পুলিশের নিম্নপদস্থরাই অপরাধে বেশি জড়াচ্ছেন

প্রকাশিত: ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৬, ২০১৬

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রায়ই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়ানোর অভিযোগ ওঠে। তবে উচ্চপদস্থদের তুলনায় নিম্নপদস্থদের (কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যন্ত) বিরুদ্ধেই অপরাধে সম্পৃক্ততার অভিযোগ বেশি। এসব অভিযোগ তদন্তসাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বাহিনীর পক্ষ থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সাল থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত নানা অপরাধে সম্পৃক্ততার দায়ে ৭৬ হাজার ৪২৬ জন পুলিশ সদস্যকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে বাহিনীর পক্ষ থেকে। শাস্তিপ্রাপ্তদের ৭৬ হাজার ৯৯ জনই কনস্টেবল থেকে উপপরিদর্শক (এসআই) পদের। বাকিরা পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর), সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ও তদূর্ধ্ব পদের। এর মধ্যে পরিদর্শক পদের ২৭২ জন এবং এএসপি ও তদূর্ধ্ব পদের ৫৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেন।

বুধবার দৈনিক বণিক বার্তায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আরটিএনএন এর পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:

জানা গেছে, শাস্তি পাওয়া পুলিশ সদস্যদের মধ্যে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় ৬২৩ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬০৮ জনই কনস্টেবল থেকে এসআই পদের। বাকি ১৫ জনের মধ্যে দুজন পরিদর্শক ও ১৩ জন এএসপি ও তদূর্ধ্ব পদের কর্মকর্তা। তবে পারিবারিক অবস্থা ও চাকরির মেয়াদ বিবেচনায় নিয়ে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে ৭২ জন পুলিশকে। এর মধ্যে ৬৮ জনই কনস্টেবল থেকে এসআই পদের। বাকি চারজনের মধ্যে দুজন পরিদশর্ক এবং দুজন এএসপি ও তদূর্ধ্ব পদের কর্মকর্তা।

এছাড়া অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় লঘুদণ্ড দেয়া হয়েছে ৭১ হাজার ৭৭০ জন পুলিশ সদস্যকে। এর মধ্যে ৭১ হাজার ৪৮৪ জন কনস্টেবল থেকে এসআই পদের। বাকি ২৮৬ জনের মধ্যে ২৫৩ জন পরিদর্শক এবং ৩৩ জন এএসপি ও তদূর্ধ্ব পদের পুলিশ কর্মকর্তা। অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় গুরুদণ্ড দেয়া হয়েছে মোট ৪ হাজার ৩৩ জন পুলিশকে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৭ জন কনস্টেবল থেকে এএসআই পদের। বাকি ২৬ জনের মধ্যে ১৭ জন পুলিশ পরিদর্শক এবং নয়জন এএসপি থেকে তদূর্ধ্ব পদের কর্মকর্তা।

পুলিশ অ্যাক্ট-১৮৬১ অনুযায়ী, অপরাধমূলক কার্যক্রমের দায়ে পুলিশের বিরুদ্ধে দুই ধরনের বিভাগীয় শাস্তির বিধান রয়েছে। এর একটি লঘুদণ্ড, অন্যটি গুরুদণ্ড। কাউকে বিনা অপরাধে শারীরিকভাবে নির্যাতন অথবা হত্যা করার শাস্তি গুরুদণ্ড। অর্থাত্ ফৌজদারি যেকোনো অপরাধ করলেই পুলিশ সদস্যদের গুরুদণ্ড দেয়া হয়। এ দণ্ডের আওতায় রয়েছে চাকরি থেকে বরখাস্ত, পদাবনতি, পদোন্নতি স্থগিতকরণ ও বেতন বৃদ্ধি স্থগিতকরণ।

বাহিনীর কোনো সদস্যকে গুরুদণ্ড দিতে হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করতে হয়। মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যকে গুরুদণ্ড দেয়া যায়। তবে গুরুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে হুমকি দেয়া, ঘুষ নেয়া, চাকরির শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করা, দায়িত্বে অবহেলা করা, নির্দেশ অমান্য করা, তুচ্ছ বিষয়ে অভিযোগের ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের লঘুদণ্ড দেয়া হয়। এ ধরনের শাস্তির ক্ষেত্রে বিভাগীয় মামলা করার প্রয়োজন পড়ে না। এ অপরাধের শাস্তি হিসেবে চাকরিচ্যুত করা ছাড়াও রয়েছে অর্থদণ্ড, তিরস্কার, সতর্কীকরণ, আটক বা নজরদারি ও ফেটিগ ডিউটি পালন।

অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি দায়িত্বে অবহেলার জন্যও বিভাগীয় শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় পুলিশ সদস্যদের। দায়িত্বে অবহেলার সর্বশেষ প্রমাণ মিলেছে গত রবিবার। ওইদিন ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে হাতকড়াসহ পালিয়ে যান রুবেল নামে এক ধর্ষণ মামলার আসামি। দুদিন অভিযান চালানোর পর সোমবার রাতে রাজধানীর বাড্ডা থেকে রুবেলকে পুনরায় গ্রেফতার করে পুলিশ।

এছাড়া পুলিশ হেফাজত থেকে গত এক বছরে সারা দেশে অন্তত ১৫ আসামি পালিয়েছে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে আসামি পালানোর ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণও পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুর আদালত থেকে হাজিরা শেষে ফেরার পথে পুলিশ হেফাজত থেকে অস্ত্র মামলার আসামি আতিকুর রহমান আজাদসহ দুজন পালিয়ে যায়। এ বছর শেরপুরে পুলিশ হেফাজতে আদালতে নেয়ার পথে হাতকড়াসহ পালায় হত্যা মামলার আসামি হাফিজুর রহমান ওরফে হাফিজুল। পরে টঙ্গী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

একইভাবে রাজশাহী আদালত চত্বর ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন আসামি পালিয়ে যায়। এছাড়া গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া, নাটোর, যশোর, কুড়িগ্রাম, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশ হেফাজত থেকে আসামি পালানোর ঘটনা ঘটেছে। আর এসব ঘটনায় কর্তব্যে অবহেলায় অন্তত ১০ পুলিশ সদস্যকে বদলি এবং সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এদিকে মাঠপর্যায়ে সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যাওয়ায় হয়রানির শিকার হচ্ছে সমাজের সাধারণ মানুষ। তবে এমন অভিযোগ যেসব পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বাহিনীর পক্ষ থেকে।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক বলেন, ‘ব্যক্তির দায় বাহিনী নেবে না। যারাই এ বাহিনীতে অপরাধে জড়িয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আগামীতেও এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।