জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও খালেদা জিয়াকে নিয়ে রাজনীতি ও আইনি মারপ্যাঁচের নিষ্ঠুরতা

প্রকাশিত: ২:৪৫ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০২১

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও খালেদা জিয়াকে নিয়ে রাজনীতি ও আইনি মারপ্যাঁচের নিষ্ঠুরতা

Manual4 Ad Code

 ইসহাক সরকার

Manual8 Ad Code


বিশেষ প্রতিবেদকঃ মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার

বিদেশে নিয়ে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার কোনো সুযোগ আইনে আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে- সরকারের তরফে এমন একটি আশ্বাসে ঘুরানো হচ্ছে বিএনপিকে। চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে যেতে তার পরিবার ও দল থেকে বারবার আবেদন করা হচ্ছে। ৭৬ বছর বয়সি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় আক্রান্ত। করোনা আক্রান্ত হয়ে খালেদা জিয়া ৫৩ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তখন তাকে পাঁচ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে; যা তার মতো একজন বয়স্ক মানুষের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।
গত ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়া নতুন উপসর্গ নিয়ে আবার হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন তার একটি বায়োপসি করা হয়। কিছুদিন বাসায় থাকার পর ১৩ নভেম্বর আবারও তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এবার রক্তদানের পাশাপাশি তার এন্ডোস্কপিও করা হয়েছে। টানা ২৬ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ৭ নভেম্বর বাসায় ফেরেন তিনি। এর ছয় দিনের ব্যবধানে খালেদা জিয়াকে আবার ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির পর ১৪ নভেম্বর দিবাগত রাত থেকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে সিসিইউতে রাখা হয়েছে। এ রোগের চিকিৎসা সব দেশে নেই। তা সম্ভব কেবল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির বিশেষায়িত হাসপাতালে।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান। করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে গত বছরের ২৫ মার্চ সরকার শর্তসাপেক্ষে সাজা স্থগিত করে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করে করে তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়৷ সর্বশেষ ১১ নভেম্বর খালেদা জিয়ার পুত্রবধু শর্মিলা রহমান খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর আবেদন করেন৷ এর আগে ৬ মে বিদেশে পাঠানোর আবেদন করা হলেও তা নাকচ হয়৷
সেটা আইন ও ক্ষমতার আলোকে প্রধানমন্ত্রীই করেছেন। প্রধানমন্ত্রী চাইলে হয় না, বাংলাদেশে এমন কিছু নেই- এমনটি আর দেশে বিতর্কের বিষয় নয়। এর জলন্ত প্রমান পর্যাপ্ত। বিশ্বাসীও প্রচুর। রয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। সাংবিধানিকভাবেই তার ক্ষমতা এতই যে, তিনি শুধু প্রাকৃতিক বিষয়গুলোর বাইরে সব করতে পারেন। অর্থাৎ তিনি চাইলেই বিএনপির দাবি অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়া সম্ভব। বিষয়টা নির্ভর করছে তার চাওয়া-না চাওয়ার ওপর।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়া নিয়ে বিতর্কের ঢেউয়ের মধ্য নানা কথা যোগ হচ্ছে। আইনি মারপ্যাঁচের বাহাসে সরকার থেকে বলা হয়েছে রাষ্ট্রপতির কাছে দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাইলেই খালেদা জিয়া দেশের বাইরে যেতে পারবেন। খালেদা জিয়াকে জেলখানায় গিয়ে আবার আবেদন করার মতো নিষ্ঠুর পরামর্শও বাতলানো হচ্ছে। এ ছাড়া সরকারের হাতে কোনো পথ নেই। চাইলে বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনতে পারেন। সরকার সারাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার নজির নেই দাবি করলেও বাস্তবে এমন নজির রয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত জাসদ নেতা আ স ম রবকে ১৯৭৯ সালে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানি নেয়া হয়েছিল। একই কারণে ২০০৮ সালে মোহাম্মদ নাসিম ও আবদুল জলিলকেও বিদেশে পাঠানো হয়েছিল।ওই ক্ষেত্রে মানবিক বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছিলে সবার আগে। সেই উদাহরণ টেনে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪০১ ধারার বিধানমতে, সরকার শর্তহীন বা শর্তযুক্তভাবে কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির দণ্ড মওকুফ করতে পারেন। এ আইনেই বলা হয়েছে, সরকার প্রয়োজন মনে করলে যেকোনো সময় এটার পরিবর্তন, সংযোজন এবং অন্য কোনো শর্ত আরোপ করতে পারেন। অর্থাৎ এটা সম্পূর্ণভাবে সরকারের এখতিয়ার।
বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে সন্দেহ থাকার কথা নয়। উচিৎ নয়। এরপরও সরকারি মহল থেকে রসিকতা-মশকরা চলছে। তার চিকিৎসকরা বলছেন, দেশে চিকিৎসা করে খালেদা জিয়াকে সুস্থ করা সম্ভব নয়। এ কারণেই তাকে বিদেশে উন্নত কোনো মেডিক্যাল সেন্টারে দ্রুত স্থানান্তরের কথা আসছে। মেডিক্যাল বোর্ড স্পষ্টভাবে বলেছে যে, খালেদা জিয়া এমন একটি অবস্থায় আছেন, তা এখন সমাধানযোগ্য। কিন্তু সময়োপযোগী চিকিৎসা দেওয়া না হলে অঘটন ঘটে যেতে পারে। মানুষের জীবন-মৃত্যু সর্বশক্তিমান আল্লাহর হাতে। তবু বলা যায় একজন লিভার সিরোসিস রোগীর যখন রক্তপাত শুরু হয় তখন তার জীবনের সময় ফুরিয়ে আসছে বলে শঙ্কা দেখা দেয়।
উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হতে হতে আজকের এ অবস্থা তার। খালেদা জিয়া তার পুরানো জটিল রোগগুলো ছাড়াও ডিকমপেন্স্যাটেড লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন। শরীর থেকে রক্ত যেতে যেতে তার হিমোগ্লোবিন একেবারে কমে গেলে এবং রক্তবমি হতে থাকলে তাকে এবার হাসপাতালে নেয়া হয়। মারুফ কামাল খানের অভিযোগ: বেগম জিয়া দীর্ঘদিন ধরেই আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ এবং হার্ট, কিডনি ও চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি নিয়মিত চিকিৎসাধীন ও চিকিৎসকদের তদারকিতে ছিলেন। তাকে জেলে নেয়ার পর সব বন্ধ হয়ে যায়। সেই বিবেচনায় পরিবার ও দল থেকে বলা হচ্ছে, তাকে তিলে-তিলে শেষ করা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। জবাবে, মন্ত্রী পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিলে, সেখানে মা-ছেলে মিলে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবেন৷ কথার পিঠে কথার অভাব নেই। যে কারো বাঁচা-মরার সন্ধিক্ষণে এ ধরনের বাহাস দুঃখজনক। সবক্ষেত্রে নীতিহীনতার চর্চা আমাদের ভবিষ্যতকে কেবল আরো অন্ধকারই করছে।

Manual4 Ad Code

প্রধানমন্ত্রী, বেগম জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে আদেশ দিতে কেন অনীহা বা বিলম্ব করছেন, এ বিষয়টি নিয়েও পাবলিক পারসেপশনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। পাবলিক মনে করে যে, (১) বিদেশে উন্নতমানের পরীক্ষা নিরীক্ষায় হয়তো এ মর্মে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে পারে যে, কারারুদ্ধ অবস্থায় সরকার বেগম জিয়াকে যথাযথ চিকিৎসা প্রদান না করে অপচিকিৎসা দেয়া হয়েছে, (২) সরকার হয়তো মনে করতে পারে যে, বেগম জিয়া এ দুনিয়া হতে যত তাড়াতাড়ি বিদায় নেবেন সরকারের জন্য ততই মঙ্গল, (৩) সরকারপ্রধান হয়তো ক্ষোভ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে বেগম জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তবে এখন যা হচ্ছে জাতির জন্য সৃষ্টি হবে একটি খারাপ দৃষ্টান্ত।

নব্বইয়ের স্বৈরশাসন অবসানের পর ১৯৯১ সালে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। যমুনা সেতুর মতো বড় বড় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তিনি পরিচালনা করেছেন। আজ দেশে নারী জাগরণ হয়েছে। লাখ লাখ মেয়ে শিক্ষায় এগিয়ে এসেছে। এতে তার অবদান রয়েছে। মেয়েদের জন্য তিনিই প্রথম উপবৃত্তি চালু করেন। প্রথমে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত, পরে এসএসসি পর্যন্ত। দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে তার একটি পা গুরুতর অসুস্থ। দেশের জনসাধারণ আন্তরিকভাবে চায় তিনি সুস্থ হয়ে উঠুন। এ জন্যই খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা করা খুব জরুরি।

তাই আসুন, দেশের জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় মহান আল্লাহর দরবারে সবাই দোয়া করি। নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির আসকারের মাধ্যমে মহান আল্লাহর কাছে তার জন্য দোয়া চাই। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার পক্ষ থেকে দোয়া মুমিনের জন্য বিশেষ উপহার। দোয়া করা ও দোয়া চাওয়া দু’টিই মহানবী সা:-এর সুন্নাত। মহানবী সা: বলেন, ‘আল্লাহর দৃষ্টিতে দোয়ার চেয়ে মহৎ কিছু নেই’ (সহিহ বুখারি-৫৩৯২)। একনিষ্ঠ মনে দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করেন; কারণ মহান আল্লাহ পরম দয়ালু ও অতীব ক্ষমাশীল। পবিত্র কুরআনের সূরা মুমিনের ৬০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো।’ মানুষের তাকদিরে সাধারণত কোনো পরিবর্তন হয় না। কিন্তু দোয়ার বদৌলতে তাকদিরও পরিবর্তন হতে পারে; কারণ আমাদের নবীজী সা: বলেছেন, ‘দোয়ার বদৌলতে তাকদিরের কিছু অংশ বদলে যায়।’ (জামে আত-তিরমিজি-২১৩৯) রোগব্যাধি যত কঠিন হোক দোয়ার বরকতে মহান আল্লাহ চাইলে সুস্থ করে দিতে পারেন। দুই হাত তুলে সেই মুনাজাতই করি মহান প্রভুর কাছে।

Manual1 Ad Code


লেখকঃ সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ

 

Manual7 Ad Code

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code