১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৬:১৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২০, ২০২১
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেট যৌথভাবে বুধবার (২০ জানুয়ারি) বেলা ৩ টায় মজুমদার বাড়ি দিঘিরপাড়ে ‘দিঘি রক্ষায় মানববন্ধন’ কর্মসুচি পালন করেছে। কর্মসূচি পালনকালে আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, দখলদারি, মানুষের ব্যক্তিস্বার্থে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে রামের দিঘি, তালতলা দিঘি, সাগর দিঘি, চারা দিঘি, লালদিঘি, মুক্তার বিল, জল্লার বিল সহ সিলেট নগরের অসংখ্য দিঘি-পুকুর ও জলাশয়।
জলাধার রক্ষায় আইন থাকলেও সেগুলো না মানায় একের পর এক ভরাট হয়ে গড়ে উঠছে আবাসন। সরকার জলাধার রক্ষায় ২০০০ সালে আলাদা আইন করলেও এর কোনো সুফল নেই। অথচ এ আইনে বলা আছে, কোনো অবস্থায় খাল, বিল, নদী-নালা, পুকুর ও প্রাকৃতিক জলাশয়ের স্বাভাবিক গতি ও প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না। এমনকি সড়ক-মহাসড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণকালেও প্রাকৃতিক জলাশয়, জলাধার, খাল-নদী ইত্যাদির স্বাভাবিকতা নষ্ট করা যাবে না।
জনস্বার্থে ও একান্ত প্রয়োজন হলে সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু জলাধার আইনের তোয়াক্কা না করেই পুকুর-দিঘি-জলাশয় দখল ও ভরাট করে স্থাপনা স্থাপনা নির্মান চলছে। সিলেট নগরে টিকে থাকা হাতেগোনা পুকুর ও দিঘি টিকে আছে। এর একটি হচ্ছে সিলেটের মজুমদারী দিঘি। যদিও দিঘিতে পানির কোন অস্তিত্ব নেই, কিন্তু এখনো খনন করে দিঘিটিকে সংরক্ষন করা সম্ভব। সম্প্রতি বিদ্যুতবিহীন সিলেট নগরে দিঘি-পুকুরের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা সিলেটের মানুষও সময়ে সময়ে দিঘি-পুকুর রক্ষায় সক্রিয় হয়ে উঠলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এক শ্রেণির দুর্বৃত্ত দিঘি-পুকুর দখলে নানা ফন্দি হাঁকছে। বিশেষ করে নানা ঐতিহ্য আর স্মৃতির স্মারক মজুমদার বাড়ি দিঘিটি দখলে সম্প্রতি চলছে বেপরোয়া কার্যক্রম। আর এতে সিলেটের মানুষের জীবনের প্রয়োজনে দিঘিটি সংরক্ষণের দাবিতে এ মানববন্ধন আয়োজন করেছে বাপা ও বেলা সিলেট।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম-এর স্বাগত বক্তব্যের দিঘি রক্ষায় মানববন্ধন কর্মসুচি শুরু হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের ফিল্ড কর্মকর্তা সরদার আল আমিন-এর সঞ্চালনায় মূল বক্তব্য রাখেন বেলা সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়ক এডভোকেট শাহ সাহেদা আখতার। সভাপতির বক্তব্য রাখেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও বাপার জাতীয় আজীবন সদস্য ড. জহিরুল হক শাকিল। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সিনিয়র সাংবাদিক
আল-আজাদ, বাপা সিলেটের যুগ্ম সম্পাদক ছামির মাহমুদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কাশেম উজ্জ্বল, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা, এলাকাবাসীর পক্ষে আনোয়ার বখত মজুমদার, পরিবেশকর্মী স্বপ্নীলা চৌধুরী, হাউজিং এস্টেট এসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক ওমর মাহবু্ব প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্যে বাপার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, সিলেট মহানগরীর পুকুর-দিঘি সংরক্ষণে গত দেড় দশক ধরে বাপা-বেলা একাধিক কর্মসূচি পালন করেছে। পুকুর-দিঘি-জলাধার রক্ষায় আন্দোলন আজও অব্যাহত আছে। নানা প্রচার-প্রচারণা দিয়ে পুকুর-দিঘি-জলাশয় রক্ষার প্রয়োজনীয়তা আমরা সর্বসাধারণকে উপলব্ধি করাতে চেয়েছি। কোথাও কোথাও সফল হয়েছি, কোথাও কোথাও ব্যর্থ হয়েছি। তবে সম্প্রতি সিলেটে ঘটা বিদ্যুৎ বিপর্যয়কালে মানুষ পুকুর-দিঘি-জলাশয় রক্ষার প্রয়োজনীয়তা খুব ভালো করে উপলব্ধি করেছে। তাই এই বিপর্যয়ের স্মৃতি মনে থাকা অবস্থায় পুকুর-দিঘি-জলাশয় রক্ষার জনমতকে কাজে লাগাতে হবে। দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়া পুকুর-দিঘিকে পুনরায় খনন ও সংস্কার করে ব্যাবহার উপযোগী করতে হবে।
মূল বক্তব্যে বেলার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক এডভোকেট শাহ সাহিদা আক্তার বলেন, বেলা’র পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে দিঘি ভরাটের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। আদালত দিঘি ভরাটের বিরুদ্ধে নির্দেশনা প্রদান করেছে কিন্তু অজ্ঞাত কারণে দিঘি ভরাট বন্ধ হয়নি। অথচ এই দিঘি দখলমুক্ত করে সংস্কার করা হলে এই এলাকার সৌন্দর্য বদলে যাবে। এলাকার মানুষের জন্য পানির একটি স্থায়ী উৎস তৈরি হবে। শিশু-কিশোরদের সাঁতার শেখার সুযোগ তৈরি হবে। তাই এই দিঘি সংস্কার করে ব্যাবহার উপযোগী করার দাবিতে এখনই ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে নগরীর শতবর্ষী জয়নগর দিঘি রক্ষায় বাপা ও বেলা কাজ করেছে। ঐ দিঘি রক্ষায় শুরুতেই এলাকার মানুষ সচেতন ভূমিকা রেখেছে। তাই দিঘিটি রক্ষা পেয়েছে কিন্তু ২০২০ সালেই শিবগঞ্জ সোনারপাড়া মসজিদের পুকুর ভরাট হয়েছে। সে সময় স্থানীয় মানুষ পুকুর রক্ষায় এগিয়ে এলে পুকুরটি বাঁচানো সম্ভব হতো।
সভাপতির বক্তব্যে ড. জহিরুল হক শাকিল বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী পুকুর-দিঘি-জলাশয় রক্ষায় শক্ত অবস্থানের কথা ব্যক্ত করেছেন। ইতোমধ্যে পুকুর দিঘি জলাশয় রক্ষায় বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু এতো কিছুর পরেও পুকুর-দিঘি-জলাশয় ভরাট করা বন্ধ হচ্ছে না। পুকুর-দিঘি-জলাশয় ভরাট বন্ধ করতে হলে স্থানীয় মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পরিবেশ ধ্বংস করে আগামী দিনের পৃথিবীতে কেউ টিকে থাকতে পারবে না। ভবিষ্যতে রাজনীতি, অর্থনীতি সব কিছু পরিবেশ সংরক্ষনের সাথে সম্পর্কযুক্ত হবে। পরিবেশের শত্রুরা কোথাও জায়গা পাবে না।
সাংবাদিক আল আজাদ বলেন, নগর সুন্দর করতে হলে নগরের পুকুর-দিঘি-জলাশয় রক্ষা করতে হবে। মজুমদারড়ি দিঘিটি দীর্ঘদিন থেকে পরিকল্পিত উপায়ে ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করে পানিশূন্য করা হয়েছে। দিঘির মূল অংশে সৃজন করা হয়েছে কলার বাগান। এই দিঘি শুধু একটি দিঘি নয়। এই দিঘির সাথে সিলেটের কিংবদন্তির প্রাচীন ইতিহাস জড়িত। রাজা গৌড়গোবিন্দের দরবার মহল ও সেনা ছাউনিখ্যাত এই এলাকাকে বলা হত গড়দুয়ারা। এই দিঘি মজুমদার পরিবার ১৮৬৯ খৃষ্টাব্দে জনকল্যাণের জন্য এই দিঘি ওয়াকফ করে দেন। কিন্তু এখন সেই দিঘিতে পানির কোন অস্তিত্ব নেই। সুপরিকল্পিত ভাবে এই দিঘিকে বিলুপ্ত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। এনিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদমাধ্যমে অসংখ্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু দিঘিটি দখলদারমুক্ত করা যায়নি। এ অবস্থায় আজকের এই মানববন্ধন কর্মসুচি এলাকাবাসীকে দিঘি রক্ষায় সংগঠিত করবে বলে আশা করি।-বিজ্ঞপ্তি।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
Office : Central Market (1st floor),
Bandar Bazar (Court Point),
Sylhet – 3100, Bangladesh.
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D