২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৭, ২০২১
লকডাউনের কারণে তিন দিন বন্ধ থাকার পর আজ শনিবার থেকে পাঁচটি দেশে বিদেশগামী প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য বিমানের বিশেষ ফ্লাইট শুরু হচ্ছে। শ্রমবাজার অধ্যুষিত সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও সিঙ্গাপুরে এই ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ-বেবিচক। মূলত এসব দেশে নিয়মিত পরিচালিত ফ্লাইটগুলোই লকডাউনের সময়ে বিশেষ ফ্লাইট হিসেবে পরিচালিত হবে।
এর আগে গত বুধবার সচিব পর্যায়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে পাঁচটি দেশে বিদেশগামীদের জন্য বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরের দিন বৃহস্পতিবার মন্ত্রী পর্যায়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শনিবার থেকে এই বিশেষ ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত আসে। বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান জানান, বিভিন্ন উড়োজাহাজ কোম্পানির নির্ধারিত যেসব ফ্লাইট আছে, সেগুলোই বিশেষ ফ্লাইট হিসেবে যাওয়ার অনুমতি পাচ্ছে। আর নিষেধাজ্ঞার প্রথম তিন দিনে যেসব ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, ওই ফ্লাইটের প্রবাসী যাত্রীদের তালিকা তৈরি করবে প্রবাসী মন্ত্রণালয়। তারপর তাদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আলাদা ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মো: মাহবুব আলীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেবিচক চেয়ারম্যান, বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিদেশগামী যাত্রীদের করোনাভাইরাস নেগেটিভ সনদসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিমানবন্দরে আনার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির। আর যারা এসব দেশ থেকে (প্রবাসী কর্মী) জরুরি প্রয়োজনে ফিরতে চান তাদের সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ মিশনের ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। কোয়ারেন্টিন শর্ত মেনে কোভিড নেগেটিভ সনদ নিয়ে তারা দেশে আসতে পারবেন। এর আগে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে অন্তত ৩০ হাজার পুরোনো ও নতুন কর্মী বিদেশে গিয়ে কাজে যোগদান অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েন। জনশক্তি খাতের ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা বিদেশে যাওয়ার ফ্লাইট খুলে দেয়ার দাবি জানান।
এ বিষয়ে বায়রার সাবেক মহাসচিব ও অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্সিজ বাংলাদেশ (আটাব) সভাপতি মনসুর আহমেদ কালাম দৈনিক নয়া দিগন্তকে গতকাল বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের রিয়াদমুখী প্রথম ফ্লাইটটি ছিল ভোর ৪টায় এটি কাল (শনিবার) সকাল ৬টায় ছেড়ে যাবে। কালকে ৫-৬টা ফ্লাইট যাবে মিনিমাম। প্রতিদিন ৮-১০টা ফ্লাইট সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে যাবে। স্পেশাল ফ্লাইটের আদলে এই ফ্লাইট। কিন্তু বিশেষ ফ্লাইট সাধারণত যাত্রী নিয়ে আসে না। অনওয়ে যায়, খালি ফিরে আসে। এরা শুধু বিদেশগামীদের নিয়েই যাবে না, ওইসব দেশ থেকে যাত্রীও (প্রবাসী, যারা ছুটি বা নানা দেশে আসার অপেক্ষায়) নিয়ে আসবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদিয়া এয়রালাইন্স, ইউএস বাংলা, সালাম এয়ার-এরা এই ফ্লাইট পরিচালনা করবে। তিনি বলেন, যাত্রীদেরকে অবশ্যই কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ লাগবে। ভিসা-ম্যানপাওয়ার আছে তারাই যেতে পারবেন। টিকিটের দাম আগে যা ছিল তাই-ই থাকবে।
এ দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স জানিয়েছে রিয়াদগামী শনিবারের স্পেশাল ফ্লাইট (বিজি৫০৩৯) ভোর ৪টার পরিবর্তে সকাল সোয়া ৬টায় হজরত শাহজালাল আন্তজাতিক বিমানবন্দর থেকে ছাড়বে। এ দিন রিয়াদ, দাম্মাম, জেদ্দা, দুবাই, আবুধাবী, মাস্কাট, দোহা ও সিঙ্গাপুর গন্তব্যে স্পেশাল ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। যাত্রীদের করোনার নেগেটিভ সনদসহ যাত্রার ৬ ঘণ্টা পূর্বে বিমানবন্দরে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশীদের জন্য নিষেধাজ্ঞা : অন্য দিকে বাংলাদেশের অন্যতম উচ্চমানের শ্রমবাজার খ্যাত দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সিউলে বাংলাদেশ দূতাবাস ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় আসা যাত্রীদের মধ্যে কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্তের হার বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। গতকাল শুক্রবার থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস।
এর আগে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ‘করোনা নেগেটিভ সনদে দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়ে পজিটিভ ১০ শতাংশের’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয় দৈনিক নয়া দিগন্তে। এতে দূতাবাস, বোয়েসেল ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সূত্র ধরে খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে করোনাভাইরাসের নেগেটিভ সনদ নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়ে পজিটিভ হচ্ছেন ১০ শতাংশেরও বেশি প্রবাসী (ইপিএস কর্মী)। বিষয়টি কোরিয়ায় বাংলাদেশীদের গমনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ অবস্থায় ঢাকাস্থ কোরিয়া দূতাবাস তিনটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানকে তাদের নির্ধারিত কোভিড পরীক্ষার প্রতিষ্ঠান থেকে বাদ দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় ইপিএস সিস্টেমে শুধু সরকারিভাবে তথা বোয়েসল কর্মী পাঠিয়ে থাকে। দেশটিতে প্রায় ১০ হাজার ইপিএস কর্মী রয়েছে বলে জানা গেছে। তৎকালীন বোয়েসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: সাইফুল হাসান নয়া দিগন্তকে নেগেটিভ সনদ নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়ে ১০ শতাংশের বেশি ইপিএস কর্মী পজিটিভ হওয়ার তথ্যটি নিশ্চিত করেন।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত চিঠির বরাত দিয়ে নয়া দিগন্তের ওই খবরে বলা হয়, ‘…ঢাকাস্থ দক্ষিণ কোরিয়া দূতাবাস কর্তৃক জুলাই ২০২০ থেকে দক্ষিণ কোরিয়া ভ্রমণকারী বাংলাদেশীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য ১৬টি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারণ করা হয়েছিল। দক্ষিণ কোরিয়া প্রবেশ করার জন্য বাংলাদেশীদের বিমানে আরোহণের আগে ৪৮ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদপ্রাপ্তি বাধ্যতামূলক করা হয়। গত ৩ ডিসেম্বর ঢাকাস্থ দক্ষিণ কোরিয়া দূতাবাস থেকে প্রেরিত এক কূটনৈতিক পত্র মারফত জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় ভ্রমণকারী বাংলাদেশী ইপিএস কর্মীদের ১০ শতাংশের বেশি যাত্রী কোরিয়ায় প্রবেশের পর কোভিড পজিটিভ শনাক্ত হয়, যদিও তারা বাংলাদেশ থেকে কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদপ্রাপ্ত ছিল। দক্ষিণ কোরিয়ায় ভ্রমণকারী বাংলাদেশীদের মধ্যে কোভিড আক্রান্তদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলছে, যা দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশীদের গমনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা দূরীকরণে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও কোরিয়াগামী বাংলাদেশীদের মধ্যে উদ্বেগজনকভাবে কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশীদের জন্য ভিসাপ্রাপ্তির প্রক্রিয়াকে ক্রমেই জটিলতর করছে। সর্বোপরি, দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’
চিঠিতে আরো বলা হয়, এমতাবস্থায় কোভিড নেগেটিভ সনদপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কোরিয়ায় পৌঁছানো পর করোনা পজিটিভ শনাক্তের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে ঢাকাস্থ দক্ষিণ কোরিয়া দূতাবাস কর্তৃক তিনটি প্রতিষ্ঠানকে তাদের নির্ধারিত কোভিড পরীক্ষার প্রতিষ্ঠানের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। সেগুলো হলো- কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার ও বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ।
বিএমইটি ও বোয়েসেল বরাবর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের লেখা চিঠিতে দক্ষিণ কোরিয়া সফরকারী বা ইপিএস কর্মীদের ঢাকাস্থ দক্ষিণ কোরিয়া দূতাবাস কর্তৃক নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান থেকে কোভিড-১৯ সনদ নিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়।
গতকাল বিকেলে এ বিষয়ে কথা হয়, দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসে নিযুক্ত শ্রম উইংয়ের প্রথম সচিব (উপসচিব) মুকিমা বেগমের সাথে। তিনি জানান, আগের মতোই ইপিএস কর্মীদের একটা অংশ সেখানে গিয়ে পজিটিভ হচ্ছে। এটা অব্যাহত থাকায় দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার বাংলাদেশী যাত্রীদের প্রবেশে এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D