ট্যাম্পাকোর আগুন নেভেনি, মৃতের সংখ্যা ৩৪

প্রকাশিত: ২:৫৯ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৬

গাজীপুর : গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক শিল্প নগরীর ট্যাম্পাকো ফয়েলস প্যাকেজিং কারখানার আগুন এখনো পুরোপুরি নেভেনি। বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ষষ্ঠ দিন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওই কারখানার বিভিন্ন স্থানের ধ্বংসস্তূপ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে।

এদিকে সোমবার সকাল থেকে কারখানায় উদ্ধারকাজ শুরু করেছেন সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের সদস্যরা।

এ কারখানার ধ্বংসাবশেষ অপসারণের পুরো কাজ সম্পন্ন করতে দুই মাস সময় লাগার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

ঝুঁকির মধ্য দিয়ে সেনাসদস্যসহ উদ্ধারকর্মীদের কাজ করতে হচ্ছে। ওই কারখানায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩৪ জনে দাঁড়িয়েছে।

এদের মধ্যে সাতজনের পরিচয় বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ১০ জন।

কারখানার এ ঘটনায় শিগগিরই শ্রম আইনে মামলা হচ্ছে।

টঙ্গী মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার জানান, টঙ্গীর বিসিক নগরীর ট্যাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় গত শনিবার ভোরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টির বেশি ইউনিটের কর্মীরা টানা চেষ্টা চালিয়ে রবিবার সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কারখানার বিভিন্ন স্থানের ধ্বংসাবশেষ থেকে আগুনের ধোঁয়া বেরোতে দেখা গেছে। ফলে হতাহতদের খোঁজে কারখানার ভেতরে এখনো তল্লাশি চালাতে পারেননি উদ্ধারকর্মীরা।

ভয়াবহ এ ঘটনায় ওই কারখানার বিশাল ভবনের বেশির ভাগই ধসে পড়ার পর ৫ তলা ভবনের অবশিষ্টাংশেও ফাটল দেখা দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হয়ে এবং ভেঙে পড়া কাঠামোর নিচে চাপা পড়ে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪ জনে। এ ছাড়া আহত হয় অর্ধশতাধিক। নিখোঁজ রয়েছে বেশ কয়েকজন।

এ পরিস্থিতিতে সোমবার সকালে ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম মাহমুদ হাসানের নেতৃত্বে একটি দল বুলডোজার ও ভেক্যুসহ ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে টঙ্গীর ওই টাম্পাকো ফয়েলস প্যাকেজিং কারখানায় উদ্ধারকাজ শুরু করে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত তারা দু’দিক থেকে কারখানা ভবনের ধ্বংসাবশেষ অপসারণ করছিলেন। তবে ঘটনাস্থলে কেমিক্যালের একাধিক ড্রাম থাকায় বেশ সতর্কতার সাথে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।

সেনাসদস্যরা বৃহস্পতিবার ওই কারখানার ধ্বংসাবশেষ থেকে খাট, চেয়ার, টেবিল, পাতিল, লেপ-তোশক, বইসহ বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করেছেন।

উদ্ধারকাজে তাদের সহায়তা করছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যরা। এর আগে উদ্ধারকাজের প্রস্তুতি নিতে রবিবার রাতে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করে।

এ দিকে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম জানান, সোমবার সেনাসদস্যরা কারখানার পূর্ব পাশে রাস্তার ওপর থেকে কারখানা ভবনের ধ্বংসাবশেষ অপসারণ করে দুই জনের লাশ উদ্ধার করেন।

এর আগে সকাল ৭টায় ভবনের তৃতীয় তলার ধ্বংসাবশেষ থেকে আরো দু’জনের লাশ উদ্ধার করেন। এরপর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় রাজধানীর নর্দার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মো. মনোয়ার হোসাইন (৪০) নামে এক ব্যক্তি মারা যান।

হাসপাতালের আইসিইউর আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা: নাফিউল ইসলাম বলেন, তার শরীরের প্রায় ২০ শতাংশ দগ্ধ ছিল। অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের কারণে ফুসফুস ও খাদ্যনালী পুড়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি বুকে ও মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ছিল। গত ১০ সেপ্টেম্বর টঙ্গীর ট্যাম্পাকোতে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত মনোয়ার হোসাইনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে ওই হাসপাতালের আইসিইউতে জায়গা না থাকায় নর্দার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা ৩৪ জনে দাঁড়িয়েছে।

এ ঘটনায় ১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে তালিকা পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে এ পর্যন্ত ২৭ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদের লাশ ইতোমধ্যে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে যে সাতটি লাশের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি, তাদের পরিচয় শনাক্তের জন্য লাশগুলো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাখা রয়েছে। পরিচয় শনাক্তের জন্য অজ্ঞাত ওই সাতটি লাশ আরো কিছু দিন সেখানে সংরক্ষণ করা হবে। তাদের পরিচয় শনাক্তের পরই লাশগুলো হস্তান্তর করা হবে।

দোষীদের বিরুদ্ধে শ্রম আইনে মামলা

শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু গতকাল সাংবাদিকদের জানান, টঙ্গীর ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানায় বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে শ্রম আইনে মামলা করা হবে। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহযোগিতার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। দ্রুত তাদের আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। এ ছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের নগদ ১৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়া হয়েছে। আর হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি থাকা আহতদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে।

কারখানার মালিক ও স্ত্রীসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা

এ দিকে, দুর্ঘটনায় নিহত জুয়েলের পিতা আ: কাদের বাদি হয়ে টঙ্গী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় কারখানার মালিক মকবুল হোসেন ও তার স্ত্রী শেফালী পারভীনসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা হলো- কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভির আহমেদ, মহাব্যবস্থাপক সফিকুর রহমান, ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মনির হোসেন, ব্যবস্থাপক (সার্বিক) সমীর আহমেদ, ব্যবস্থাপক হানিফ ও উপসহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেন। এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কী অভিযোগ আনা হয়েছে, তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি। তবে ঘটনার পর থেকে মামলার আসামিরা পলাতক রয়েছে।

নিহত ২৭ জনের পরিচয়

টঙ্গীর টাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় দুর্ঘটনায় নিহত ৩৪ জনের মধ্যে ২৭ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৪ জন। বৃহস্পতিবার দুপুরে দুর্ঘটনাস্থলের পাশে স্থাপিত জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

নিহতরা হলেন- টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ভেংগুলা গ্রামের কৃষ্ণ প্রসাদের ছেলে সুভাষ চন্দ্র প্রসাদ (৩৫), ভোলার দৌলতখান গ্রামের জবুল হকের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪০), ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কাকচুর গ্রামের আরশাদ আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম (২৮), একই জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সরিষা গ্রামের আজিম উদ্দিনের ছেলে আবদুর রাশেদ (২৫), চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার রুহিতারপাড়া গ্রামের মৃত খালেক মাস্টারের ছেলে আবদুল হান্নান (৬৫)। কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী থানার মানিককাজী গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে ইদ্রিস আলী (৪০), ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বড়বাহ্রা গ্রামের মৃত নবদীপ দাসের ছেলে গোপাল দাস (২৫), একই উপজেলার চরমানপুর গ্রামের নিতাই সরকারের ছেলে শংকর সরকার (২৫), পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার পশ্চিম ফুলজুড়ি গ্রামের মৃত ইনজাম উদ্দিন আজাদের ছেলে আল মামুন (৪০), সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার সুন্দিসাই গ্রামের সোনা মিয়ার ছেলে এনামুল হক (৩৮), কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার আআস্তাফলা গ্রামের করিম বক্সের ছেলে সোলাইমান (৩৫), টাঙ্গাইল সদরের মধুপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে আনিছুর রহমান (৫০), একই এলাকার মৃত তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে ওয়ালি হোসেন (৩৫), ভোলার দৌলতখান থানার লেজপাড়া গ্রামের মৃত তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে মাইন উদ্দিন (৩৫)। সিলেটের গোলাপগঞ্জের সুন্দিসাড়ি গ্রামের তনজিদ আলীর ছেলে সাইদুর রহমান (৫০), টাঙ্গাইল সদরের মধুপুর গ্রামের মৃত মচর আলীর ছেলে হাসান সিদ্দিকী (৫০), চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ এলাকার মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে মামুন ওরফে ক্লিনার মামুন (৪০), সিলেটের মিবগঞ্জ সোনাপাড়া এলাকার আবদুল আহাদের ছেলে মিজানুর রহমান (২৫), হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বনদশক্যানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে রোজিনা, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার আদর্শপাড়া এলাকার মৃত মুকুল চন্দ্র দাসের ছেলে রিপন দাস (৩০)। এ ছাড়া শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার উত্তর মহিষা গ্রামের মৃত ওয়াজেদ আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন (৪০), সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার মুরাদনগর এলাকার ওয়াহিদুজ্জামান তপন (৩৬), শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার পুরাঘর এলাকার আবদুল খালেকের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (৫০), হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার আদমপুর এলাকার হাবিবুর রহমানের মেয়ে তাহমিনা আক্তার (২০), ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার পাবাডুবি এলাকার রসি মিয়ার ছেলে আশিক (১৪) ও শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার আনাখন্দ গ্রামের উদ্দিন দেওয়ানের ছেলে মনোয়ার হোসেন (৩৮)।

নিখোঁজ ১০ জনের তালিকা

অগ্নিকাণ্ডে ১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। তারা হলেন- মাগুরা সদরের চনপুর ইগরন গ্রামের আব্দুস ছালেক মোল্লার ছেলে কাজিম উদ্দিন (৩৬), টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের উকলমি গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে জহিরুল ইসলাম (৩৭), লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার শিবপুরের আবু তাহেরের ছেলে রিয়াদ হোসেন মুরাদ, একই গ্রামের সুলতান গাজীর ছেলে আনিসুর রহমান (৩০), কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার মেসেরা গ্রামের আব্বাস আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম (৪০)। চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার পলাখান গ্রামের ইউসুফ পাটোয়ারীর ছেলে নাসির পাটোয়ারী, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার টনকি গ্রামের তোফায়েল হোসেনের ছেলে মামুস আহমেদ (৩০), ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ভীমনগর গ্রামের মোজাম মোল্লার ছেলে চুন্নু মোল্লা, সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ফানিশাইল গ্রামের হাজী আবদুল করিমের ছেলে রেদোয়ান আহমেদ ও সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার আলীনগর গ্রামের মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে জয়নুল ইসলাম।

বয়লার অক্ষত

টঙ্গীর ট্যাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় দুর্ঘটনায় গঠিত একাধিক তদন্ত কমিটি ছাড়াও বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিশেষজ্ঞদের দাবি- বয়লার বিস্ফোরণে নয়, গ্যাস লাইন লিক হয়ে ট্যাম্পাকো কারখানায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

এ ব্যাপারে শিল্প মন্ত্রণালয়ের বয়লার পরিদর্শক ইঞ্জিনিয়ার শরাফত আলী জানান, ট্যাম্পাকো কারখানায় দু’টি বয়লার রয়েছে। এগুলো ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত নবায়ন করা আছে। অগ্নিকাণ্ডের পরও কারখানার দু’টি বয়লার অক্ষত আছে। তাই বয়লার বিস্ফোরণে নয়, গ্যাস লিকেজ থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে তদন্তের পর এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

কারখানার বয়লার অপারেটর ইনচার্জ ইমাম উদ্দিন বলেন, কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের কোনো আশঙ্কাই নেই। আমরা বয়লার রুমে গিয়ে দেখেছি বয়লার দু’টি এখনো অক্ষত আছে। তবে গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে কারখানায় গ্যাস লাইনে লিকেজ সৃষ্টি হয়েছিল। সে কারণে হয়তো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টাম্পাকো কারখানায় মোট চারটি বয়লার ছিল। তবে প্রতিষ্ঠানটির এ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দাবি করছেন- দু’টি ও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ওই কারখানায় দুটি বয়লারের অনুমোদন রয়েছে।

এ দিকে কারখানায় সরকারিভাবে গ্যাস ব্যবহারের অনুমোদন ছিল ১০ পিএসআই। কারখানার বয়লার এবং জেনারেটর গ্যাসের সাহায্যে চলত। এ দুর্ঘটনার পর থেকে কারখানার আশপাশ এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে তিতাস কর্তৃপক্ষ।

কারখানা কর্তৃপক্ষের কেউ এখনো আসেননি

ট্যাম্পাকো কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর এখনো ঘটনাস্থলে আসেননি কোম্পাটির এমডি বা চেয়ারম্যান কিংবা কর্তৃপক্ষের কেউ। অগ্নিকাণ্ডের পরপরই গা ঢাকা দিয়েছেন কারখানার কর্মকর্তারা। তাদের কাউকে না পাওয়ায় ঘটনার সময় কারখানাটিতে কত শ্রমিক কাজ করছিলেন তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। কোম্পানির চেয়ারম্যান সিলেটে-৬ (গোলাপগঞ্জ) আসনের সাবেক দুই বারের স্বতন্ত্র এমপি সৈয়দ মকবুল হোসেন লিচু। ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের জন্য মালিকপক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতার কথাও জানা যায়নি।

প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার সৈয়দ মকবুল হোসেন কিংবা মালিকপক্ষের কেউ ঘটনাস্থলে না আসায় ক্ষুব্ধ প্রশাসন। তার সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগও করতে পারছেন না কেউ। তিনি এখন কোথায় আছেন এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিচ্ছেন না তার ঘনিষ্ঠজনরাও।

শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, মালিকপক্ষের এ ধরনের আচরণ দায়িত্বহীনতার পরিচায়ক।

এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, মালিকপক্ষের কোনো ধরনের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেখা মেলেনি মালিকপক্ষের কারো। গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাহেনুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর কারখানার মালিক বা ম্যানেজারদের কাউকে পাননি তারা।

মকবুল হোসেনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সিলেটের স্থানীয় আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন দিলু জানান, মকবুল এখন কোথায় আছেন, তার সাথে কিভাবে যোগাযোগ করা যাবে- এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছেন না তিনি।

দেশের প্যাকেজিং শিল্পের প্রথম কারখানা টিএফএল

দেশের প্যাকেজিং শিল্পের প্রথম কারখানা ট্যাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড (টিএফএল)। টাম্পাকো ১৯৭৮ সালে যাত্রা শুরু করে। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেড এবং সুইজারল্যান্ডের নেসলে বাংলাদেশ লিমিটেড কারখানা পণ্যের মোড়ক সরবরাহ করে ট্যাম্পাকো। এ ছাড়া আবুল খায়ের গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, প্রাণ গ্রুপ, ইস্পাহানী, কোকোলা ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড, বিডি ফুডস লিমিটেড, অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড, মেরিডিয়ান ফুডস লিমিটেড, ফু-ওয়াং ফুডস লিমিটেড, ইউনিভার্সাল ফুডস লিমিটেড, আবদুল মোনেম লিমিটেড, বাংলা-জার্মান লেটেক্স কোং লিমিটেড, শাহ ডেইরি ফুডস লিমিটেড, মোল্লা সল্ট (ট্রিপল রিফাইন্ড) ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ভিটালাক ডেইরি অ্যান্ড ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, প্রিন্স ফুডস লিমিটেড, হক বিস্কিট অ্যান্ড ব্রেড ফ্যাক্টরি লিমিটেড, জনতা বিস্কিট অ্যান্ড ব্রেড ফ্যাক্টরি লিমিটেড, এ.টি.এন ফুড অ্যান্ড কনজ্যুমার প্রোডাক্টস লিমিটেড, প্রোম কনজিউমার্স প্রোডাক্টস প্রাইভেট লিমিটেড, আল-কাদ ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, নুট্রিয়ন ফুডস লিমিটেড, নূর ফুডস লিমিটেড, গ্লোব বিস্কিট অ্যান্ড ডেইরি মিল্ক লিমিটেড, নাবিস্কো বিস্কিট অ্যান্ড ব্রেড ফ্যাক্টরি লিমিটেড, সিদ্দিক ফুড অ্যান্ড অ্যাগরুবেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, আফতাব ফুডস লিমিটেড, দ্যা লালমাই লিমিটেড, আল-আমিন সুইটস, ক্রেকাস লিমিটেডের কার্যাদেশ সরবরাহ করে টিএফএল।

এই তালিকা দৈনন্দিন বাড়ছে বলে কোম্পানিটি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। টিএফএল বিশ্বমানের সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে খাদ্য ও পানীয়জাত পণ্যের ফ্লেক্সিবল মোড়ক প্রস্তুত করে থাকে। এ ছাড়া টিএফএল দেশে তামাকজাত পণ্যের (বেনসন, গোল্ডলিফ সিগারেটসহ) একমাত্র মোড়ক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া টাম্পাকোতে সব ধরনের পেপার ব্যাকড অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল, কর্ক টিপিং পেপার, প্লাগ রেপ (মাড়ানো) পেপার, প্রি-প্রিন্টেড টিপিং পেপার, ইনার ফ্রেম বোর্ড ইত্যাদি সব ধরনের পেপার তৈরি করা হয়। এ ছাড়া এখানে সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সব ধরনের ফ্লেক্সিবল প্যাকেজিং কাজ করা হয়। দেশের গর্বিত এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি নিমেষে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়াকে সহজে কেউ মেনে নিতে পারছেন না। দুর্ঘটনায় টিএফএলের শ্রমিক-কর্মচারী ও তাদের পরিবার পরিজনের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।

সরকারি অনুদান

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে নিহতদের প্রত্যেককে ১০ হাজার ও আহতদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত আহতদের মধ্যে ১৪ জনকে এবং নিহত এক জনকে (রিপন দাসের পরিবারকে) এ অনুদানের টাকা সরবরাহ করা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট