২১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:৩০ অপরাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০১৬
র্যাবের দেওয়া ২৬২ জন নিখোঁজের তালিকা নিয়ে নতুন করে জনমনে অস্বস্তির সৃষ্টি করেছে। তালিকার সবাইকে জঙ্গি বলে ধরে নিয়েছেন অনেকে। এতে করে বিভ্রান্তি ও আতঙ্ক দুই-ই বেড়েছে।
বুধবার আলোচনায় ঘুরেফিরে এসেছে এই তালিকা। এর বাইরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ১৫ জনের ছবিসহ পরিচয় প্রচার করা হচ্ছে। আবার অনেকে এই তালিকা নিজের নাম দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তালিকায় উল্লেখিত নিখোঁজ তরুণদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে বাড়ি ফিরেছেন। কেউ কেউ প্রেমঘটিত বা পারিবারিক কারণে বা পরীক্ষায় ভালো ফল করতে না পেরে পালিয়েছিলেন।
বুধবার বিভিন্ন স্থানে হামলা হতে পারে এ ধরনের একটি তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
রাজধানীতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় বন্ধ ছিল। সব স্কুলে ছিল অতিরিক্ত সতর্কতা। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ছিলেন অনেক বেশি সক্রিয়। বাড়তি সতর্কতা জনমনে আতঙ্ক ছড়ায়।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, র্যাবের তালিকায় নিখোঁজ ২৬২ জনের মধ্যে ১১১ জনের নামে থানায় কোনো জিডি আছে কি না, তা উল্লেখ করা হয়নি। মাত্র ১৭ জনের ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পেশার উল্লেখ করা হয়েছে। বাবা-মায়ের নাম উল্লেখ নেই ৩৫ জনের। নিবরাস ইসলামের সঙ্গে নিখোঁজ শেহজাদ অর্কের নাম তালিকায় আছে দুবার, জায়গা পেয়েছে কিশোরগঞ্জের ১২ বছরের কিশোর মো. রিপন মিয়াও।
তালিকার ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘আমরা আমাদের বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন ও থানা-পুলিশের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি। নিখোঁজ ব্যক্তির খোঁজ পেলে জানাতে বলেছি। এই তালিকায় কারা কারা জঙ্গিবাদে জড়িত, সে সম্পর্কে তথ্য নেওয়া হচ্ছে।’
এদিকে মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে নিখোঁজ তিন ব্যক্তির পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। তাঁরা হলেন কানাডাপ্রবাসী তামিম চৌধুরী, জাপানপ্রবাসী মো. শফিউল্লাহ ওজাকি এবং এক যুগের বেশি সময় ধরে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করা আবু তারেক মোহাম্মদ তাজউদ্দিন কাওসার।
পত্রিকাটি লিখেছে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশের এক সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, এই তিন ব্যক্তি বাংলাদেশের ভেতরের জঙ্গি ও দেশের বাইরের সংগঠকদের মধ্যে যোগসূত্র হতে পারেন।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, দুই থেকে তিন ডজন (২৪ থেকে ৩৬) সিরিয়াফেরত যোদ্ধা বাংলাদেশের ভেতরে সক্রিয়। আরেক দল তুরস্কে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরেছে।
আর তৃতীয় একটি দল দেশের ভেতরেই প্রশিক্ষণ নিয়েছে। পত্রিকাটি লিখেছে, এদের মধ্যে তামিম চৌধুরীকে নিয়ে চিন্তিত নিরাপত্তা বাহিনী। তার একটি সাক্ষাৎকার আইএসের মুখপত্র দাবিক-এ ছাপা হয়েছে। তাতে ভারতসহ এ অঞ্চলে রক্তাক্ত হামলার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো অমরনাথ অমরসিঙ্গম নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, তামিম চৌধুরী ২০১৩ সাল বা তার কিছু পরে বাংলাদেশের উদ্দেশে কানাডা ত্যাগ করেন। পুলিশের সন্দেহ, এই সময়ে তার দুই বন্ধু যুদ্ধে যাওয়ার জন্য সিরিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
অন্যদিকে ধর্মান্তরিত সাইফুল্লাহ ওজাকি জাপানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসনের শিক্ষক। তিনি দীর্ঘদিন জাপানে ছিলেন। জাপানে থাকার সময় তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। আর এ টি এম তাজউদ্দিন খসরু ২০০৬ সালে পড়াশোনা করতে যান অস্ট্রেলিয়ায়। ২০১৩ সাল পর্যন্ত মায়ের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। ছেলে জঙ্গিদের দলে ভিড়ে গেছেন, এটা তাঁর মা এখনো বিশ্বাস করেন না।
চট্টগ্রামের নাজিবুল্লাহ আনসারি ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ভাইকে লেখা ফেসবুক বার্তায় বলেছিলেন, ‘আইএসে যোগ দিতে আমি ইরাকে এসেছি। তোমাদের সঙ্গে আমার আর কোনো যোগাযোগ থাকবে না। আমি আর ফিরবও না।’
পুলিশের বিশ্বাস, তামিম, সাইফুল্লাহ ও খসরু আইএসে অন্য বাংলাদেশিদের যোগ দেওয়ার এবং প্রশিক্ষণের ব্যাপারে মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছেন। তবে তামিমকেই বিশ্লেষকেরা আইএসের বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের সমন্বয়ক বলে মনে করেন।
র্যাবের তালিকা নিয়ে নানা ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। তালিকায় এক নম্বরে থাকা বগুড়ার ধুনটের সাইদুল ইসলাম গতকালও তার কর্মস্থলে ছিলেন। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকে পিয়নের কাজ করেন। সাইদুলের বড় ভাই বাদশা মিয়া বলেন, ‘দলাদলির কারণে মাস দু-এক আগে সাইদুলকে অপহরণ করা হয়। কয়েক দিন পর তাকে ছেড়েও দেয়।’
সাইদুল বলেন, র্যাবের তালিকায় নিজের নাম দেখে তিনি র্যাব অফিসে গিয়েছিলেন।
১৮ নম্বরে ছবিসহ স্থান পাওয়া মেহেদি হাসান এসএসসি পরীক্ষা না দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে বলে পরিবারকে জানিয়েছিল। ১৯ জুন মেহেদির বাবা মো. মহসীন ছেলেকে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে ভর্তির জন্য নিয়ে যান। কলেজ কর্তৃপক্ষ ভর্তির ফরম দিয়ে তার কাছে পিন নম্বর চাইলে মেহেদি টয়লেটে যাওয়ার কথা বলে পালিয়ে যায়। গত মঙ্গলবার উত্তরার রাজলক্ষ্মী মার্কেটের সামনে থেকে উত্তরা থানার পুলিশ মেহেদিকে উদ্ধার করে। তাকে তার বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়।
র্যাবের তালিকায় থাকা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন,‘র্যাবের তালিকায় নাম দেখে বুধবার সকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সাংবাদিকেরা এসেছেন। আমি তো নিখোঁজই হইনি। আমার মেয়েটা ছোট। বান্ধবীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে ফিরতে দেরি করছিল দেখে মধুবাগ ফাঁড়িতে জিডি করেছিলাম ১৩ ফেব্রুয়ারি। ওই দিনই মেয়ে ফিরে আসে।’
মুদিদোকানি ছানাউল্লাহ এক দিন নিখোঁজ ছিলেন। তার ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে ফোনটি ধরেন দোকানের সহকারী মো. তারিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘উনি এক দিন নিখোঁজ ছিলেন। তারপরই ফিরে এসেছেন। তালিকায় নাম দেখে অনেকেই আজ দোকানে আসছিল খোঁজখবর করতে।’
তালিকায় থাকা এস এম তাহসান এক সপ্তাহ নিখোঁজ ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার মা জাহানারা বেগম। এরপর ফিরে এসেছেন। নিখোঁজ বাদশা আলী রাগারাগি করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাড়ি ছেড়েছিলেন। তাঁর ভাই ওয়াহাব মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের দিন ফোন করেছিল। বলেছে খোঁজাখুঁজি না করতে। সে ইন্ডিয়া চলে গেছে, ভালো আছে।’
নিখোঁজ তরুণদের তালিকায় নাম থাকা সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দ জাহাঙ্গীর মিয়া নিখোঁজ নন বলে জানা গেছে। তার বাড়ি উপজেলার সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নের ঈশানকোনা গ্রামে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল আমিন জানিয়েছেন, ওই গ্রামে মোসাজাদ হোসেন (৪৫) নামে কোনো লোক নেই।
প্রেমঘটিত কারণে এসএসসি পরীক্ষার্থী মো. মারজুক হায়দার জাহিন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার বাড়ি থেকে এক বছর আগে পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছে তার পরিবার। তবে ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জারে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে বলে দাবি করেছে তার পরিবার। এক স্ত্রী থাকা অবস্থায় পাবনার সুজানগর উপজেলার দড়িমালঞ্চি গ্রামের রফিক মোল্লা (২৫) এক নারীকে নিয়ে ৭ জুলাই পালিয়ে যান।
আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজ-উল-হুদা জানিয়েছেন, রফিককে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
নিখোঁজের তালিকায় চুয়াডাঙ্গার দুই যুবকের একজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন (২৮) ফিরে এসেছেন। দাম্পত্য কলহের জেরে তিনি বাড়ি ছেড়েছিলেন। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সামসুল হক এখনো ফিরে আসেননি।তালিকায় নিখোঁজ
২৬২ জনের মধ্যে ১১১ জনের নামে থানায় কোনো জিডি আছে কি না তা উল্লেখ করা হয়নি। ১৭ জনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পেশার উল্লেখ করা হয়েছে। বাবা-মায়ের নাম নেই ৩৫ জনের।
নিখোঁজের তালিকায় ২২২ ও ২৩৫ নম্বরে একই ঠিকানার মো. সাদিকুর রহমান জুবেরের (২৬) কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি। জকিগঞ্জ থানার ওসি শফিকুর রহমান খান বলেন, পুলিশ ব্যাপক অনুসন্ধান করেও সাদিকুর নামের কোনো যুবকের অস্তিত্ব পায়নি।
তালিকার ১৩১ নম্বরে থাকা লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়নের কান্দলা গ্রামের বাসিন্দা শামীম আহমদের সন্ধান গত সোমবার তার পরিবার পেয়েছে।
শামীমের বড় ভাই মামুনুর রশীদ বলেন, ‘শামীম লোভাছড়া পাথর কোয়ারির একজন পাথর ব্যবসায়ী ছিল। ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ায় পরিবারের কাউকে কিছু না বলে সে স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি। গত সোমবার তার সন্ধান পাওয়া গেছে। ব্যবসাসংক্রান্ত কাজে সে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় বসবাস করছে।’
নিখোঁজের তালিকায় নাম রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রহমতুল্লাহ ও চারঘাটের নির্মাণশ্রমিক আশিকের। এর মধ্যে রহমতুল্লাহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আটক রয়েছেন। আর নির্মাণশ্রমিক আশিকের বাড়ি চারঘাটের টাঙ্গন দাঁইড়পাড়া গ্রামে। তিনি ফেনীতে কাজ করতে গিয়ে নিখোঁজ হন।
তবে তালিকায় নিখোঁজ অবস্থা থেকে ফিরে আসা দুই তরুণের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের আবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। আফিফ মানসিফ ও শামীম রেদওয়ান নামের ওই দুই তরুণ তিন মাস নিখোঁজ ছিলেন। আফিফ ১ মার্চ ঘর ছাড়েন, ২২ মে ফিরে আসেন। শামীম ২৮ ফেব্রুয়ারী ঘর ছাড়েন, মে মাসের শেষ সপ্তাহে ফিরে আসেন। তারা কোথায় কীভাবে ছিলেন, সে সম্পর্কে র্যাব কিছু জানাতে পারেনি। গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলাকারীরা এই সময়কালেই ঘর ছেড়েছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, যাচাই-বাছাই না করে এত বড় তালিকা প্রকাশে জনমনে এমন ধারণা তৈরি হয়েছে যে দেশে বহুসংখ্যক জঙ্গি থাকতে পারে। এতে করে আরও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, জঙ্গিদের এ ধরনের মানুষ হত্যার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য থাকে আতঙ্ক ছড়ানো। কাজেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যাতে আতঙ্ক না ছড়ায়, বরং মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D