ইসলামের শিক্ষা অন্যায় অবিচার অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়া : খালেদা জিয়ার বাণী

প্রকাশিত: ২:৫৬ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১২, ২০১৬

মোস্তাফিজুর রহমান বিপ্লব : আজ দশই মহররম বুধবার, ইসলামের ইতিহাসে পবিত্র আশুরা তথা হিজরি নববর্ষের প্রথম মাস। আজকের এই দিনটি পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে কেয়ামত পর্যন্ত অসংখ্য ঘটনার দিন। শুধু মুসলমান নয়, পৃথিবীর সকল মানুষের কাছে দিনটি স্মরণীয়। পবিত্র আশুরার দিন মুসলিম জাহানের জন্য যে কারণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হৃদয়বিদারক স্মরণীয় তা হলো, এদিনে  স্বৈরাচারী ইয়াজিদ বাহিনী বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রাণাধিক দৌহিত্র অকুতোভয় সৈনিক হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)কে একজন ব্যতীত সপরিবারে কারবালার মরু প্রান্তরে নির্মমভাবে হত্যা করে। হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) মতার জন্য ইয়াজিদের বিরুদ্ধে লড়াই করেননি। বরং তিনি লড়াই করেছিলেন ইয়াজিদের ইসলামবিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে। এ উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক পৃথক বাণী প্রদান করেছেন। দেশনেত্রী বাণীতে বলেন, মহানবী (সা.) অন্যায়কে প্রতিহত করতে নির্দেশ দিয়ে গেছেন। তাঁর উম্মত হিসেবে আমাদের কর্তব্য যেকোনো গণবিরোধী ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর কৃত অনাচার আর অবৈধ ক্ষমতার দাপটে মানুষকে দমিয়ে রাখার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। তিনি শহীদ হযরত ইমাম হোসাইন (রা.), তাঁর পরিবারের সদস্যবর্গ এবং কারবালার সকল শহীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁদের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন। আশুরার সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে জানা যায়, মহান আল্লাহতায়ালা এ দিনেই আরশ, কুরছি, লওহ, কলম, আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং এ দিনেই আদম (আ.)কে সৃষ্টি করে তাঁকে বেহেশতে স্থান দিয়েছেন। পরবর্তীতে শয়তানের প্ররোচনায় ভুলের কারণে এ দিনেই তাঁকে দুনিয়াতে পাঠিয়ে আল্লাহর প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন। হযরত নূহ (আ.) সাড়ে নয়শ বছর ধরে তাওহীদের বাণী প্রচারের পর যখন সে যুগের মানুষ আল্লাহর বিধিনিষেধ পালনে অস্বীকৃতি জানায়, তখন নেমে আসে আল্লাহর গজব। ফলে হযরত নূহ (আ.) এর সম্প্রদায় ধ্বংস হয়েছে। পবিত্র আশুরার দিনে মহাপ্লাবনের সময় হযরত নূহ (আ.) এর নৌকা তার অনুসারীদের নিয়ে জুদি পাহাড়ের পাদদেশে এসে থেমেছিল। পবিত্র আশুরার দিনেই হযরত ইব্রাহীম (আ.) শত বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন। পরবর্তীতে তিনি নমরুদের অগ্নিকুন্ড থেকে উদ্ধার লাভ করেন এবং নিজের প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.) কে আল্লাহর নামে জবেহ করতে উদ্যত হলে খলিলুল্লাহ বা আল্লাহর বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছিলেন পবিত্র আশুরার দিনে। এদিনেই হযরত আইউব (আ.) কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন, হযরত ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং কাফেরদের ষড়যন্ত্রে শিকার হলে আল্লাহ তাঁকে চতুর্থ আসমানে উঠিয়ে নেন। এদিনেই হযরত দাউদ (আ.) আল্লাহর কাছ থেকে মা লাভ করেছিলেন, হযরত সোলেমান (আ.) তার হারানো রাজত্ব পুনরুদ্ধারে সম হয়েছিলেন, হযরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তিলাভ করেছিলেন, হযরত ইয়াকুব (আ.) তার হারানো পুত্র হযরত ইউসুফ (আ.)কে চল্লিশ বছর পর ফিরে পেয়েছিলেন। পবিত্র আশুরার দিনে ফেরাউনের স্ত্রী বিবি আছিয়া শিশু মুসাকে গ্রহণ করেছিলেন। আবার স্বীয় কওমের লোকজনসহ হযরত মুসা (আ.) নীল নদ অতিক্রম করে ফেরাউনের জুলুম থেকে মুক্তিলাভ করেন। পান্তরে ফেরাউন সদলবলে নীল নদে ডুবে মারা যায়। পবিত্র আশুরা সমগ্র জগৎ সৃষ্টির দিন হিসেবে যেমনি স্বীকৃত তেমনি এদিন কেয়ামত অনুষ্ঠিত হয়ে জগৎ ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। এদিনে এমনি আরো বহু ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং আরো হবে। : মূলত পবিত্র আশুরার দিন মুসলিম জাহানের জন্য যে কারণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হৃদয়বিদারক স্মরণীয় তা হলো, এদিনে  স্বৈরাচারী ইয়াজিদ বাহিনী বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রাণাধিক দৌহিত্র অকুতোভয় সৈনিক হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)কে একজন ব্যতীত সপরিবারে কারবালার মরু প্রান্তরে নির্মমভাবে হত্যা করে। হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) মতার জন্য ইয়াজিদের বিরুদ্ধে লড়াই করেননি। বরং তিনি লড়াই করেছিলেন ইয়াজিদের ইসলামবিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে। তিনি ল্য করেছিলেন ইয়াজিদ ইসলামী রাষ্ট্রের নিয়মকানুন লঙ্ঘন করে এবং কুরআন হাদীসকে উপো করে মনগড়া পদ্ধতিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। ফলে ইমাম হোসাইন (রা.) আশংকা করেছিলেন আল্লাহর আইনে পরিচালিত খেলাফত পদ্ধতি বিলুপ্ত হয়ে মনগড়া  স্বৈরতান্ত্রিক রাজত্ব কায়েম হবে। পরবর্তীতে তাই হয়েছে। : এদিন উপলে রোজা পালন করার কথা বলেছেন রাসূল (সা.)। এদিনে কুরআন তেলাওয়াত ও আলোচনার আয়োজন করে আল্লাহর কাছে দোয়া করা যায়, যাতে ইমাম হোসাইন (রা.) এর শাহাদাতের বদৌলতে আল্লাহ গোটাবিশ্বে ইসলামী শাসন কায়েম করার ব্যবস্থা করে দেন। পবিত্র আশুরা উপলে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করছে। সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ প্রবন্ধ নিবন্ধ প্রকাশ করছে। পবিত্র আশুরা উপলে আজ সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান এবং সংবাদপত্র অফিসসমূহে ছুটি থাকবে। তাই আগামীকাল সংবাদপত্র প্রকাশিত হবে না। পবিত্র আশুরা উপলে আজ বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররমে ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। : বিএনপি চেয়ারপারসনের বাণী : পবিত্র আশুরা উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাঁর বাণীতে বলেন, ‘১০ মহররম সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি অত্যন্ত তাৎপর্যময় দিন। পবিত্র আশুরার এ দিনে ঘটেছিল এক শোকাবহ ঘটনা। অন্যায় আর অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এ দিনে শাহাদাতবরণ করেছিলেন। কারবালা প্রান্তরে সেই হৃদয়বিদারক ঘটনা আজও মানুষকে কাঁদায় এবং বেদনার্ত করে। সত্য ও ন্যায়ের জন্য তাঁর আত্মত্যাগ বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলমানদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। অন্যায়, অবিচার, অন্যায্য ও অবৈধ অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়া প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। ইসলাম আমাদেরকে সেই শিক্ষাই দেয়। মহানবী (সা.) অন্যায়কে প্রতিহত করতে নির্দেশ দিয়ে গেছেন। তাঁর উম্মত হিসেবে আমাদের কর্তব্য যেকোন গণবিরোধী ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর কৃত অনাচার আর অবৈধ ক্ষমতার দাপটে মানুষকে দমিয়ে রাখার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। : আমি শহীদ হযরত ইমাম হোসাইন (রা.), তাঁর পরিবারের সদস্যবর্গ এবং কারবালার সকল শহীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই, তাঁদের রূহের মাগফিরাত কামনা করি। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিম্নোক্ত বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তিনি বলেন, ‘হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর শাহাদাতবরণের শোকাবহ স্মৃতি বিজড়িত দিন ১০ মহররম আমাদেরকে আজো গভীর দুঃখ ভারাক্রান্ত ও বেদনার্ত করে তোলে। অসত্য, জুলুম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেহাদ করতে গিয়ে তিনি এ দিনে জালিমের হাতে শহীদ হন। ব্যক্তিগত কোন অভিলাষ নয় বরং অবিচার, জবরদস্তি আর মিথ্যা অহংকারকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে তাঁর নিজের আত্মত্যাগের ঘটনা সারা দুনিয়ার সকল মজলুমকে প্রতিবাদী হতে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষকে প্রেরণা যুগিয়ে চলেছে। আজকের এ দিনে আমি হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং তাঁর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের রূহের মাগফিরাত কামনা করি।