২১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:২৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২, ২০১৬
সম্প্রতি ভারতের বিহার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিতর্কিত ফারাক্কা বাঁধ সরিয়ে দেয়ার কথা বলেছেন। এই প্রথম একজন ভারতীয় রাজনীতিক এরকম মন্তব্য করলেন।
শুরু থেকেই এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে ছিলেন নদী বিশেষজ্ঞরা। ফারাক্কার প্রভাবে নদীর স্বাভাবিকতা হারিয়ে গঙ্গার উজানে বিহার ও উত্তর প্রদেশ এবং ভাটিতে সুন্দরবন পর্যন্ত পরিবেশ বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশ থেকে ১৮ কিলোমিটার উজানে ভারতে গঙ্গা নদীতে বিতর্কিত ফারাক্কা ব্যারেজ চালুর পর গত চার দশকে যেটি গঙ্গা অববাহিকায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়েছে।
ফারাক্কা বাঁধের কারণে গঙ্গার উজানে বিপুল পরিমাণ পলি জমে প্রতিবছর বন্যা দেখা দিচ্ছে ভারতের বিহারসহ উত্তর প্রদেশের বিস্তীর্ণ এলাকায়। অন্যদিকে গ্রীষ্ম মৌসুমে পানি আটকে রাখার ফলে নদীর স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ক্ষতির শিকার হয়েছে ভাটি অঞ্চলে বাংলাদেশ।
এখন বিহারে প্রতি বছর বন্যার জন্য ফারাক্কা বাঁধকেই দায়ী করা হচ্ছে। বিহারে এবার বন্যাতেই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা অন্তত ২০ লাখ। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ফারাক্কার সমস্যা তুলে ধরে এ সমস্যার একটা স্থায়ী সমাধান চাইছেন বিহারে তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার।
ফারাক্কার কারণে বাংলাদেশে অনেক ক্ষতি হয়েছে বলে সব সময় বলা হয়ে থাকে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর ফারাক্কার প্রায় সবগুলো গেট খুলে দেয়া হয়েছে। এর ফলে গত সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ লাখ কিউসেক পানি ঢুকেছে বাংলাদেশে।
মঙ্গলবার রাজশাহীতে গিয়ে দেখা যায় উজান থেকে আসা পানির প্রচণ্ড স্রোত। শহরে টি বাঁধ হিসেবে পরিচিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক নম্বর গ্রোয়েনে ছোট ভাঙ্গন ধরেছে। যেটি রক্ষা করতে শত শত বালির বস্তা ফেলতে দেখা যায়।
আমজাদ আলী পদ্মার তীরবর্তী খানপুর গ্রামের বহু বছর বসবাস করছেন। ফারাক্কা বাধ দেয়ার পর থেকে শীত আর বর্ষার পদ্মার পানির বিপরীত চিত্র দেখে আসছেন ষাটোর্ধ আমজাদ আলী। তিনি বলেন,
‘মনে করেন যখন পানির দরকার ফারাক্কায় তখন পানি দেয় না আর এখন ফারাক্কা ছেড়ে টেড়ে দিয়ে আরো কষ্ট দিচ্ছে।’
বর্ষাকালে বন্যা আর ভাঙনে মোটামুটি অভ্যস্ত পদ্মাপাড়ে আমজাদ আলীর মতো এ জনপদের সবাই।
‘শীতের কালে যখন গম বুনবো শ্যালো দিয়ে পানি দিব শ্যালোতে দেখা যায় পানি পাইছে না। তখন টিউবঅয়েলে পানি পাওয়া যায় না, এরকম হয়ে যায়। নদীর পানি নিচে চইলে যায়। আবার এখন দেখা যাইছে যে হটাত পানি এসে সব ডুবিয়ে দিল।’
পদ্মার আরো ভাটিতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বাংলাদেশে গঙ্গার পানি পরিমাপ করা হয়। এ এলাকায় পদ্মা নদীতে ৫০ বছরেরও বেশি সময় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন জয়রাম। ফারাক্কা বাধের আগে ও পরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জয়রাম বলেন, ‘৪০-৫০ বছর আগে যখন নদীতে পানি ছিল তখন রেগুলার মাছ পাতাম। এখন ১০ কেজি ১৫ কেজি মাছ ধরতে তামাম দিন খাটতে হচ্ছে।’
জয়রাম জানান, পদ্মায় গরমকালে পানি এতটাই শুকিয়ে যায় যে তাদের জীবিকা চালানোই কঠিন হয়ে পড়ে। বছরে দুইমাস কোনো মাছই ধরা পড়েনা বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী এ মৌসুমে সর্বোচ্চ পানি এসেছে ২০ লক্ষ কিউসেক। আর গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির সর্বনিম্ন প্রবাহ ছিল ১৫,৩০০ কিউসেক।
বাংলাদেশ নদীগবেষণা ইনস্টিটিউট ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী ম ইনামুল হক বলেন, ফারাক্কা বাধ দেয়ার আগে শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ ছিল ৬০ থেকে ৮০ হাজার হাজার কিউসেক।
‘ফারাক্কা ওদের যে ডাইভারশন ক্যানেল, ব্যারেজের মাধ্যমে তারা ৪০ হাজার কিউসেক পানি সরিয়ে নিতে পারে। তো সেটি সরিয়ে নেয়ার পরে যেটি থাকে সেটি পায় বাংলাদেশ।’
গঙ্গা চুক্তিতে অন্তত ২৭ হাজার কিউসেক পানি পাওয়ার কথা রয়েছে। তবে চুক্তির আগে অনেক সময় ১০ হাজার কিউসেকেরও কম পানি এসেছে বলে জানান মিস্টার হক।
তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে ইলিশ মাছ এবং চিংড়ি মাছের বিরাট ক্ষতি হয়েছে, তাদের প্রজণনে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে সংখ্যা কমে গেছে এছাড়া অন্যান্য মাছেরও ক্ষতি হচ্ছে। আর উপকূল এলাকায় মানুষ একটা মিষ্টি পানির ওপর নির্ভরশীল যাদের জীবন, সেটা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
বিহার মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের প্রস্তাবের প্রেক্ষাপটে ফারাক্কা ইস্যুতে নতুন আলোচনা হতে পারে বলেও মনে করেন হক। ‘নীতিশ কুমার বলছেন এটা তুলে দিতে। তুলে দেয়া যাবে না। কারণ সেটা একটা স্ট্রাকচার যার ওপর রেল আছে, রোড আছে। আমরা একটা বলতে পারি যে, আমরা নদীর যে স্বাভাবিক প্রবাহ সেটাকে বাধা দেয়ার বিরোধী। এবং ১৯৯৭ সালের জাতিসংঘ কনভেনশন এটা বাধা দেয়ার বিরোধী। অতএব এই গেটগুলো তুলে দাও, গেট গুলো খুলে দাও।’
সূত্র : বিবিসি
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
OFFICE : SHUVECHCHA-191
MIAH FAZIL CHIST R/A
AMBAKHANA WEST
SYLHET-3100
(Beside Miah Fazil Chist Jame Masjid & opposite to Rainbow Guest House).
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D