খোকার গুলশানের ছয়তলা বাড়ি বাজেয়াপ্ত

প্রকাশিত: ৩:০২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৬

ঢাকার সাবেক মেয়র, মন্ত্রী ও বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা সাদেক হোসেন খোকার বাড়ি ও জমি সরকার বাজেয়াপ্ত করছে। গতকাল বুধবার ঢাকার গুলশানে ছয়তলা ভবন বাজেয়াপ্ত করে নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক আলাদাভাবে তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা বা এই প্রক্রিয়া চলমান থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

সরকারের বিভিন্ন সূত্র জানায়, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে সাদেক হোসেনের নামে থাকা মোট ১০০.১৯৪৬ একর জমি বাজেয়াপ্ত করা হবে। এর মধ্যে তার মালিকানাধীন ঢাকার গুলশান ২ নম্বর সেক্টরের ৭২ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর হোল্ডিংয়ের ৫ কাঠা জমি এবং তার ওপর নির্মিত ছয়তলা ভবনে বুধবার ঢাকার জেলা প্রশাসক নোটিশ ঝুলিয়ে দেন।

ওই বাড়ির দাম আদালত ২ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছিলেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় কোনো রাজনীতিকের বাড়ি ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার মতো পদক্ষেপ বিরল।

সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে দুদকের মামলার রায়ে ১০,৫,২১,৮৩২ টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে মেসার্স বুড়িগঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় ২৭ খণ্ড কৃষিজমি, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় ৩৪ খণ্ড কৃষিজমিসহ মোট ৬১টি দলিলে ১৩৩.৫৯৫২ একর জমি রয়েছে।

এসব জমির চার মালিকের মধ্যে খোকার অংশ হিসেবে ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা মূল্য ধরা হয়েছে ১৩৩ একর জমির দাম হিসেবে।

এছাড়া বুড়িগঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে হাবিব ব্যাংকে জমা করা টাকা থেকে ২৩,১২,৯৭৩ টাকা নিয়ে মোট ১০,৫,২১,৮৩২ টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেন আদালত।

জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সাদেক হোসেন বলেন, এত জমির মালিক তিনি নন। এটা একটা কোম্পানি এবং এতে ছয়-সাতজন শেয়ারহোল্ডার রয়েছেন। এক-চতুর্থাংশ নয়, তিনি একটি ক্ষুদ্র অংশের মালিক। তিনি বলেন, এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক মামলা। এই মামলায় তার অনুপস্থিতিতে রায় হয়েছে।

এমনকি তাকে মামলা মোকাবিলা করতে আইনজীবী নিয়োগ করতে দেওয়া হয়নি। তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে ‘একতরফা’ এই রায়ের ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান। এছাড়া আদালতের অনুমতি নিয়েই তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে আছেন বলে দাবি করেন।

ঢাকা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সাদেক হোসেন খোকার রায়ের বিরুদ্ধে এখন আর আপিল করতে পারবেন না। কারণ, সেই সময় শেষ হয়ে গেছে। আপিল করতে চাইলে তাকে সশরীরে উপস্থিত থেকে করতে হতো। তার আইনজীবী মহসীন মিয়া জানিয়েছেন, এটা সত্য যে, তিনি পলাতক থাকায় আপিল করতে পারেননি। তিনি মনে করেন, জজকোর্টে তারা ন্যায়বিচার পাননি।

গত বছরের ২০ অক্টোবর গোপন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেনকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। তিনি অবৈধভাবে ১০,৫,২১,৮৩২ টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন ঘোষণা করে ওই সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রায়ে। রায় ঘোষণার সময় তিনি নিউইয়র্কে অবস্থান করছিলেন। তাকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার চলে।

রায়ে বলা হয়, আসামি অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার পাশাপাশি ৯ কোটি ৬৫ লাখ ৩ হাজার টাকার সম্পদের ওপর প্রযোজ্য কর ফাঁকি দিয়েছেন। রায়ে দুদক আইনের ২৬-এর ২ ধারা অনুযায়ী ‘মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় কারণে’ সাদেক হোসেনকে তিন বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা করেন আদালত।

ওই টাকা দিতে না পারলে তাকে আরো এক মাস জেল খাটতে হবে। আর অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ায় ২৭-এর ১ ধারা অনুযায়ী ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের রায় হয়েছে। পাশাপাশি তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন বিচারক। জরিমানার টাকা দিতে না পারলে ভোগ করতে হবে আরো ছয় মাসের সাজা।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ২ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রমনা থানায় এ মামলা করে। তার স্ত্রী ইসমত আরা এবং ছেলে ইসরাক হোসেন ও মেয়ে সারিকা সাদেককেও মামলায় আসামি করা হয়। ওই বছরের ১ জুলাই দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা তার ছেলে-মেয়ের নাম বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

ঢাকার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, গুলশানের বাড়িটি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বুধবার এই নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়।

ওই বাড়িতে বেশ কয়েকজন বিদেশি ব্যবসায়ী বসবাস করছেন। ঢাকা জেলা প্রশাসন তাদের উচ্ছেদ নোটিশ দেওয়ার পর একটি বায়িং হাউসের পক্ষ থেকে আদালতে রিট আবেদন করা হয়। বুধবার উচ্চ আদালত এক মাসের মধ্যে তাদের বিরক্ত না করার নির্দেশ দিয়েছেন।

জানতে চাইলে বাদীপক্ষের আইনজীবী জাফরুল হাসান শরীফ বলেন, আদালতের রায়, এটা সরকারের সম্পত্তি, সরকার নিতেই পারে। কিন্তু সেখানে বিদেশিরা অবস্থান করছেন। তারা যাতে বিরক্ত না হন, সে জন্য উচ্চ আদালত জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত সম্পদও বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম এ বিষয়ে বলেন, সাবেক এই মেয়রের নামে প্রায় ৮৮ একর জমি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। তিনি বলেন, কালিয়াকৈরে কয়েকটি মৌজায় এই জমি অবস্থিত।

জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া বলেন, আদালতের নির্দেশে জেলায় সাবেক মেয়রের নামে থাকা ৫০ দশমিক ৮৯ একর জমি সরকারের দখল, হেফাজত ও নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে।

এদিকে ক্ষমতার অপব্যবহার ও নিয়মবহির্ভূতভাবে রাজধানীর ১০টি মার্কেটের ১৩৮টি দোকান বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগে বিএনপির নেতা সাদেক হোসেনের বিরুদ্ধে আরেকটি ‍মামলা দায়ের করেছে দুদক।

গত ৫ মে করা এ মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সাদেক হোসেন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ২০০৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ১০টি মার্কেটের ১৩৮টি দোকান বরাদ্দ দেন।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট