১৪ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:৩৩ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১, ২০১৬
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান বলেছেন, ‘আমি কোনো নারী সম্পর্কে খুব কমই বলি। কিন্তু আমি এখন আপনাদের বলছি, এই সম্মেলনে আমি যা দেখেছি তাতে বলতে পারি, শেখ হাসিনা বিশ্বের একজন অত্যন্ত সাহসী নারী। খুব কমসংখ্যকই এমন নারী আছেন, যারা দেশের জন্য এমন নিবেদিত।’
বাংলাদেশ-হাঙ্গেরি বিজনেস ফোরামের সমাপনী অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার তিনি এ সব কথা বলেন।
বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর কাছে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যে ‘দ্রুতগতির অগ্রসরমান দেশ’ হিসেবে উল্লেখ করে ভিক্টর বলেন, তার দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বৈদেশিক নীতি প্রাচ্যের জন্য উন্মুক্ত। বিশ্বের দ্রুতগতিতে অগ্রসরমান দেশসমূহে হাঙ্গেরি রপ্তানি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও পূর্বের ব্যাপক সম্ভাবনায় দেশসমূহে সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের শক্তিশালী ও বৃহৎ রাষ্ট্রসমূহ বাংলাদেশের বিকাশমান অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যের সম্ভাবনাময় দিকটি দেখতে পারে।
বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির শীর্ষ পর্যায়ের বাণিজ্যিক সংগঠন বিজনেস ফোরাম এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো একজন শীর্ষ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাঙ্গেরি সফর উপলক্ষে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশে ব্যবসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার উল্লেখযোগ্য দিকসমূহ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাঙ্গেরিয়ান ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা হাঙ্গেরিয়ান কোম্পানিগুলোকে চামড়া ও জুতো, পাট, সিরামিক, পেট্রোকেমিক্যালস, খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত, প্লাস্টিক সামগ্রী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, টেলিকমিউনিকেশন ও আইসিটি, পানি ও মেরিন এবং অবকাঠামোসহ বিভিন্ন সম্ভাবনাময় সেক্টরে বিনিয়োগের জন্য স্বাগত জানাচ্ছি।
বুদাপেস্ট মারিয়ট হোটেলে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমেদের নেতৃত্ব বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং হাঙ্গেরি চেম্বার অব কমার্সের (এইচসিসি) ভাইস প্রেসিডেন্ট এইচ ফারেন্স মিকলোসের নেতৃত্বে হাঙ্গেরির শীর্ষ ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাগণ যোগ দেন।
এ উপলক্ষে দুই দেশের শীর্ষ দুই ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই ও এইচসিসি’র মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়।
হাঙ্গেরিয়ান প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিমাণ ১৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ৬৭ শতাংশ, জার্মানের সঙ্গে ৫৭ শতাংশ ও ফ্রান্সের সঙ্গে ৬৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, এই তথ্য থেকে ভালোভাবে বুঝা যায়, বাংলাদেশে যথাযথ পেশাগত ও প্রযুক্তিগত সুবিধা বিদ্যমান, যার মাধ্যমে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করতে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করে হাঙ্গেরিয়ান প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা সামান্য কয়েকজন নেতার মধ্যে একজন যাকে আমরা খুব সম্মান করি। তার সাহস ও নির্ভীকতার কারণে তিনি আমাদের জন্য একটি ভালো দৃষ্টান্ত।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানিয়ে ভিক্টর অরবান বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেয়া উচিত, যেখানে ১৬ কোটি মানুষের দেশে ২০১০ সাল থেকে ৬ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত আছে।
তিনি বলেন, হাঙ্গেরি তার অর্থনীতিকে শক্তিশালী, সার্বভৌমত্বকে সুসংহত ও বিনিয়োগে আকর্ষণ করার লক্ষ্যে বৈদেশিক নীতিতে বড় ধরনের বিপ্লব ও পরিবর্তন সাধন করেছে।
আরবান বলেন, হাঙ্গেরির বিভিন্ন কোম্পানি বাংলাদেশে পানি ব্যবস্থাপনা, কৃষি, ফার্মাসিউটিক্যালস ও শিক্ষা প্রযুক্তি খাতে ভূমিকা রাখতে পারে। তাই হাঙ্গেরির কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের মত দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় নিতে পারে।
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাঙ্গেরির নগর এলাকায় পয়ঃনিষ্কাশন, পানি পরিশোধন ও বন্যার হাত থেকে সুরক্ষায় দক্ষ বিশেষজ্ঞ রয়েছে।
পানি ব্যবস্থাপনার দিক থেকে হাঙ্গেরিকে একটি খুবই উন্নত দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাঙ্গেরির প্রকৌশলী জ্ঞান, বিশেষজ্ঞ ও প্রযুক্তি সারাবিশ্বে কাঙ্ক্ষিত ও স্বীকৃত।
তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে বন্যা সুরক্ষা, উপকূলীয় এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধ এবং ড্রেনেজ সিস্টেম ও বর্জ্য পানি ব্যবস্থাপনায় আমাদের সহযোগিতা আরো জোরদারে সম্মত হয়েছি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় চেষ্টা করছি।’
আরবান বলেন, এক্সিম ব্যাংক অব হাঙ্গেরি ৯ কোটি ডলারের একটি তহবিল চালু করবে। আর বাংলাদেশ, হাঙ্গেরি বা পরস্পরের সঙ্গে ব্যবসারত কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ অর্থ ব্যবহার করতে পারে।
তিনি বলেন, ব্যবসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবনমান উন্নয়নের প্রচেষ্টা গতিশীল করে।
বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির মধ্যে বিদ্যমান সাংস্কৃতিক ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা চুক্তির কথা তুলে ধরে আরবান বলেন, চুক্তিটি একদমই সেকেলে।
তিনি বলেন, এ কারণে একটি নতুন চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নতুন চুক্তির রূপরেখা অনুযায়ী হাঙ্গেরি সেদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার জন্য বাংলাদেশের ১শ’ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে হাঙ্গেরির ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের সাফল্যের ইতিহাস আছে এবং বাংলাদেশ হল বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য যুক্তরাষ্ট্রসহ এখন বিশ্বের ৮৩ দেশে রপ্তানি হচ্ছে। আমরা খুবই দ্রুত সক্রিয় ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদান (এপিআই)সহ উঁচুমান ও স্বল্প মূল্যের ওষুধ তৈরির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক দেশ হিসেবে বিশ্বে আবির্ভূত হচ্ছি।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের আইসিটি ও সংশ্লিষ্ট খাতগুলো দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পও দ্রুত বিকাশ লাভ করছে। এখানে বিশ্বমানের হালকা থেকে মাঝারি ধরণের সমুদ্রগামী যান নির্মাণ করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর আরবানের সঙ্গে ফলপ্রসূ দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হওয়ায় তিনি খুবই খুশি। আলোচনাকালে আমরা দুই দেশের মধ্যে দ্বিমুখী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোসহ সম্পর্ক আরো গভীর ও জোরদার করতে একমত হয়েছি।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, দুই দেশের চেম্বারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক পারস্পরিক লাভজনক ব্যবসার সুযোগ সম্প্রসারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ডিজিটাল, জ্ঞানভিত্তিক মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে তার সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
শেখ হাসিনা হাঙ্গেরির ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘২০২১ ও ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের এ লক্ষ্য অর্জনে গৃহীত প্রচেষ্টার প্রেক্ষিতে আমি বিনিয়োগ ও ব্যবসায় আমাদের অংশীদার হতে আপনাদের ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করছি।’
তিনি বলেন, ‘আর আমরা একসঙ্গে দুই দেশের কোটি কোটি মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তন আনতে পারি।’
সূত্র : বাসস
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D