে আসা বাহিরে অবস্থানকারীদের ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়। অনেকের আবার প্রবেশপ্রত্র ছিড়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এসময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পাশাপশি মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষ, মতিহার থানা আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে।

অন্যদিকে মতিহার থানা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রধান ফটক, বিনোদপুর ফটক, কাজলা ফটক ও স্টেশন বাজার এলাকায় তালা ঝুলিয়ে অবরোধ করে রাখে মহানগর আওয়ামী লীগ, বিশ্ববিদ্যালয়, রুয়েট ও মহানগর ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা।

এসময় নেতা-কর্মীদের সাথে অবস্থান করছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। তিনি প্রধান ফটকের সামনে এক বক্তব্যে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের নেতা-কর্মীদের নিয়োগ না দিয়ে, জামাত-শিবিরকে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের সাথে যতক্ষণ না সমঝোতায় বসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো নিয়োগ পরীক্ষা হতে দিব না।’

নিয়োগে শর্তের বিষয়ে ডাবলু সরকার বলেন, ‘চাকরি বয়সসীমা ৩০ বছর করা হয়েছে। অন্যকোনো বিশ্ববিদ্যালয় এই নিয়ম নেই। আমরা এই নিয়ম প্রত্যাহার করে পূর্বের নিয়ম বহল রাখার দাবী জানাচ্ছি।’

এদিকে দূর-দূরান্ত থেকে নিয়োগ পরীক্ষা দিতে আসা ব্যাক্তিরা পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। অনেকে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের হেনাস্তার শিকার হয়েছেন। অনেকের আবার ছিড়ে দেওয়া হয়েছে প্রবেশ পত্র।

জয়পুরহাট থেকে পরীক্ষা দিতে আসা রকিব নামের একজন বলেন, আজকে আমার সোনালী ব্যাংকেও একটি পরীক্ষা ছিল, সেটা বাদ দিয়ে এখানে পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম। কিন্তু ছাত্রলীগের কারণে দুই দিকেই পরীক্ষা দিতে ব্যর্থ হলাম। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশ ফটকগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ঢুকতে ও বাহির হতে পারছে না কেউ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মুজিবুল হক আজাদ খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের লোকজন এসে পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছে। তবে আমরা পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করে যাবো। এজন্য আমরা পুলিশ প্রশাসনের সাহায্য চেয়েছি।’

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নিতে চেয়েছিলাম। সে অনুযায়ী সকালে পরীক্ষা শুরু হয়। কিন্তু মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পরীক্ষার হলে ঢুকে চাকরি প্রার্থীদের বের করে দিয়েছে। আমরা পরীক্ষা নেওয়ার জন্য চেষ্টা করবো।’

তিনি আরো বলেন, ‘ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। সবাই দেখতেও পাচ্ছে তারা এসব কাজকর্ম করে যাচ্ছে, পরীক্ষা বন্ধ করে দিচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে তারা আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেনি।’

সকালের পরীক্ষায় বিবলিওগ্রাফার কাম রেফারেন্স সহকারী দুইজন ও ক্যাটালগার একজনের পদের বিপরীতে মোট ৭০ জন অংশ নেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু পরীক্ষা দিতে ঢুকলেও নেতাকর্মীরা বের করে দেয়। ১০-১১টায় ডাটা অ্যান্ট্রি অপারেটরে ২০ পদের বিপরীতে ৩১০০ জনের পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে তারা পরীক্ষা দিতে ঢুকতেই পারেনি। বিকেল ৩-৪টায় গ্রন্থাগার সাকারীসহ ৪ পদের বিপরীতে ১৫০ জনের পরীক্ষা অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর রাবি স্কুলের একটি নিয়োগ পরীক্ষার সাক্ষাৎকার বন্ধ করে দেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট