হবিগঞ্জে ভুতুরে কল নিয়ে তোলপাড় : সব ‘কিরণমালা’ সিরিয়ালের রাক্ষুসি রাণী ‘কটকটি’র কাজ!

প্রকাশিত: ৭:৩৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৬

Manual5 Ad Code

আজিজুল ইসলাম সজিব, হবিগঞ॥ মোবাইলে আসা কল রিসিভ করলেই অজ্ঞান হয়ে মানুষ। এটি কোন ভৌতিক গল্পের অংশ নয়। ভুতুরে এ কল রিসিভ করে অজ্ঞান হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন হবিগঞ্জের বেশ কয়েকটি উপজেলার প্রায় কয়েক ডজন মানুষ। শুধু গ্রামের মানুষই নয়, আতংক ছড়িয়েছে শহরের অলি-গলিতেও। বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের দোলাচলে সবাই। শুধু হবিগঞ্জেই নয় অনলাইনে অবাধ প্রবাহের কারনে গুজবের ডালাপালা ছড়িয়েছে সারাদেশসহ বিদেশে থাকা প্রবাসীদের মাঝেও। ভুতুরে এ কল রিসিভ করে ইতোপুর্বে যারা আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে দুই একজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলেও আতংক কাটেনি। ফলে নুতন করে অসুস্থ হচ্ছেন মানুষ। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বানিয়াচং উপজেলার মক্রমপুর ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের বাসিন্দা আলফু মিয়ার কন্যা সুকনা খাতুন (১৬) এক কিশোরীকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় এ প্রতিবেদককে তার মা সাহেনা খাতুন জানান, রাত ৮টায় তার কন্যা মোবাইল ০১৭০৪-২২৩৪০৬ নম্বরে ফোন আসে। ওই কিশোরী ফোন রিসিভ করার সাথে সাথেই জ্ঞান হারায়। অসুস্থ অবস্থায় ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে এ প্রতিবেদক দেখতে পান ঘটনার ৫ ঘন্টা পরও জ্ঞান ফেরেনি। তবে সংশ্লিষ্ঠ চিকিৎসক মিঠুন রায় বলেন, এটি নিছক গুজব। হয়তো ওই কিশোরীর মনে কোন আতংক কাজ করছিল, তাই জ্ঞান হারিয়েছে। তার শারিরীক অবস্থা ঠিক আছে। স্যালাইনসহ চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সুস্থ হয়ে যাবে। এদিকে শুক্রবার বিকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় ওই কিশোরী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। এ ব্যাপারে পুনরায় ডাক্তার মিঠুন রায়ের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শরীর দুর্বল থাকার কারণে সে জ্ঞান হারিয়েছিল। সুত্র জানায়, তিন দিন আগে মোবাইলে ০০০০৪, ০০০০২, ০০০০৮ এই জাতীয় বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন আসার পর রিসিভ করেই কিছু না বলে জ্ঞান হারায় মানুষ। এ বিষয়ে স্থানীয় ও অনলাইন মিডিয়ায় সংবাদ হলে সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে খবরটি ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকেই এর পক্ষে বিপক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরে একে অপরের সাথে বাকযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন। কেউ কেউ এটাকে কাল্পনিক, অবাস্তব, কল্পনাপ্রসুত বলছেন। কেউ কেউ একে দেখছেন বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি ভঙ্গি দিয়ে। আবার কেউ কেউ এ নিয়ে হাসি তামাশা মেতে উঠেছেন। আবু লেইছ নামের একজন তার আইডিতে লিখেন, যতসব পাগলের প্রলাপ। তার মন্তব্যের প্রতিবাদ করে সোহেল রানা পিন্স তার আইডিতে লিখেন, আপনি একজন ফাউল ম্যান, ইব্রাহিম আহমেদ নামের একজন আবু লেইছকে বলেন, পাগল বুঝানির চেয়ে নিরব থাকা ভাল। মোহাম্মদ ফজল নামের এক ফেসবুক ব্যবহারি বলেন ঘটনা সত্য, সাক্ষি দুর্বল। বুঝ বালক নামের এক ফেসবুক ব্যবহারি বলেন, হুম, এটা জিকা ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। সরকারি বৃন্দাবন কলেজ ছাত্র তানজিরুল আলম সোহেল বলেন, হবিগঞ্জের মানুষতো কিরণ মালার ভক্ত, এটা নিঃসন্দেহে কটকটির কাজ। হবিগঞ্জের মানুষ কিরণমালা নিয়ে মারামারি করে হাসপাতালে যেতে পারে সনি আটের ভুতুরে সিরিয়াল দেখে অজ্ঞান হবে না তো কি? সব রূপকথার গল্প? এ ঘটনায় জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের মনে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। কি কারণে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন তার প্রকৃত কারণ খুজে পাচ্ছেন না চিকিৎসকরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোবাইল ফোনের রেডিওফ্রিকোয়েন্সির ফলে ব্রেন টিউমার থেকে ক্যানসারও হতে পারে। এমনকি এর ক্ষতিকর রশ্মি পাকাপাকিভাবে হার্টের সমস্যা তৈরি করে। তারা বলেন, এ সব ঘটনা বাস্তব নয় গুজব। তবে এসব গুজব নিয়ে আতংকিত না হওয়ার জন্য তারা আহবান জানান।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code