৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৪:০০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৫, ২০১৬
বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিদের বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন দলের হওয়ায় আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে অন্য রাজনৈতিক দলের জয়ের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
কারণ বিধান অনুযায়ী এই প্রতিনিধিরাই জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এটি বাস্তবে ‘একদলীয় নির্বাচন’-এ পরিণত হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এমন পরিস্থিতিতে এই নির্বাচন নিয়ে সরকারি দল ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর তেমন কোনো আগ্রহ নেই। বরং তারা সরকারি দলের প্রার্থীর কাছে পরাজয় নিশ্চিত- এমনটা ভেবে নির্বাচনী পাঠ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
মঙ্গলবার দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আরটিএনএনের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
এরই মধ্যে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। মাঠের বিরোধী দল বিএনপিরও এই নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে তারা এ বিষয়টি এখনো স্পষ্ট করেনি। কোনো কোনো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে জনপ্রতিনিধি থাকলেও পরাজয় নিশ্চিত জেনে জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে না বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জাতীয় পার্টি-জেপি। সবার একই কথা, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয় নিশ্চিত। তাই এতে অংশ নেয়ার কোনো অর্থ নেই।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও দলের তৃণমূল পুনর্গঠনের সমন্বয়ক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি। তারপরও আগামী জেলা পরিষদ নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার ব্যাপারে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন যে পদ্ধতিতে হতে যাচ্ছে, তা সংবিধানের যে মৌলিক বিষয়টি রয়েছে, তার পরিপন্থী। অর্থাৎ এখানে একটি ইলেক্টোরাল কলেজ তৈরি করা হয়েছে, যারা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্বাচিত হয়েছেন, তারাই শুধু এই নির্বাচনে ভোটার হবে। অতীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে ক্ষমতাসীনরা কারচুপির মাধ্যমে জয়ী হয়েছে। অনেক জায়গায় বিনাভোটেই তারা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে। তাই সবমিলিয়ে নির্বাচনটা অনেকটা একদলীয় নির্বাচনে রূপ নিতে পারে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকারি দলের মনোনয়ন পাওয়া মানেই সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর জেলা পরিষদ নির্বাচনে জয় নিশ্চিত। তাই দল থেকে মনোনয়ন পাওয়াটাই হচ্ছে মূল কথা। এক্ষেত্রে বিরোধীপক্ষ তাদের কাছে ফ্যাক্টর নয়। বরং ভোটার ম্যানেজ করতে টাকার খেলাই বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে প্রার্থীদের কাছে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞদের মতে, দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে পারলে মাঠপর্যায়ে নিজস্ব অবস্থা আরো মজবুত এবং শক্ত হবে- এমন হিসাব মাথায় রেখে শাসকদল আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগেভাগেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। কমবেশি সবাই ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসায় ধরনা দিচ্ছেন। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া অনেকটা সহজ হবে- এমন ভাবনাও মাথায় রেখে পা ফেলছেন সরকারি দলের অনেক নেতা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত। তারা জোর করে হলেও জয় ছিনিয়ে নেবে। অতীত অভিজ্ঞতাও তাই বলে। তাই এ নির্বাচনে অংশ নিয়ে লাভ নেই।
তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে- এই আশ্বাস মিললে জাতীয় পার্টি এতে অংশ নেবে। কিন্তু এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে আদৌ ভোট সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন কার্যত একদলীয় নির্বাচনে পরিণত হতে যাচ্ছে। যেহেতু বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধি আওয়ামী লীগের, তাই তাদের প্রার্থীরই জয় নিশ্চিত।
তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে হয়তো সংঘাত সহিংসতা দেখা যাবে না। তবে টাকার খেলা হবে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা টাকা দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করবেন।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, এটিও (জেলা পরিষদ) নির্বাচনের নামে আরেকটি প্রহসন। সিপিবি এ ধরনের প্রহসনের নির্বাচনে অংশ নেবে না।
তিনি আরো বলেন, জনপ্রতিনিধিদের ভোটে জেলা পরিষদের নির্বাচন হবে। দেশবাসী জানে এই জনপ্রতিনিধিরা কীভাবে বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তারা কী করবেন তাও বোঝা যাচ্ছে। দল যেভাবে নির্দেশ দেবে, সেভাবে তারা নির্দেশ বাস্তবায়ন করবে। তাই এই নির্বাচনের অর্থ নেই। সিপিবি সরাসরি নির্বাচনের পক্ষে।
বিধান অনুযায়ী, আগামী ২৮ ডিসেম্বর ৬১টি জেলায় জেলা পরিষদ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ১৯৮৯ সালে তিন পার্বত্য জেলায় একবারই সরাসরি নির্বাচন হয়েছিল। আর কোনো জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়নি। শাসকদল আওয়ামী লীগ এবারই প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছে। মন্ত্রণালয় তারিখ ঠিক করে দেয়ার পর জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে ভোটের জন্য নির্বাচনবিধি এবং আচরণবিধি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। রবিবার এটি ভেটিং হয়ে ইসির কার্যালয়ে পৌঁছেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন স্থানীয় সরকারের অন্যান্য ধাপের মতো নয়। এখানে মূলত পরোক্ষ ভোট হবে। এ নির্বাচনে শুধু জনপ্রতিনিধিরা ভোটার। প্রতিটি জেলায় কয়েকশ’ ভোটারের বিষয় বিবেচনায় রেখে হয়তো নির্বাচনী প্রচারণায় বাড়তি বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, জেলা পরিষদের নির্বাচন বিধিমালা এবং আচরণ বিধিমালা ভেটিং হয়ে এসেছে। এটি গেজেট আকারে জারি করা হবে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। মনোনয়ন দাখিলের সম্ভাব্য শেষ সময় ৩ ডিসেম্বর, প্রত্যাহারের শেষ সময় ১২ ডিসেম্বর এবং ১৩ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের দিন রেখে প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।
আইন অনুযায়ী, প্রতিটি জেলায় স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের ভোটেই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচিত হবেন। প্রতিটি জেলায় ১৫ জন সাধারণ ও পাঁচজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য থাকবেন। সংসদ, সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন হলেও জেলা পরিষদ আইনে প্রত্যক্ষ ভোটের বিধান নেই। পাঁচ বছর মেয়াদি জেলা পরিষদগুলোতে বর্তমানে অনির্বাচিত প্রশাসক দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ৬১ জেলায় আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেতাদের প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। তাদের মেয়াদপূর্তিতে এবারই প্রথম জেলা পরিষদে নির্বাচন হবে। পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন পরোক্ষ ভোটে। জেলায় অন্তর্ভুক্ত সিটি কর্পোরেশন (যদি থাকে), উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভোটে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে কেবল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এ হিসেবে স্থানীয় সরকারের ৪টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬৭ হাজার নির্বাচিত প্রতিনিধি এই নির্বাচনে ভোট দেবেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদে। দেশে বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা ৪ হাজার ৫৭১টি। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে গড়ে ১৩ জন করে প্রায় ৬০ হাজারের মতো নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছে। এভাবে ৪৮৮টি উপজেলা পরিষদে প্রায় দেড় হাজার, ৩২০টি পৌরসভায় সাড়ে ৫ হাজার এবং ১১টি সিটি কর্পোরেশনে প্রায় সাড়ে ৫০০ নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন।
অনুসন্ধানে বিভিন্ন জেলার মাঠপর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের দলীয় পরিচয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগেরই জনপ্রতিনিধি বেশি। স্বাভাবিক কারণেই তাদের দল মনোনীত প্রার্থী এই নির্বাচনে জয়ী হবেন। কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হতে চাইলেও লাভ নেই। কেন্দ্র থেকে যে নির্দেশনা যাবে, সে অনুযায়ী ভোট দেবেন মাঠপর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা। এক্ষেত্রে কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন পাওয়া এবং মাঠপর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করাই হবে একজন প্রার্থীর মূল কাজ। বাকি কোনো কিছুই আর ধর্তব্যের মধ্যে আসবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেখা গেছে, বরিশালে জেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার ১২৬০ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ভোট ৯২০, বিএনপির ৩০০, ওয়ার্কার্স পার্টির ২৫, জামায়াতে ইসলামীর ১০, জাতীয় পার্টির ৫ ভোট। এই জেলায় আওয়ামী লীগ এগিয়ে আছে। নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরই জয় নিশ্চিত। একই অবস্থা রাজশাহী জেলায়। এ জেলার মোট ভোটার ১২০০। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ৭২৫ জন। বিএনপির ৩৫২ জন, জামায়াতে ইসলামীর ৮২ জন, জাতীয় পার্টির ২৯ জন, ওয়ার্কার্স পার্টির ৭ জন এবং সিপিবির ৫ জন ভোটার। এখানেও নির্বাচন হলে জয় নিশ্চিত আওয়ামী লীগের। বরগুনায় মোট ভোটার ৬১৬ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ৪১০ জন। বিএনপির ২০০ জন। বাকি ৬ জন ভোটার স্বতন্ত্র। এ জেলায়ও আওয়ামী লীগ এগিয়ে। পিরোজপুরে মোট ভোটার ৭৩৫ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ৩৮৭ জন। বিএনপির ২১২ জন। জাতীয় পার্টি-জেপির ১৭ জন। জামায়াতের ১৬ জন। বাকি ১১০ জন স্বতন্ত্র। এ জেলায়ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয় নিশ্চিত।
এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জে মোট ভোটার ৬৪৬ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ৩১৭ জন। বিএনপির ২৪৩ জন। জামায়াতে ইসলামীর ৫১ জন। বাকি ৩৪ জন স্বতন্ত্র। এই জেলায়ও ভোটার বেশি আওয়ামী লীগের। ফলে তাদের প্রার্থীর জয় নিশ্চিত। বাগেরহাট জেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার ১০৩১ জন। এর মধ্যে ১৭ জন বিএনপির এবং ২ জন জামায়াতে ইসলামীর ভোটার। বাকি ১০১২ জন আওয়ামী লীগের ভোটার। যশোরে মোট ভোটার ১৩৩৭ জন। এর মধ্যে বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের। মেহেরপুর জেলায় মোট ভোটার ২৬৯ জন। এর মধ্যে বিএনপির মাত্র ১৩ জন। বাকি সব আওয়ামী লীগের। এখানে আওয়ামী লীগ যাকে প্রার্থী দেবে, জয় তার নিশ্চিত।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘এটি একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা। এখানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দেবেন। এই জনপ্রতিনিধিরা কে কোন দলের তা বিবেচ্য নয় এখানে।’
যারা ভোটার হচ্ছেন জেলা পরিষদ নির্বাচনে
গত ১০ আগস্ট জেলা পরিষদের সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচনের জন্য ওয়ার্ডের সীমানা নির্ধারণে বিধিমালা জারি করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী প্রতিটি জেলায় ১৫ জন সাধারণ এবং ৫ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচিত হবেন। এ হিসেবে সাধারণ সদস্য নির্বাচনের জন্য প্রত্যেকটি জেলাকে ১৫টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হবে এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্যের জন্য হবে ৫টি ওয়ার্ডে বিভক্ত।
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী স্থানীয় সরকারের ৪টি প্রতিষ্ঠানের ৪ ধরনের জনপ্রতিনিধিরা এই নির্বাচনের ভোটার হবেন। স্থানীয় কোনো স্তরের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জেলা পরিষদে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ না থাকায় প্রার্থীদের ভোটাধিকার প্রয়োগেরও সুযোগ থাকছে না। আইন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদের মেয়র/চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর/সদস্য, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর/সদস্য জেলা পরিষদের নির্বাচনমণ্ডলীর সদস্য/ভোটার হবেন।
এ বিষয়ে বিদ্যমান আইনের ১৭ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র ও সব কমিশনার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার চেয়ারম্যান ও সব কমিশনার এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সব সদস্যের সমন্বয়ে জেলার পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচকমণ্ডলী গঠিত হবে।’
তবে উপজেলা পরিষদে দু’জন করে ভাইস চেয়ারম্যান থাকলেও আইনটি প্রণয়নের সময় এ পদ দুটি উপজেলা পরিষদ আইনে না থাকায় নির্বাচকমণ্ডলীতে তাদের উল্লেখ নেই। এক্ষেত্রে আইন সংশোধন করে এটা অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
প্রার্থীদের ভোটাধিকার থাকবে না
জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হলেও তারা কোনো ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না। আইনে বলা হয়েছে, নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য না হলে কোনো ব্যক্তি ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার যোগ্য হবেন না। আর আইনের অন্য একটি ধারায় বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদের সদস্য বা অন্য কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বা সদস্য হলে তিনি প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারাবেন। অর্থাৎ অন্য কোনো সংস্থার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না হলে যেমন ভোটার হওয়া যাবে না তেমনই কোনো সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি হলে জেলা পরিষদে প্রার্থী হওয়া যাবে না।
জেলা পরিষদের ইতিহাস
ব্রিটিশ আমলে ১৮৯৫ সাল থেকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে জেলা পরিষদ থাকলেও ১৯৫৯ সালে মৌলিক গণতন্ত্র আদেশের অধীন ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডকে নতুন আঙ্গিকে পরিণত করে ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল নামকরণ করা হয়। এ ব্যবস্থায় ১৯৬৩ সালে জেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনটিও হয়েছিল স্থানীয় সরকারের নিম্নপর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের ভোটের মাধ্যমে।
এরপর ১৯৬৬ সালে দ্বিতীয় ও শেষবারের মতো এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালে নির্বাচিত পরিষদ ভেঙে দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে জেলা প্রশাসককে এর প্রশাসক করে ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের যাবতীয় কাজ পরিচালনা ও তত্ত্বাবধানের ক্ষমতা দেয়া হয় এবং ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের স্থলে জেলা বোর্ড নামকরণ করা হয়।
পরে ১৯৭৬ সালে স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশ জারি করা হয় এবং জেলা বোর্ডের নামকরণ করা হয়। পরে এরশাদ সরকারের সময় স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইন-১৯৮৮ পাস হয়। ওই আইনেও পাকিস্তান আমলের মতো পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে পরিষদের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্য নির্বাচনের বিধান করা হয়। কিন্তু তৎকালীন সরকার নির্বাচন না করে দলীয় সংসদ সদস্যদের জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়।
এরপর ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে ওই আইনটি বাতিল করে জেলা পরিষদ বিলুপ্ত করে দেয়। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ২০০০ সালে আবারো জেলা পরিষদ আইন পাস করে। তবে নির্বাচন দেয়ার আগে আবারও বিএনপি ক্ষমতায় এলে আইনটি আর বাস্তবায়িত হয়নি। পরে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ আবারো ক্ষমতায় এসে জেলা পরিষদ সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে ২০১১ সালে দেশের ৬১টি জেলায় অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পালনের জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেয়। প্রশাসক নিয়োগের ৫ বছরের মাথায় ক্ষমতাসীন এ দলটি পরিষদের নির্বাচনের উদ্যোগ শুরু করেছে।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
Office : Central Market (1st floor),
Bandar Bazar (Court Point),
Sylhet – 3100, Bangladesh.
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D