১৬ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২:১০ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৪, ২০১৬
দৈহিক ও মানসিক সুস্থতার অনেকখানিই নির্ভর করে পর্যাপ্ত ঘুমের ওপর। এর ব্যত্যয় ঘটায় শরীরে বাসা বাঁধে নানা ব্যাধি। কেউ হাইপারটেনশনে ভুগে, কেউ আবার ডায়াবেটিসে।
দেশের তরুণদের অর্ধেকেরই সময় কাটছে নির্ঘুমে। এতে তােদর জীবনে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। বেড়ে যাচ্ছে স্থূলতার মতো সমস্যা। আর বহুবিধ এসব স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে কমছে কর্মক্ষমতা।
দেশে বিভিন্ন বয়সের ও পেশার মানুষের ঘুমের ব্যাপ্তি নিয়ে একটি জরিপ চালিয়েছেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের একদল গবেষক। জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে তৈরি প্রতিবেদনটি চলতি বছরের জুনে ইউরোপিয়ান স্লিপ রিসার্চ সোসাইটির প্রকাশনা জার্নাল অব স্লিপ রিসার্চে প্রকাশ হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনেই উঠে এসেছে অপর্যাপ্ত ঘুমের এ চিত্র। ঘুমের আদর্শ ব্যাপ্তি ধরা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের নীতিমালার আলোকে।দেশের ২৪টি উপজেলার ৩ হাজার ৯৯৭ জন মানুষের ওপর জরিপটি চালানো হয়েছে। এজন্য বয়স, পেশা, বৈবাহিক অবস্থা, শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক অবস্থা এবং অঞ্চলের ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করেন জরিপকারীরা। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
বয়সভিত্তিক ঘুমের ব্যাপ্তি গত বছর সর্বশেষ হালনাগাদ করে ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন। তাতে সদ্যজাত থেকে তিন মাস বয়সী শিশুর জন্য ঘুমের আদর্শ ব্যাপ্তিকাল ধরা হয়েছে ১৪-১৭ ঘণ্টা। এছাড়া ৪-১১ মাস বয়সী শিশুর জন্য ১২-১৫ ঘণ্টা, ১-২ বছরের জন্য ১১-১৪ ঘণ্টা, ৩-৫ বছরের জন্য ১০-১৩ ঘণ্টা, ৬-১৩ বছরের জন্য ৯-১১ ঘণ্টা, ১৪-১৭ বছর বয়সীদের জন্য ৮-১০ ঘণ্টা, ১৮-৬৪ বছর বয়সীদের জন্য ৭-৯ ঘণ্টা ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য ঘুমের আদর্শ ব্যাপ্তি ধরা হয়েছে ৭-৮ ঘণ্টা।
জরিপের ফলাফল বলছে, বাংলাদেশে স্কুলগামীদের ৫৫ শতাংশই নির্ধারিত সময়ের তুলনায় কম ঘুমায়। ৬-১৩ বছর বয়সী শিশুরা প্রতিদিন গড়ে ৮ দশমিক ৬ ঘণ্টা, ১৪-১৭ বছর বয়সীদের অধিকাংশই ঘুমায় ৮ ঘণ্টার নিচে। ১৮-৬৪ বছর বয়সীরা ঘুমায় প্রতিদিন গড়ে ৭ দশমিক ৭ ঘণ্টা ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরা ৭ দশমিক ৮ ঘণ্টা।
গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ডা. ফকির এম ইউনুস বলেন, ‘উন্নত বিশ্বের দেশগুলোয় মানুষের ঘুম-সম্পর্কিত নানা তথ্য রয়েছে। তবে দেশে এ ধরনের কোনো তথ্য ছিল না। অথচ এ তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্যই এ গবেষণার উদ্যোগ। এতে অনেক বিষয় উঠে এসেছে। এর একটি হলো, শিশুদের কম ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে উঠছে। অন্যদিকে বেশি বয়সীরা নির্ধারিত ব্যাপ্তির চেয়ে অতিরিক্ত সময় ঘুমাচ্ছেন।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে শরীরে হরমোনজনিত ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। এতে হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগের শিকার হতে হয় তাদের। বাড়িয়ে দেয় হূদরোগ ও স্থূলতার ঝুঁকিও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই মানবদেহের জন্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঘুম প্রয়োজন। এটি নতুন করে কাজের উৎসাহ ও উদ্দীপনার জোগান দেয়। তবে স্বল্প বা অতিরিক্ত ঘুম দুটোই স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। স্বল্প ঘুমের কারণে শিশুদের মেজাজ খিটখিটে হতে পারে। কমে যেতে পারে কর্মজীবী মানুষের কর্মস্পৃহা। সামগ্রিকভাবে দীর্ঘমেয়াদে উত্পাদনশীলতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এতে।
উচ্চরক্তচাপ যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় হাইপারটেনশন নামে পরিচিত। অপর্যাপ্ত ঘুম হাইপারটেনশনের অন্যতম কারণ। এছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ণ, মাত্রারিক্ত শব্দদূষণ, খোলামেলা স্থানের অভাবও এজন্য দায়ী। অতিমাত্রায় আয়বৈষম্য, শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে অসচেতনতা, আবাসন সংকট ও উচ্চ বেকারত্বের মতো আর্থসামাজিক বিভিন্ন অসামঞ্জস্যও উচ্চরক্তচাপের কারণ হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, গত তিন দশকে বাংলাদেশে উচ্চরক্তচাপে ভোগা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ব্যাপক হারে। ১৯৮৩-৯৯ সাল পর্যন্ত হাইপারটেনশনে আক্রান্ত হয়েছিল মাত্র ৭ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ। এর পর থেকেই বাড়ছে এ হার। বর্তমানে উচ্চরক্তচাপে ভোগা মানুষের সংখ্যা ১৭ শতাংশের বেশি। রোগটির ভয়াবহতার তথ্য উঠে এসেছে সরকারের প্রতিবেদনেও। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হেলথ বুলেটিনে বলা হয়েছে, সরকারি হাসপাতাল কিংবা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী ভর্তির দিক দিয়ে শীর্ষ দশে রয়েছে হাইপারটেনশনে আক্রান্তরা।
অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে বাড়তে পারে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও। ডব্লিউএইচওর তথ্য বলছে, গত তিন দশকে দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষ বেড়েছে প্রায় দেড় হাজার শতাংশ। ১৯৮০ সালে দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষ ছিল মোট জনসংখ্যার দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ শতাংশে। ১৯৯০ সালে রোগটিতে আক্রান্ত মানুষ বেড়ে দাঁড়ায় মোট জনসংখ্যার ৩ দশমিক ৩ শতাংশে। ২০০০ সালে এ হার আরো বেড়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছে।
স্থুলতার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে ঘুম ও খাদ্যাভ্যাসের। গবেষকরা দেখিয়েছেন, শৈশবে ঘুমের ব্যাপ্তি কম হলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওজন বাড়তে থাকে। পরিণতিতে তারা স্থূল হয়ে পড়ে। কম ঘুমের মতোই স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে অতিরিক্ত ঘুমও। ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঘুম হূদরোগের ঝুঁকি ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে।
ঘুমের ব্যাপ্তিকাল বিবেচনায় গবেষণায় নারী ও পুরুষের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য পাওয়া যায়নি জরিপে। তবে অন্যদের চেয়ে তুলনামূলক বেশি ঘুমান প্রতিবন্ধীরা। মূলত অধিকাংশ ক্ষেত্রে কর্মহীন থাকায় প্রতিবন্ধীরা ঘুমানোর সুযোগ পান। অবিবাহিতদের তুলনায় বিবাহিতরা কম সময় ঘুমিয়ে থাকেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা ঘুমের ব্যাপ্তিকালের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা সম্পন্নকারীদের মধ্যে বেশি সময় ঘুমানোর প্রবণতা কম। অন্যদিকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, এমন মানুষ তুলনামূলক বেশি সময় ঘুমায়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, কৃষিজীবীরা অন্যদের তুলনায় কম সময় ঘুমিয়ে কাটান। তাদের চেয়ে শ্রমিক, গৃহিণী, সেবা খাতের চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, ছাত্র ও বেকাররা বেশি ঘুমান। অঞ্চলভেদেও মানুষের মধ্যে ঘুমের ব্যাপ্তিকালে রয়েছে তারতম্য। চট্টগ্রাম ছাড়া দেশের বাকি বিভাগগুলোর মানুষ ঢাকা বিভাগে বসবাসকারীদের চেয়ে কম ঘুমায়।
এর কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকায় বসবাসকারীরা দিনের অনেকখানি সময়ই বসে কাটান। যানজট ও কাজের ধরন এজন্য দায়ী। এছাড়া দেশের শুষ্ক অঞ্চলের মানুষ অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি ঘুমান। শুষ্ক অঞ্চলের অতিরিক্ত গরম, ঘাম ও ক্লান্তির কারণে এমনটা হয়।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D