সংসদে তথ্যমন্ত্রী ইনুর ক্ষমা প্রার্থনা

প্রকাশিত: ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৬, ২০১৬

জাতীয় সংসদের তোপের মুখে ক্ষমা চেয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। প্রথমে স্পিকারের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেও পরে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে টিআর-কাবিখা প্রসঙ্গে বক্তব্য প্রত্যাহার করেছেন তিনি।

সোমবার মাগরিবের বিরতির পর ৩০ মিনিটের অধিক সংসদ কার্যক্রম বন্ধ ছিলো। এ সময় কোরাম পূরণ হলেও স্পিকারের অনুপস্থিতির কারণে সংসদ শুরু হতে বিলম্ব হয়।

রাত ৮টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে আসেন। পরে সংসদ কার্যক্রম শুরু হলে সংসদ সদস্যরা তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য রাখার সুযোগ চান।

শুরুতে স্পিকার এতে আপত্তি জানালেও পরে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ দাঁড়িয়ে হাসানুল হক ইনুকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী আমাদের সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছেন। তার এ বক্তব্যের জন্য তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। আর তথ্যমন্ত্রী তার নিজ এলাকায় কি কি কাজ করেছেন আগে তা খতিয়ে দেখতে হবে।’

আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর বক্তব্যের পর সংসদে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ।

তিনি বলেন, ‘সংসদে সবাই দোষী, একমাত্র তথ্যমন্ত্রীই সাধু। তিনি সংসদ সদস্যদের সম্পর্কে যে বক্তব্য রেখেছেন তা অবমাননাকর। আমরা যখন দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি সেসময় তিনি এমন বক্তব্য রেখে জাতিকে বিভ্রান্ত কলেন। তার এই বক্তব্য ক্ষমার অযোগ্য। আমরা সবাই চলে যাই, তাহলে আপনি সংসদ চালাবেন কিভাবে? তিনি একজন তথ্যমন্ত্রী হয়ে জাতিকে কি তথ্য দিলেন? তাকে অবশ্যই নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।’

এ সময় সংসদ সদস্যরা তার পদত্যাগ দাবি করে চিৎকার করতে থাকে। তবে প্রধানমন্ত্রীর ইশারায় সংসদ সদস্যরা কিছুটা শান্ত হন।

এরপর পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘তিনি (তথ্যমন্ত্রী) এ তথ্য কোথায় পেলেন, তার ব্যখ্যা তাকে দিতে হবে। তার এই বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী, আপনিসহ (স্পিকার) এই সংসদের কোনো সদস্যই বাদ পড়ে না। আমি তথ্যমন্ত্রীকে বলতে চাই, আপনি আপনার সব মিডিয়া এবং দুদক নিয়ে আমার এলাকায় তদন্ত করেন, কোনো অনিয়ম পেলে আমি পদত্যাগ করব। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে কেবিনেটে বলতে পারেন। ঢালাওভাবে মন্তব্য করে সংসদ সদস্যদের অপমান করেছেন। এ অধিকার জাতি তাকে দেয় নাই।’

এরপর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে বক্তব্য রাখার আহ্বান জানান স্পিকার। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি বলেন, ‘টিআর-কাবিখা প্রসঙ্গে একটি বক্তব্যের ভুল বোঝাবুঝির কারণে সংসদ সদস্যরা কষ্ট পেয়েছেন। এ জন্য আমি তাদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। গতকালই গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছি। আমি মূলত আমার সেই বক্তব্যে অতীতের সরকারের অনিয়মের কিছু তথ্য দিয়েছিলাম। এ সময় কিছু উদাহরণ টেনেছিলাম মাত্র।’

তার এ বক্তব্যের পর আবারো সংসদে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। তবে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্যরা ইশারায় সবাইকে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও উত্তেজনা বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্পিকার সংসদ সদস্যদের এ বিষয়ে আর কোনো বক্তব্য থাকলে তার সাথে আলাপ করার পরামর্শ দেন।

এ সময় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য আবু হোসেন বাবলা চিৎকার করে বলেন, ‘ওনাকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। উনি এমন বক্তব্য রাখতে পারেন না।’

পরে তথ্যমন্ত্রী আবার দাঁড়িয়ে তার এ বক্তব্যের জন্য সংসদ সদস্যদের কাছে দুঃখ প্রকাশ ও নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে তার সেই বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট