২৭শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:২০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৩০, ২০১৬
বাংলাদেশ ব্যাংকের বহুল আলোচিত রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আটকে রেখেছেন বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সংসদীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধির কাছে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন নেতৃত্বাধীন কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হলে তারা বলেন, অর্থমন্ত্রী এ প্রতিবেদন আটকে রেখেছেন। এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায়ও চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার প্রতিবেদন চাওয়া হলেও প্রতিবেদন না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে প্রতিবেদন প্রকাশ করার ঘোষণা দিয়ে দীর্ঘ ৬ মাসেও প্রকাশ করেননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বহুল আলোচিত রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তদন্তে সরকার গঠিত কমিটির প্রধান ড: ফরাসউদ্দিন গত ৩০ মে ওই তদন্ত প্রতিবেদন সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে জমা দেয়ার পর অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছিলেন, রিপোর্টে যা আছে, তা অবশ্যই প্রকাশ করা হবে। কিন্তু এ পর্যন্ত কয়েক দফা সময় দিয়েও কথা রাখেননি মুহিত। এবার তিনি যুক্তি হিসেবে ফিলিপিন্সে টাকা উদ্ধারে মামলা চলার কথা বলেছেন। এমনকি সরকারি দুটি সংসদীয় কমিটিও জানতে পারেনি কি আছে তদন্ত প্রতিবেদনে। গতকাল মঙ্গলবার সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধির কাছে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন নেতৃত্বাধীন কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিরা বলেন, অর্থমন্ত্রী এ প্রতিবেদন আটকে রেখেছেন। এ প্রতিবেদনের কপি বাংলাদেশ ব্যাংকেও দেয়া হয়নি। ফলে চিহ্নিত করা যায়নি ব্যাংকের দুর্নীতিবাজ ও অবহেলাকারী জড়িতদের। : সংসদীয় কমিটির সভা শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি শওকত আলী বলেন আমরা ফরাসউদ্দিন সাহেবের প্রতিবেদন দেখতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, ‘ওই প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রীর কাছে রয়েছে, তিনি প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না’। এই জবাব পেয়ে সংসদীয় কমিটি প্রতিবেদনটি জোগাড় করে পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিনিধিকে বলেছেন। শওকত আলী বলেন, “অর্থমন্ত্রী দায়িত্বশীল ব্যক্তি। কিন্তু সংসদ এবং সংসদীয় কমিটিকে তো এটা (প্রতিবেদন) দেখাতে হবে।” : গত ফেব্রুয়ারিতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রাখা বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মেসেজে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপিন্সের একটি ব্যাংকে। আর আরেক আদেশে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয় ২০ লাখ ডলার। শ্রীলঙ্কায় পাঠানো অর্থ আটকানো গেলেও ফিলিপিন্সের ব্যাংকে যাওয়া অর্থের বেশিরভাগটাই স্থানীয় মুদ্রায় বদলে জুয়ার টেবিল ঘুরে চলে যায় নাগালের বাইরে। তার কিছু অংশ উদ্ধারের পর সম্প্রতি বাংলাদেশ ফেরত পেয়েছে। বিশ্বজুড়ে আলোচিত এই ঘটনায় সমালোচনার মুখে গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন আতিউর রহমান; কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে আনা হয় বড় ধরনের রদবদল। মার্চ মাসে সরকারের প থেকে গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি, যার প্রধান করা হয় সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনকে। ফরাসউদ্দিন গত ৩০ মে ওই প্রতিবেদন দেয়ার পর অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, “রিপোর্টে যা আছে, তা অবশ্যই প্রকাশ করা হবে।” এরপর কয়েক দফা সময় দিয়েও কথা রাখেননি মুহিত। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিবেদন প্রকাশ করার দিনণ ঠিক করে দিলেও তিনি পরে তার অবস্থান থেকে সরে যান। এর আগে প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিও ােভ প্রকাশ করে। তারপরে সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটিও ওই প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চেয়েছিল। : সংসদীয় কমিটির বৈঠক নিয়ে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে আহবায়ক করে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টটি সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটিতে উপস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়।” : সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী মোট খোয়া গেছে ৮১ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ১৫ মিলিয়ন ডলার পাওয়া গেছে। বাকি ৬৬ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৩৪ মিলিয়ন পাইপলাইনে আছে। আর বাকি ৩২ মিলিয়ন ডলারের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।” কমিটি ওই ৩২ মিলিয়ন ডলার চিহ্নিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবস্থা নিতে বলেছে বলেও জানান তিনি। শওকত আলীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়া, আবদুর রউফ এবং নাভানা আক্তার অংশ নেন। : এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ না হওয়ায় ‘ােভ’ প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি। কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি ড: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “প্রতিবেদনটা কেন এখনও রেখে দিয়েছে। আমরা এটা কমিটির কাছে দিতে বলেছি।” সাবেক এই খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “কমিটির সব সদস্য মনে করেন, ৮০ মিলিয়ন ডলার যেটা গেছে সেটাতো গেছে। কিন্তু দেশের ভাবমূর্তিটা বড় বিষয়। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করাটা জরুরি। কারা দায়ী সেটা বের করতে পারলে অন্যান্য দেশও এ বিষয়ে সজাগ হতে পারবে।” : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির বিষয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, সেপ্টেম্বরে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার আগেই তিনি ওই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে যাবেন। কিন্তু এর আগে বুধবার সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের ডেকে জানিয়ে দেন, সহসা ওই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে না। “এটা আমার ঘোষণা মত কালকে প্রকাশ করা হবে না। বেশ দেরি হবে।” : বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কীভাবে, কার বরাবরে ভুয়া পেমেন্ট ইন্সট্রাকশন পাঠানো হয়েছিল, অবৈধ পরিশোধ ঠেকাতে পর্যাপ্ত পদপে নেয়া হয়েছিল কি না, রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রায় এক মাস গোপন রাখা যৌক্তিক ছিল কি না, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের অবহেলা ছিল কি না এবং অর্থ উদ্ধারের সম্ভাবনা, গৃহীত কার্যক্রমের পর্যাপ্ততা ও পুনরাবৃত্তি রোধে গৃহীত ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল কমিটিকে। বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী গত ২০ এপ্রিল অর্থমন্ত্রীর কাছে অন্তর্র্বর্তীকালীন প্রতিবেদন জমা দেয় ফরাসউদ্দিনের কমিটি। এরপর ৩০ মে দেয়া হয় পুরো প্রতিবেদন। প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর তদন্ত কমিটির প্রধান ফরাসউদ্দিন বলেছিলেন, রিজার্ভ চুরিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কারও সম্পৃক্ততা নেই বলে আগে তারা ধারণা করলেও চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ওই অবস্থান থেকে ‘সামান্য’ সরে এসেছেন। ভুয়া সুইফট মেসেজ পাঠিয়ে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সাইবার চুরির ওই ঘটনায় কারা কারা জড়িত, সে বিষয়ে তদন্ত কমিটি কী কী সুপারিশ করেছে- সে তথ্য প্রকাশ করেননি তদন্ত কমিটির প্রধান বা অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কয়েক দফা সময় দেয়ার পরও ওই প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশিত না হওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ‘ােভ’ প্রকাশ করা হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান বিষয়ক সংসদীয় কমিটিও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেখতে চায়।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D