ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপিকে সাধুবাদ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ১১:৫০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১১, ২০১৮

ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপিকে সাধুবাদ প্রধানমন্ত্রীর

নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে স্বাগত জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রবিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় সংসদীয় বোর্ডের সভায় বক্তব্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানান শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করাই সরকারের লক্ষ্য। জনগণ যাদের ভোট দেবে তারাই বিজয়ী হবে। আমরা সকলে মিলে নির্বাচন করবো। সবাই যেহেতু নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেজন্য সবাইকে ধন্যবাদ ও স্বাগত জানাচ্ছি।’

সংলাপের ফলাফল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনটা কীভাবে করবো এবং নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় সে বিষয়েই আলোচনা হয়েছে। অনেকে অনেক দাবি-দাওয়া করেছিল। বেশ কিছু আমরা মেনে নিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনটা যেন সকলের জন্য অংশগ্রহণমূলক হতে পারে, সবাই যেন নির্বাচন করার সুযোগ পায় সেদিকে আমরা দৃষ্টি রাখব, সে কথা আমরা দিয়েছি।’

যে দলই ক্ষমতায় থাকুক দেশের চলমান উন্নয়নের ধারা যেন ব্যাহত না হয়- এ কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানত্রেী বলেন, ‘আমরা সব সময় এটাই চাই যে, আমরা যে উন্নয়নটা করেছি তার ধারা যেন অব্যাহত থাকে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই গতিটা যেন কোনোমতেই থেমে না যায়।’

১৪ দলীয় জোটের মনোনয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৩০০ আসনেই নিজেদের প্রার্থী থাকলেও জোট শরিকদের জন্য কিছু আসন ছেড়ে দেয়া হবে।’

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে উপযুক্ত প্রার্থী বাছাই করেই তার দল মনোনয়ন দেবে বলেও জানান শেখ হাসিনা।

সভা শেষে ব্রিফিংয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ চায় না, তারপরও নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ পেছালে আপত্তি নেই তাদের। আর এখনো সিদ্ধান্ত না হলেও যুক্তফ্রন্ট মহাজোটের সঙ্গে নির্বাচনে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলেও জানান কাদের।

সভার সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুলে ধরেন গত কয়েকদিন ধরে চলা বিভিন্ন জোট ও দলের সঙ্গে অংশ নেওয়া সংলাপের তথ্য। বলেন, সংলাপে ৭০ টি দলের ২৩৪ জন প্রতিনিধির সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা ৫ মিনিট আলোচনা করেছেন তার নেতৃত্বাধীন জোটের নেতারা। ফলাফলে সবার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান সরকারপ্রধান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যারা দাবি করেছে, আমরা সাত দফার বেশ কিছু মেনে নেই। তা ছাড়া ইলেকশনটায় যাতে সকলেই অংশগ্রহণ করতে পারে, সবাই যেন নির্বাচন করার সুযোগ পায়, সেদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখব। সেই ওয়াদা আমরা দিয়েছি। এবং আমরাও চাই, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হোক। গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসুক। এবং সকল দল মিলে আমরা একসাথে নির্বাচন করব। জনগণ যাকে চাইবে, তাকে ভোট দিবে। আশা করি, আমাদের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত গতিতে চলবে। সবাই যেহেতু নির্বাচন করবে, কাজেই আমরা সবাইকে সেজন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং স্বাগত জানাচ্ছি।’

সভা শেষে ব্রিফিংয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সভায় আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার সময় কাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। আর দলীয় মনোনয়ন যারা চেয়েছেন তাদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হবে ১৪ নভেম্বর বেলা ১১টায় ধানমণ্ডিতে দলের সভাপতির কার্যালয়ে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যদি সময়সূচি বাড়াতে চায়, সেখানে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। যুক্তফ্রন্টও আমাদের সাথে…আমাদের সাথে মানে আমাদের সাথে একটা অ্যালায়েন্স তাদেরও হতে পারে। ঐক্যফ্রন্টের সাথে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। তাদেরকে ফ্রন্ট হিসেবে বা বিএনপিকে দল হিসেবে দুর্বল ভাবার তো কোনো কারণ নেই। ইলেকশান করব জেতার জন্য এবং ক্যান্ডিডেটও যারা জিতবে, এমন সম্ভাবনা আছে। তাদের নিয়েই আমরা জোটের প্রার্থিতা ঘোষণা করব।’

মহাজোটের সঙ্গে থাকলেও জাতীয় পার্টিসহ দুই-একটি দল নৌকা নয়, নিজেদের দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গণতন্ত্র জোরদার এবং অব্যাহত উন্নয়নের স্বার্থে তার সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ অনুষ্ঠান নিশ্চিত করা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠান করা আমাদের লক্ষ্য। আমি আশা করি অন্যান্য রাজনৈতিক দলও এই নির্বাচনে অংশ নেবে।’

বাংলাদেশ আওয়ামী যুব লীগের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা রবিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি একথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এটাই বাস্তবতা যে নির্বাচনে অংশ না নিলে একটি রাজনৈতিক দলের শক্তি হারায়। আমরা আশা করি অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও নির্বাচনে অংশ নেবে এবং এর মাধ্যমে গণতন্ত্র অধিকতর শক্তিশালী ও দেশের আরো উন্নয়ন হবে।

যুবলীগ সভাপতি আলহাজ ওমর ফারুক চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ বক্তৃতা করেন।

এরআগে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ শাখার নেতৃবৃন্দ ফুলের তোড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।

নির্বাচন দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার অনেক মেগা প্রকল্প নিয়েছে এবং দারিদ্র্য বিমোচনের অঙ্গীকার করেছে। যদি আমরা ক্ষমতায় আসতে না পারি তাহলে কেউ এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে না।

তিনি বলেন, আমরা অনেক মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করে বাংলাদেশে উন্নয়নের ধারা চালু করেছি। আমরা দরিদ্র্যের হার ৪১ শতাংশ থেকে ২১ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। যদি আমরা আবার ক্ষমতায় আসতে পারি তাহলে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্যের হার ৪/৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। তখন আমরা বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত বলতে পারবো।

এদিকে শরিক দলগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক শেষে রবিবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। সোমবার সকাল ১০টা থেকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করবে বিএনপি।

বিএনপি আসন্ন নির্বাচনে নিবন্ধিত ৮টি শরিক দল নিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে ভোটে লড়বে। বিএনপি ছাড়াও অপর ৭টি দল হলো- লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), খেলাফত মজলিস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।

এর আগে গত ৮ নভেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ১৯ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে ২২ নভেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৯ নভেম্বর। আর ভোট হবে ২৩ ডিসেম্বর।

তবে তফসিল পিছিয়ে নির্ধারিত তারিখের একমাস পর নির্বাচন দেয়ার জন্য কমিশনের প্রতি দাবি জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। অন্যদিকে নির্বাচন এক সপ্তাহ পেছানোর দাবি জানিয়ে কমিশনকে চিঠি দিয়েছে বি.চৌধুরীর যুক্তফ্রন্ট। এমতাবস্থায় বিকেলে সিইসি বলছেন, এ ব্যাপারে সোমবার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।