কাশ্মীর ইস্যুতে পাক-ভারতের অবস্থান খুবই উদ্বেগজনক : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৭:১৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২, ২০১৬

কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তানের অবস্থান সত্যিই খুব উদ্বেগজনক জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এটা দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক ব্যাপার। তবে এ অঞ্চলে কোনো রকম সংঘাত ও যুদ্ধ আমাদের কাম্য নয়।

রবিবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ অধিবেশন নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ সব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশকে পাকিস্তান স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তাদের সঙ্গে মতভিন্নতা থাকতে পারে। কিন্তু কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা ঠিক হবে না। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে তারা কি বলল আর না বলল তাতে কিছু যায় আসে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে যাদের বিচার হচ্ছে তাদের আত্মা আর পাকিস্তানের আত্মা একই। তাই তারাতো কাঁদবেই।

১৭ দিনব্যাপী যুক্তরাজ্য, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

কানাডায় গ্লোবাল ফান্ড সম্মেলন এবং যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী। দীর্ঘ ব্যস্ত সফরের পর ৩০ সেপ্টেম্বর বিকেলে দেশে ফেরেন তিনি।

এ সফরে শেখ হাসিনা কানাডার প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। একইসাথে ভূষিত হন ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কার ও ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ খেতাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবারের মতো এবারো আমি বাংলায় বক্তব্য দেই। বক্তৃতায় অভিবাসী ও শরণার্থী ইস্যুটিকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার অনুরোধ করি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমি সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের পরামর্শদাতা, মূল পরিকল্পনাকারী, মদতদাতা, পৃষ্ঠপোষক, অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহকারী এবং প্রশিক্ষকদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাই।

বক্তৃতায় শেখ হাসিনা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বজুড়ে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বলেও জানান।

কানাডা সফরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কানাডায় গ্লোবাল ফান্ড সম্মেলনের ফাঁকে জাস্টিন ট্রুডোর সাথে বৈঠক করি। বৈঠকে ট্রুডো দু’দেশের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো সুসংহত করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। একইসাথে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থানেরও প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনি নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। তিনি এ নিয়ে সেদেশের আইনি বাধার কথা উল্লেখ করেন। তবে ন্যায়বিচার নিশ্চিতপূর্বক কিভাবে স্পর্শকাতর ইস্যুটির সুরাহা করা যায়, তার উপায় খুঁজতে দু’দেশের উপযুক্ত প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা শুরুর পক্ষে মত দেন।

প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি জাস্টিন ট্রুডোকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং ট্রুডো তা সানন্দে গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি গত ৩৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এবার নিয়ে তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছি। পয়ত্রিশ বছরে এবারই টানা ৫ দিন ছুটি নিয়েছিলাম।

তিনি বলেন, তারপরো প্রতিদিন ২ ঘণ্টা করে অফিসের দায়িত্ব পালন করেছি। কারণ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। ইন্টারনেটে অফিসের কাগজ দূতাবাসে পৌঁছে গেছে। এ কয়েক দিনে আমি ৫১টি ফাইল নিষ্পত্তি করেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার ফলে এটা করা সম্ভব হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান যেহেতু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে মন্তব্য করেছে, তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যাব না। দেখা যাচ্ছে অন্য আরো চারটি দেশ একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাতটি দেশের মধ্যে চারটিই যদি না যায়, তাহলে তিনটি থাকলে কি সম্মেলন হবে? ফলে সার্কের বর্তমান সভাপতি রাষ্ট্র নেপাল বাধ্য হয়েছে সম্মেলন বন্ধ করতে।

সার্ক শীর্ষ সম্মেলন সম্পর্কে বাংলাদেশ এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘কাজেই বাস্তবতাটা মনে রাখতে হবে। (পাকিস্তানের সঙ্গে) কূটনৈতিক সম্পর্ক সেটাও থাকবে। আবার ঝগড়া-ঝাটি সেটাও চলবে। এটা কোনো ব্যাপার না।