বাহুবলের মিরপুরে চাঁদা দাবি নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে শতাধিক আহত

প্রকাশিত: ১১:১৯ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৬

শতাধিক লোকের বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা

হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার মিরপুরে ‘শামসু মাস্টার গ্রুপ’ ও ‘বেলায়েত গ্রুপ’র লোকজনের মধ্যে রবিবার (০৪ সেপ্টেম্বর) চাঁদা দাবি নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়ক। দুই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে পুলিশসহ শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় ২০ জনকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ও আশঙ্কাজনক অবস্থায় ১ জনকে সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকিরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।

সংঘর্ষের ঘটনায় মিরপুর বাজারের প্রায় ২০টি দোকান ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। এ ঘটনায় প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। সংঘর্ষে পুলিশের মামলা দায়ের।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্র জানায়- বাহুবল উপজেলার নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত ওমেরা সিলিন্ডার্স কোম্পানির ৪ হাজার পিস রিজেক্ট সিলিন্ডার ক্রয় করেন মিরপুরের বেলায়েত মিয়া। তিনি এলাকায় ‘বেলায়েত গ্রুপ’ প্রধান হিসেবে পরিচিত।

গত ২৮ আগস্ট রবিবার সকালে মিরপুর বাজারে বেলায়েত গ্রুপের লোকজন সিলিন্ডার কাটানোর জন্য লেবার ও গাড়ি নিয়ে ওমেরা কোম্পানিতে প্রবেশ করতে চাইলে নতুন বাজার এলাকার শামসু মাস্টার গ্রুপের লোকজন তাদের বাধা দেয়। বাধার মুখে তারা ফিরে আসেন। ওইদিন বিকেলে আবারও ওমেরা কোম্পানিতে প্রবেশের চেষ্টা করলে শামসু মাস্টার গ্রুপ বাধা দিয়ে তাদের কাছে চাঁদা দাবি করলে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বেলায়েত গ্রুপের গাড়ি ভাংচুর ও চালককে পিটিয়ে আহত করে প্রতিপক্ষ।

পরে রাতে মিরপুর সিন্ডিকেটের বেলায়েত মিয়া বাদি হয়ে নতুন বাজার সিন্ডিকেট শামসু মাস্টার, হারুন, তমিজ খাঁন, শাহ আলম, ছুরতসহ ৭ জনকে আসামি করে চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন।

২৯ আগস্ট সোমবার সকালে শামসু মাস্টার, হারুন ও তমিজ খাঁন হবিগঞ্জ যাওয়ার পথে ‘বেলায়েত গ্রুপ’ তাদের আটক করে রাখে। এ খবর নতুন বাজার এলাকায় পৌঁছলে শামসু মাস্টার গ্রুপের লোকজন ওইদিন দুপুরে ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়ক এক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ গত ৭দিন যাবত চেষ্টা করেও এই দুই গ্রুপের বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারেননি।

এর প্রেক্ষিতে ৪ সেপ্টেম্বর রবিবার চারগাঁও ও জয়পুরগ্রামবাসী তাদের বিরোধে জড়িয়ে পড়লে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। উপজেলার মিরপুর বাজারে রাত ৮টা থেকে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ চলে রাত ১১টা পর্যন্ত।

খবর পেয়ে হবিগঞ্জ থেকে এএসপি রাসেলুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ফাঁকা গুলি ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। সংঘর্ষে শতাধিক লোক আহত হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় ২০ জনকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তাদের মধ্যে রয়েছেন- তাহির মিয়া, রুবেল মিয়া, আশিক মিয়া, সোহেল মিয়া, রমিজ আলী, শামীম মিয়া, আব্দুল হালিম, জাহেদ আহমেদ, শাহ আলম, সাজ্জাদ মিয়া, শাহীন মিয়া, কাজল মিয়া, আহাদ মিয়া, শোয়েব মিয়া, হারুন মিয়া, আমিনুর রশিদ, মকসুদ আলী, বিলাল মিয়া।

আশঙ্কাজনক অবস্থায় সুজন মিয়াকে সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
আহত পুলিশ কনস্টেবলকে হবিগঞ্জ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকলে সততা ফ্যাশন, সোনালী ট্রেডার্স, এসপি শপিং সেন্টার, রোমান ভেরাইটিজ স্টোর, ইসলামিয়া বস্ত্র বিতান, মোহাম্মদীয়া বস্ত্র বিতান, ছাদিয়া স্টোর, শাহজাদা স্টোর, রশিদ স্টোর, মোশাহিদসহ বেশ কয়েকটি দোকান ভাংচুর করা হয়। সংঘর্ষের পর উভয়পক্ষের লোকজন তাৎক্ষণিক মিটিংয়ে বসেন।

মিরপুর চৌমুহনী ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক জানান- আমাদের ২০টি দোকান ভাংচুর ও ক্যাশ ভেঙ্গে লুটপাট করা হয়েছে। এতে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ওসির কাছে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য দরখাস্ত করেছিলাম, কিন্তু প্রশাসনের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা তেমন কোন সহযোগিতা পায়নি।

এএসপি হেড কোয়ার্টার সুদীপ্ত রায় জানান- ৩৬৭ রাউন্ড শর্টগান ও ১৮ রাউন্ড গ্যাস ছুঁড়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

বাহুবল মডেল থানার ওসি মোল্লা মনির হোসেন জানান- পুলিশ বাদি হয়ে অ্যাসল্ট মামলা করেছে। এ মামলায় ৪০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত শতাধিককে লোক আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

সর্বমোট পাঠক


বাংলাভাষায় পুর্নাঙ্গ ভ্রমণের ওয়েবসাইট