ভারতীয় অস্ত্রের চালান’সহ ঢাকায় ধরা পড়ল সুনামগঞ্জের দুই অস্ত্র ব্যবসায়ী

প্রকাশিত: ১:২৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৯

ভারতীয় অস্ত্রের চালান’সহ ঢাকায় ধরা পড়ল সুনামগঞ্জের দুই অস্ত্র ব্যবসায়ী

রাজধানী ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় ভারতীয় অস্ত্রের চালানসহ গ্রেফতার হওয়া তিন অস্ত্র ব্যবসায়ীর মধ্যে দু’জনের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। অপরজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা। আর ভারত থেকে এই অস্ত্রের চালানটি বাংলাদেশে আসে গোয়াইনঘাট সীমান্ত দিয়ে। এমন তথ্য জানিয়েছেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও প্রতিরোধ দলের একাধিক কর্মকর্তা। তারা জানান, দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বেশি থাকায় অস্ত্র ব্যবসায়ী রুট বদল করেছে। এখন সিলেটের গোয়াইনঘাট সীমান্ত দিয়েই দেশে ঢুকছে ভারতীয় আগ্নেয়াস্ত্র ।

তারা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে হাতবদলের সময় ১৬ রাউন্ড গুলিসহ ১২ চেম্বারবিশিষ্ট পয়েন্ট টু টু বোরের দুটি রিভলবার এবং ৬ চেম্বারের পয়েন্ট থ্রি টু বোরের একটি রিভলবারসহ পেশাদার তিন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অস্ত্র ব্যবসায়ী দোলন মিয়া (৩৮), সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের বাসিন্দা আবদুস শহীদ (৪০) ও আনছার মিয়া (৪০)। এ ঘটনায়  ওইদিন রাতেই যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা হয়। পরে শুক্রবার গ্রেফতার তিন  আসামিকে আদালতে হাজির করে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে সিটিটিসি।

সিটিটিসির অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তিনজন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। এই চক্রের পলাতক বাকি অস্ত্র ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ভারতের তৈরি বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র রাজধানীর বিভিন্ন অপরাধ চক্রের হাতে আসছে- এমন সংবাদের ভিত্তিতেই তাদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছিল। এই অস্ত্রগুলো নাশকতার কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে আনা হয়েছিল বলেও জানতে পেরেছি আমরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রেফতার তিনজনের মধ্যে আবদুস শহীদ সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এবং আনছার মিয়া একই উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। শহীদের বাড়ি জগন্নাথপুরের রানীগঞ্জ ইউনিয়নের টিয়ারগাঁও গ্রামে। তার বাবা প্রয়াত আব্দুল জলিল। আর আনছার মিয়া একই ইউনিয়নের ঘোষগাঁও গ্রামের প্রয়াত মন্তাজ মিয়ার ছেলে।

গ্রেফতার হওয়া তিন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে সিটিটিসি কর্মকর্তারা জানান, এই অস্ত্রগুলো ভারতীয় ব্যবসায়ীদের  কাছ থেকে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা আরব আলী নামে এক অস্ত্র ব্যবসায়ী সংগ্রহ করে থাকেন। তিনি গোয়াইনঘাট সীমান্ত এলাকা দিয়ে অস্ত্রগুলো নানা কৌশলে  বহন করে দেশে নিয়ে আসেন। পরে তার কাছ থেকে অস্ত্রগুলো সংগ্রহ করেন শহীদ ও তার সহযোগী আনছার। এদের রয়েছে অস্ত্র বিক্রির লিয়াজোঁ শাখা। যে শাখার প্রধান হিসেবে কাজ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দোলন ও আমিন মিয়া নামে দুই ব্যক্তি। বুধবার শহীদ, আনছার, দোলন ও আমিন মিয়া সায়েদাবাদ এলাকায় অস্ত্রগুলো নিয়ে এসেছিলেন অপরাধজগতের একাধিক ক্রেতার কাছে সরবরাহের উদ্দেশ্যে। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে একাধিক ব্যবসায়ী ও ক্রেতা পালিয়ে যান।

সিটিটিসির এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতি মাসে ২ থেকে ৩টি অস্ত্রের চালান আসে গোয়াইনঘাট সীমান্ত এলাকা দিয়ে। প্রতি চালানে ২ থেকে ৩টি বা ৪টি করে অস্ত্র আসে। আরব আলী ভারত থেকে প্রতিটি অস্ত্র কেনেন ২০ হাজার টাকায়। সেখান থেকে সীমান্ত এলাকায় আবদুস শহীদের কাছে সরবরাহ করেন প্রতিটি ২৫ হাজার টাকায়। শহীদ তার সহযোগী আনছারের মাধ্যমে সেই অস্ত্র আমিনের কাছে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। আমিন মিয়া আবার অপরাধীদের কাছ থেকে সেই অস্ত্রের দাম নেন ৭০ হাজার টাকা করে।

সিটিটিসির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এই চক্রের সদস্যরা অস্ত্র ব্যবসার পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটিয়ে থাকে। সম্প্রতি লন্ডন থেকে এক ব্যক্তি এই চক্রের প্রধান ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুস শহীদের সঙ্গে মৌলভীবাজারের এক নারীকে খুন করার জন্য ৮ লাখ টাকার চুক্তি করেছিল। সে মোতাবেক ৩ লাখ টাকাও নিয়েছিল শহীদ। তবে খুন করার আগেই সে ধরা পড়ে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট