১৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:৪৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৮, ২০১৯
ঈদ টার্গেটে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ‘ভাই পার্টি’র ১০ গ্রুপের অর্ধশতাধিক সদস্য। এরা নগরীর বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল ও বিমানবন্দরসহ জনবহুল এলাকায় অভিনব কৌশলে বন্ধু, স্বজন সেজে টার্গেট করা ব্যক্তির সর্বনাশের ফন্দি আঁটছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, অজ্ঞান পার্টিরই লেটেস্ট ভার্সন ‘ভাই পার্টি’।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভাই পার্টির হাতে সর্বস্ব খুইয়ে এক সপ্তাহে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন শতাধিক মানুষ। ঢামেক সূত্র জানায়, দিনে ৩ থেকে ৫ জনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে এ হাসপাতালে। ভর্তির কারণ হিসেবে হাসপাতালের রেজিস্টারে ‘আননোন পয়জনিং’ লেখা হয়। এ কারণে এবং ডেঙ্গু রোগী বেশি থাকায় এ বিষয়টি নজরে আসে কম।
জানা গেছে, ঈদের মতো উৎসব পার্বণে পথচেয়ে থাকা স্ত্রী-সন্তানদের কাছে উপার্জিত অর্থ পৌঁছানোর আগেই তা লুটে নেয় রাস্তাঘাটে ওতপেতে থাকা ভাই পার্টির প্রতারকরা। রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের টার্গেট করে প্রথমে ভাব বিনিময় করে। পরে কৌশলে সখ্য গড়ে তোলার পর সুযোগ বুঝে অচেতন করে সর্বস্ব লুটে নেয় চক্রের সদস্যরা।
জানা গেছে, এক যুগ ধরে সে এমন প্রতারণায় জড়িত। প্রথমে ভিন্ন কৌশলে লোকজনকে অজ্ঞান করে লুটে নিত অর্থকড়ি। তবে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কৌশল পরিবর্তন করতে হয়। সে জানায়, দলের প্রত্যেকেই টার্গেট খুঁজতে থাকে। আর ১০ মিনিট পরপর নিয়ম মতো ফোন চালাচালি চলে। প্রতি ১০ মিনিট পর একজন আরেকজনকে ফোন দিয়ে খোঁজখবর নেয়। তারা টার্গেটের সাংকেতিক নাম ‘ভাই’ ব্যবহার করে। ফোন দিলে অপর প্রান্ত থেকে যদি উত্তর আসে ভাইয়ের কাছে আছি, তখন বোঝা যায় শিকার ধরেছে। এরপর দলের অন্য সদস্যরা সেখানে ছুটে আসে। কেউ এসে পরিচিত হয়। আবার কেউ আশপাশে থেকে গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে। ভাই সম্বোধনকারী প্রতারক নিজেকে কখনও কখনও টার্গেটের এলাকার লোক হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দেয়। তার কাছে দলের অন্য সদস্যদের আত্মীয় পরিচয় দেয়। সহজসরল মানুষের সঙ্গে কৌশলে মিশে।
এরই মধ্যে একজন উঠে গিয়ে জুস, কোল্ড ড্রিংস, ঝালমুড়ি, চানাচুর, চা-কফি নিয়ে আসে। টার্গেটের সামনেই চক্রের একজন কোল্ড ড্রিংসের কর্ক খুলে খেতে থাকে যাতে সন্দেহের সৃষ্টি না হয়। অপরজন কোল্ড ড্রিংস খেতে খেতে টার্গেটের সঙ্গে কথা বলে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। এ সুযোগে চক্রের প্রথমজন কৌশলে আঙুলের ফাঁকে রাখা বিশেষ ওষুধের গুঁড়া করা পাউডার জুস, কোল্ড ড্রিংস ইত্যাদির ভেতরে ছেড়ে দেয়। তা ভিকটিমকে খেতে দিলে তিনি আর আপত্তি করেন না, এমনকি সন্দেহও করেন না। কারণ তার সামনেই অন্যরা খেয়ে তাকে দিচ্ছেন। খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ভিকটিম অচেতন হয়ে যান। এরপর এরা তার সর্বস্ব লুট করে সটকে পড়ে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই সূত্র যুগান্তরকে জানিয়েছে, রাজধানীতে ভাই পার্টির ১০টির বেশি চক্র সক্রিয় রয়েছে। প্রত্যেক দলে ৫ থেকে ৬ জন সদস্য রয়েছে।
পিবিআই ঢাকা মেট্রো উত্তর বিভাগের ইন্সপেক্টর জুয়েল মিয়া বলেন, ভাই পার্টির সদস্যরা খুবই চতুর। সম্প্রতি এ চক্রের এক সদস্যকে বিমানবন্দর এলাকা থেকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে বেশ কয়েকটি কৌশলের কথা জানিয়েছিল পিবিআইকে। তিনি বলেন, এরা এমন একটি মেডিসিন ব্যবহার করে, যা জুস, কোল্ড ড্রিংসের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানোর পর ভিকটিম এমন তন্দ্রাচ্ছন্ন হবে, তার সবকিছু নিয়ে যাচ্ছে দেখতে পাবে, কিন্তু সে চিৎকার করতে পারবে না। বাধা দিতে পারবে না।
তিনি বলেন, ভাই পার্টির সদস্যরা বাসস্ট্যান্ডে, রেল স্টেশনে ঘোরাফেরা করে সিঙ্গেল যাত্রীকে টার্গেট করে। ওই যাত্রী যে অঞ্চলে যাবে, নিজেকে সে অঞ্চলের যাত্রী বলে পরিচয় দিয়ে একই বাসে পাশাপাশি টিকিট কেটে বসে। অপরাপর সহযোগীরা টিকিট নিয়ে ওই বাসে উঠে পড়ে। যাত্রাপথে সুবিধামতো সময়ে বিশেষ ওষুধের গুঁড়া মেশানো খাবার খাইয়ে যাত্রীর সর্বস্ব লুটে নিয়ে পথিমধ্যে নেমে পড়ে।
আবার ভাই পার্টির সদস্যরা মাইক্রোবাস নিয়েও ঘুরে বেড়ায়। এরা অল্প শিক্ষিত সহজসরল একা থাকা যাত্রীকে টার্গেট করে। তাদের বলে বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা চুরি হয়েছে, সামনে চেক পোস্ট চলছে। টাকা থাকলে লুকিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাদের কথা বিশ্বাস করে যাত্রীর কাছে থাকা টাকা বের করে দিলে চক্রটি কাগজে মুড়িয়ে শার্ট ও প্যান্টের ভাঁজে ভাঁজে রাখা বা লুঙ্গির কোঁচে রাখার কৌশল দেখিয়ে খালি কাগজ মুড়িয়ে দিয়ে টাকা সরিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।
পিবিআই ঢাকা মেট্রো উত্তর বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, অজ্ঞান পার্টিরই লেটেস্ট ভার্সন ‘ভাই পার্টি’। এদের গ্রেফতারে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, অজ্ঞান পার্টি, ভাই পার্টি, মলম পার্টির কবল থেকে মুক্ত থাকতে সচেতনতার বিকল্প নেই। জনসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ভ্রমণকালে অপরিচিত ব্যক্তির দেয়া খাবার গ্রহণ করা যাবে না, এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D