বর্বরতার সেই ভয়াল ২৮ অক্টোবর আজ

প্রকাশিত: ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৮, ২০১৬

মোস্তাফিজুর রহমান বিপ্লব : লগি-বৈঠার তান্ডব কত যে ভয়ঙ্কর, সারা পৃথিবীর মানুষ তা দেখেছিল সেই ২৮ অক্টোবর। ২০০৬ সালের এই দিনে পল্টন মোড়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ক্যাডাররা লগি-বৈঠা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে রাজপথে হামলা চালিয়ে হাজার হাজার মানুষের চোখের সামনেই ৭ জনকে হত্যা করে। মহাজোট নেতাকর্মীরা লগি-বৈঠা দিয়ে বর্বরোচিত কায়দায় শুধু হত্যাই নয়, এরপর লাশের ওপর তারা উল্লাস-নৃত্য করে। বিষাক্ত সাপকে যেভাবে পিটিয়ে মারা হয়, সেভাবেই মারা হয়েছিল মানুষকে। সরাসরি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে ভয়াল সেই দৃশ্য দেখে গোটা বিশ্ববিবেক সেদিন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। মানবতা-মনুষ্যত্বের বিরুদ্ধে লগি-বৈঠাধারী আওয়ামী হায়েনাদের ভয়ঙ্কর বর্বরতার সেই ২৮ অক্টোবর আজ। সেই বীভৎস ২৮ অক্টোবর স্মরণে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি নিয়েছে।  সেই বীভৎস ঘটনার ১০ বছর পরও এই আওয়ামী হায়েনাদের আচরণে কিছু পরিবর্তন তো দূরের কথা, এখন রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে আন্দোলনকামী ভিন্নমতাবলম্বীকে প্রকাশ্য রাজপথে গুলি করে হত্যা, বাড়ি বা কর্মস্থল থেকে ধরে নিয়ে ক্রসফায়ার ও গুম করা হচ্ছে। পুলিশ পরিচয়ে আটকের পর এখনো কয়েকশ রাজনৈতিক নেতাকর্মীর কোনো খোঁজ মেলেনি। ঢাকার রাজপথে এখন কোনো মিছিল-সমাবেশ পর্যন্ত করতে দেয়া হচ্ছে না। তাদের বর্বরতা চলছে ভিন্নভাবে, নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যদের মাধ্যমে। সেই ২৮ অক্টোবরের প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ ও মুহুর্মুহু বোমা হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করে হায়েনার মতো উল্লাস প্রকাশের সেই দৃশ্য মনে হলে মানুষ আজও শিউরে ওঠে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি এরই মধ্যে নির্বাহী আদেশবলে নির্লজ্জভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার। সেদিন শুধু ঢাকাতেই নয়, লগি-বৈঠাধারী সন্ত্রাসীরা সেদিন সারাদেশে চালিয়েছে এই নারকীয় তান্ডব। ওইদিন লগি-বৈঠা বাহিনীর তান্ডবে ঢাকাসহ সারাদেশে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। ঢাকায় নিহত হয়েছিল ৭ জন। ২৬ থেকে ২৮ অক্টোবর ৩ দিনে নিহত হয়েছিল চারদলীয় জোটের ৫৪ নেতাকর্মী। ওইদিনের ঘটনায় প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে এখনও দুঃসহ অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে তাদের পরিবার। ২৮ অক্টোবরের ঘটনা শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা বিশ্বের মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছিল। জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব থেকে শুরু করে সারা বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ওই ঘটনা বাংলাদেশ সম্পর্কে গোটা বিশ্বে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দেয়। এরপর সেনা সমর্থিত সরকার ক্ষমতা দখল করে জেনারেল মইন ঘোষণা করেছিলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বে ২৮ অক্টোবর প্রকাশ্যে রাজপথে মানুষ হত্যার মতো ঘটনার জন্যই আজ ১/১১ হয়েছে। কিন্তু সেই পৈশাচিক ঘটনার রহস্য আজও উদ্ঘাটিত হয়নি। বিচার হয়নি একজন অপরাধীরও। ওইদিনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির পথ ধরে বহুল আলোচিত-সমালোচিত ওয়ান-ইলেভেন আসলেও এরই ধারাবাহিকতায় মতায় আসে বর্তমান ক্ষমতায় থাকা সরকার। জরুরি অবস্থার সরকার নৃশংস ওই হত্যাকান্ডের বিচারের পথে বাধা সৃষ্টি করে আর বর্তমান সরকার মামলাটি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নিয়ে খুনিদের হত্যার দায় থেকে মুক্তি দেয়। : জানা যায়, ৭ নেতাকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় নিহতদের পরিবার ও জামায়াতে ইসলামীর প থেকে ৩টি মামলা দায়ের করা হয়। যুবমৈত্রীর প থেকে জামায়াত নেতাদের আসামি করে আরও একটি মামলা করা হয়। যুবমৈত্রীর মামলায় ১০ জামায়াত নেতাকে অভিযুক্ত করে  চার্জশিট দেয়া হয়। জামায়াতের দায়ের করা মামলাটি পল্টন থানা ও পুলিশ তদন্ত করে ৪৬ জনকে অভিযুক্ত করে ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল আদালতে চার্জশিট দেয়। চার্জশিট দাখিলের পর একই বছর ২২ এপ্রিল তা গ্রহণ করেন মহানগর হাকিম মীর আলী রেজা। তিনি শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের প্রেেিত আদালত ২০০৭ সালের ২৩ এপ্রিল এক আদেশে মামলার অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। সারাদেশে লগি-বৈঠা নিয়ে মহাজোট নেতাকর্মীদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ দেয়ায় এ মামলায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চার্জশিটে হুকুমের আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। বর্তমান সরকার মতায় এসে এ মামলাকে রাজনৈতিক মামলা হিসেবে উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের সুপারিশ করে। সরকারের সুপারিশের ভিত্তিতে আদালত বাদীপ ও নিহতদের পরিবারের বক্তব্য গ্রহণ ছাড়াই একতরফা মামলাটি বাতিল করে দেন। অপরদিকে ওই ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে কাউন্টার মামলা হিসেবে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে মহাজোটের দায়ের করা মামলাটি সরকার এখনও প্রত্যাহার করেনি।