গোয়াইনঘাটে নিষ্টুর হামলা ।। হার মানিয়েছে মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে

প্রকাশিত: ৩:২৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৪, ২০১৬

এম এ মতিন, গোয়াইনঘাট ।।  সিলেটের গোয়াইনঘাটের অঝোপাড়া গায়ে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীদের নিষ্টুর হামলা, ভাংচুর ও পৈশাচিকতায় হার মানিয়েছে মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে। জেলা প্রশাসকের (ডিসির খতিয়ান) ভুমিতে বসবাসরত ভুমিহীন ৩ টি পরিবারের লোকজনদের ঘরবাড়ি ও তাদের রোপণ করা ফলদসহ কয়েক সহস্রাধিক বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা কেটে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হয়েছেন নারী, শিশুসহ ৩ জন।

হামলা চলাকালে হাত পা বেধে বসবাসরতদের ঘরের ভিতরে অবরুদ্ধ রেখে তান্ডব চালানো হয়। শুক্রবার স্থানীয়দের সহায়তায় আহতদের উদ্ধার করে গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

খবর পেয়ে অফিসার ইনচার্জ মোঃ দেলওয়ার হোসেন তাৎক্ষনিক এস আই মতিউর রহমানসহ পুলিশ সদস্যদের ঘটনাস্থলে পাঠান।

বৃহস্পতিবার উপজেলার নবসৃষ্ট ৯নং ডৌবাড়ি  ইউনিয়নাধীন লাউয়েরকুনি মৌজাধীন স্থানীয় বলেশ্বর গ্রামে এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে। সরজমিন পরিদর্শন কালে ফুটে উঠে এমন বর্বরতার প্রতিচ্ছবি।

পরিদর্শন কালে জানা যায়, সরকারী খাস এসব ভুমিতে দীর্ঘদিন থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছেন ফারুক মিয়া, সাইদ মিয়া গংরা। এই ভুমির বসবাসরতদের উচ্ছেদ করতে দীর্ঘদিন থেকে স্থানীয় বলেশ্বর গ্রামের মৃত মজিদ আলীর ছেলে মুসা মিয়া, মুসা মিয়া ছেলে কন্টাই মিয়া, ফয়সল, আখলু মিয়ার ছেলে আঃ করিম, কন্টাই মিয়ার ছেলে ইসলাম, আব্রæ মিয়ার ছেলে ছিফত উল্লাহ, বশির মিয়া ছেলে শুকুর, তেরা মিয়ার ছেলে হেলাল, ফুরকাণ আলীর ছেলে আবুল, বাবুল, আরফান আলীর ছেলে আজমত উল্লাহ,আশ্রব আলীর ছেলে মাহমুদ আলীসহ কতিপয় সন্ত্রাসী জোর দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ইতিপুর্বেও তারা এসব ভুমিহীন পরিবারে হামলা, লুটপাট চালিয়ছে বলেও তথ্য রয়েছে।

অতীতের ধারবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় আবারো দখল ও বসবাসরতদের উচ্ছেদ করতে পুরুষশুন্য বাড়িতে অনাধিকার প্রবেশ করতঃ বাড়িতে থাকা নারী শিশুদের অবরোদ্ধ করে রাখে সন্ত্রাসীরা। বাড়ির কর্তা ফারুক মিয়া আসলে তাকেও হাত-পা বেধে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাকে বেধে ফেলা হয়। পাশের বাড়ির সাইদ হোসেনের ঘরেও আক্রমন করে হামলাকারীরা। সেখানেও নারী, শিশুদের অবরুদ্ধ করা হয়। এসময় সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা ৩টি বাড়ি উঠান,আশপাশসহ সবখানে রোপন করা  গাছ পালা কেটে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়। কড়ই, আম, জাম, কাঠাল, লিচু, নারিকেল, আমড়া, জলপাই, মেহগণি, জাম্বুরা, আতাফল, বড়ই, পেয়রা, বেলিজিয়াম, সুপারি ও কলাসহ সব ধরণের শতাধিক প্রজাতির কয়েক সহস্রাধিক রোপন করা ফলজ ও কাঠ শ্রেনীর গাছপালা কর্তন করে মাটিতে ফেলে দেয়।

এসময় তারা বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালাসহ কাঠসহ বৃক্ষরাজি লুটে নেয় এবং বসবাসরতদের অভিলম্বে পরিবার পরিজনদের নিয়ে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ার হুমকির প্রদর্শন করে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবারের পক্ষ থেকে গোয়াইনঘাট পৃথক ৩ টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

৯নং ডৌবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফ ইকবাল নেহাল জানান, ঘটনাস্থলের বিরোধপুর্ণ ভুমিটি বলেশ্বর গ্রামের এলাকাবাসির উদ্যোগে ঘোড়াইল নামে একটি বাজার ছিলো। কালের বিবর্তনে  বাজারটি হারিয়ে যায়। এরই সুবাধে বসবাসকারী আবার সে স্থানে ঘরবাড়ি নির্মান করে বসবাস শুরু করে। বর্তমানে ওই স্থানে এলাকাবাসি আবরো বাজার প্রতিষ্টার উদ্যোগ নেন এবং বসবাসকারিদের অন্যত্র সরে যাওয়ার জন্য তাদের আত্মীয় স্বজনদের দায়িত্ব দেন।

এব্যাপারে কথা হলে গোয়াইনঘাটের অফিসার ইনচার্জ মো. দেলওয়ার হোসেন জানান, বিষয়টি অবহিত হয়ে তাৎক্ষনিক ফোর্স পাটিয়েছি। এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত চলছে। এ হামলা ও গাছপালা কর্তনের সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট